গত বছর দীপাবলিতে বিধিনিষেধ ছিল প্রায় সব কিছুতে। বাজি পোড়ানোর উপরও অনেক রাজ্যই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ফলে একদম সাধারণ ভাবে মনে ভয় নিয়েই বেশিরভাগ মানুষ দীপাবলি পালন করেছিল। কিন্তু এবছর যেহেতু সেই ভয় সামান্য হলেও কম তাই দীপাবলি উদযাপনে কোনও খামতি রাখছে না কেউই। তবে, আলোর উৎসব উদযাপনে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হয়, বিশেষ করে বাজি পোড়ানোর ( শুধুমাত্র সবুজ বাজি বা পরিবেশ বান্ধব বাজি পোড়ানোতে সায় সুপ্রিম কোর্টের ) ক্ষেত্রে আমাদের চোখ, যা খুবই সেনসিটিভ বডি পার্ট, তার নজর রাখতে হয়। কী ভাবে রাখবেন, কী কী করতে পারেন চোখের যত্ন নিতে এই উৎসবের দিনগুলিতে, লিখছেন ম্যাক্সিভিশন (MaxiVision) আই হাসপাতালের কনসালটেন্ট অপথামোলজিস্ট ড. সত্যপ্রসাদ বাল্কি (Dr . Satya Prasad Balki), M.S F.C.A.S (AEH)।
advertisement
আরও পড়ুন- পঞ্জিকা ২ নভেম্বর; দেখে নিন নক্ষত্রযোগ, শুভ মুহূর্ত, রাহুকাল এবং দিনের অন্য লগ্ন
দীপাবলি সম্ভবত আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় উৎসব, যা গত বছর একাধিক সমস্যার মধ্যে পালিত হয়েছে, কিন্তু আমি নিশ্চিত এবছর কোনও খামতি রাখছেন না কেউই এই উৎসবে গা ভাসাতে। আলোর উৎসব এবং তার পরবর্তী কিছু সময় চোখের ডাক্তারদের জন্য খুবই ব্যস্ততার। চারদিকে আলো, বাজি, বিভিন্ন ধরনের পটকা একটা অন্য আমেজই তৈরি করে দেয়। আমি মনে করি এই উৎসব উদযাপন দরকার কিন্তু আমি এরই সঙ্গে পাঠকদের এর খারাপ দিকগুলো নিয়ে সচেতন করতে চাইব।
এই সময়ে বাজি পোড়াতে গিয়ে বা প্রদীপ জ্বালাতে গিয়ে অনেকের সঙ্গেই দুর্ঘটনা ঘটে। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রচুর কেস থাকে। পুড়ে যাওয়ার ছোট কেসও অনেক সময় বড় আকার ধারণ করে। যা হয় তো শুরুতে ভাবারও বাইরে থাকে। তাই একজন চোখের ডাক্তার হিসেবে আমি চোখের যত্ন নেওয়ার কথা বলব এবং চোখকে কী ভাবে সুরক্ষিত রাখা যায় সেই দিকে খেয়াল রাখতে বলব।
কিছু দুর্ঘটনা ঘটবে বা চোখে আঘাত লাগতে পারে এমন বুঝলেই আমাদের চোখ বুজে যায়। এটা স্বাভাবিক ধর্ম আমাদের চোখের। কিন্তু যদি চোখের গঠনগত দিক থেকে দেখা যায় তা হলে একদম উপরে চোখের যে অংশ থাকে তাকে বলে কর্নিয়া, যা ট্রান্সপারেন্ট হয়। এই কর্নিয়া আমাদের চোখে বিভিন্ন আলোর রশ্মি আসতে দেয় এবং আমাদের দেখতে সাহায্য করে। চোখের এই অংশে কোনও রকম সমস্যা হলে, আঘাত লাগলে তা সারা জীবনের মতো ক্ষতি করে দেয় এবং দাগ হয়ে যায় যার প্রভাব আমাদের দৃষ্টিশক্তির উপর পড়ে। চোখের সামনে বাজি পুড়লে, চোখে ফুলকি পড়লে বা খুব বেশির আলোক ঝলকানিতে এই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
শুধু এই নয়, প্রদীপ জ্বালাতে গিয়েও অনেক সময় গরম তেল হাতে পড়ে যায়। উঁচু কোনও জায়গায় প্রদীপ রাখতে গিয়ে তা মুখে-চোখেও পড়তে পারে। এতে ক্ষতি হতে পারে। এই দিন যেহেতু অতিথিরা বাড়িতে আসে তাই রান্নাবান্নাও চলে দেদার, রান্নার গরম তেলও ছিটকে চোখে আসতে পারে, তাতেও কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া ইলেকট্রিক্যাল বার্ন তো রয়েছেই। ছোটখাটো ভাবে আগুনে শরীরের কোনও অংশ পুড়লে তা তেমন সমস্যার হয় না কিন্তু যদি কোনও বাজি ব্লাস্ট করে, এবং বড় রকমের পোড়ার ব্যাপার থাকে, তা হলে সেক্ষেত্রে সার্জারিও করতে হতে পারে।
এমন হলে প্রথমেই ফার্স্ট এইড করতে হবে, কী ভাবে করবেন? রইল টিপস-
খুব অল্প গরম তেল চোখে পড়লে বা এমন কিছু হলে প্রথমেই পানীয় জল খুব বেশি পরিমাণে চোখে দিতে হবে। জলের ঝাপটা দিতে হবে। পাশাপাশি চোখের পাতা বার বার ফেলতে হবে।
ফরেন বডি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে যাতে তা দ্রুত সরিয়ে ফেলা যায় এবং পরামর্শ মতো ওষুধ খেতে হবে।
যদি রক্তক্ষরণের বিষয় থাকে, তা হলে প্রথমে জলের ঝাপটা দিয়ে এবং তোয়ালে বা কটন প্যাড দিয়ে চোখ ঢেকে নিতে হবে। কোনও রকম চাপ চোখের উপর যাতে বা পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কী কী নিয়ম মেনে উৎসব উদযাপন করতে হবে-
১. বাজি পোড়ানোর সময় বা চোখে ক্ষতি হতে পারে এমন কোনও কাজের আগে আই প্রোটেক্টর কিছু পরে নিতে হবে। নির্দিষ্ট দূরত্ব মানতে হবে বাজি পোড়ানোর ক্ষেত্রে এবং রান্নার সময় যে জিনিসটা থেকে তেল ছিটকে আসতে পারে, তাতে ঢাকা দিয়ে রান্না করতে হবে। এতে চোখে বা শরীরের যে কোনও অংশে তেল ছিটকে পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমবে।
২. বাজি পোড়ানোর পূর্বে ফেস শিল্ড পরে নেওয়া যেতে পারে, এতে চোখে আগুনের ফুলকি লাগবে না। বর্তমানে কোভিডের বাজারে প্রায় সব বাড়িতেই এই বস্তুটি রয়েছে, অনেকেই এর সঙ্গে পরিচিত।
৩. জ্বলন্ত বাজি আকাশের ছুঁড়ে দেওয়া বা হাতে ধরে পোড়ানোর অভ্যাস অনেকেরই থাকে। মজার ছলেও অনেকে এমন করে থাকে, তাতে হাতেই বাজি ফেটে যেতে পারে বা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বাজি এভাবে না পোড়ানোই ভালো।
৪. প্রত্যেক বাড়ির বাচ্চারাই বাজি পোড়ায়। বাড়িতে বাচ্চারা বাজি পোড়ালে তার দিকে নজর রাখতে হবে অভিভাবকদের। তাদের বোঝাতে হবে বাজি কী ভাবে পোড়ালে দুর্ঘটনা হবে না।
৫. বাজি পোড়ানোর আগে হাতের সামনে সব সময় এক বালতি জল রাখতে হবে। যাতে কোনও বিপদ হলে, আগুন লাগলে প্রাথমিক ভাবে তা নেভানো যায়।
৬. অনেকেই রাস্তায় বাজি পোড়ায়, যার থেকে ফুলকি বা জ্বলন্ত কিছু মাথায় এসে পড়তে পারে। তাই হেলমেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭. কিছু ঘটলে নিজে থেকে ওষুধ না খেয়ে বা লাগিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ চোখ খুবই সেনসিভিট বডি পার্ট। ভুল ওষুধের ফলে অনেক ক্ষতি হতে পারে।
দীপাবলি উদযাপনের পূর্বে এই বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে। বাড়ির বয়স্ক এবং বাচ্চাদের দিকে বাড়তি নজর দিতে হবে। প্রদীপ জ্বালাতে তা থেকে যাতে ঘরের ভিতরে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে সেই দিকেও নজর দিতে হবে।