যদিও এটা পুরোপুরি ভাবে নিরাময় করা যায়। তবে শেষ পর্যায়ে রোগ ধরা পড়া এবং গুণমানসম্পন্ন পরিষেবা না পাওয়া-এই সবের উপর নির্ভর করে সার্ভিক্যাল ক্যানসারের অসুস্থতা এবং মৃত্যুর হার। সাধারণত ৩৫ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলারাই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। কারকিনোস হেলথকেয়ার প্রাইভেট লিমিটেডের কনসালট্যান্ট মেডিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট ডা. শ্রেয়া মল্লিক এমনটাই জানাচ্ছেন।
advertisement
এদিকে জানুয়ারি হল সার্ভিক্যাল ক্যানসার সচেতনতার মাস। আর এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা থাকা জরুরি। আর মানুষের মধ্যে সার্ভিক্যাল ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দিচ্ছেন ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি এই রোগের বিষয়ে বিশদে জানিয়েছেন।
সার্ভিক্যাল ক্যানসার কী?
জরায়ুর নীচের দিকের অংশ বা সার্ভিক্স থেকেই এই ক্যানসার শুরু হয়। হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি)-এর উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্ট্রেনের বারবার সংক্রমণ হওয়ার কারণে প্রাথমিক ভাবে এই রোগ হয়। ক্রনিক এইচপিভি সংক্রমণের কারণে সেলুলার অ্যাবনর্ম্যালিটি (ডিসপ্ল্যাসিয়া) হতে পারে। এরপরে কয়েক বছর ধরে তা প্রি-ইনভেসিভ এবং ইনভেসিভ ক্যানসারে পরিণত হয়।
আরও পড়ুন: ‘এই’ পাতাই ডায়াবেটিসের যম! বাড়বে হজম শক্তি, পালাবে দাঁতের সমস্যা
সার্ভিক্যাল ক্যানসারের রিস্ক ফ্যাক্টরগুলি কী কী?
১. হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (সমস্ত বা ৯৯ শতাংশ সার্ভিক্যাল ক্যানসারের সঙ্গে এইচপিভি সংক্রমণের যোগ রয়েছে, এইচপিভি ১৬, ১৮)।
২. যৌনাঙ্গের হাইজিন সঠিক ভাবে মেন্টেন না করা।
৩. একাধিক যৌন সঙ্গী।
৪. অত্যন্ত কম বয়সেই যৌনক্রিয়া।
৫. একাধিক প্রেগন্যান্সি কিংবা গর্ভপাত।
৬. ইমিউনো-কম্প্রোমাইজড রোগী। (আগে থেকেই এইচআইভি সংক্রমণ)
সার্ভিক্যাল ক্যানসারের সাধারণ উপসর্গ কী কী?
১. যৌনমিলনের পরে, পিরিয়ডসের মাঝে অথবা মেনোপজের পরে ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং।
২. প্রচণ্ড মেনস্ট্রুয়াল ব্লিডিং, যা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়।
৩. জলীয় কিংবা রক্ত-সহ ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ। যা দুর্গন্ধযুক্ত এবং প্রচণ্ড পরিমাণে হয়।
৪. যৌন মিলনের সময় ব্যথা অথবা পেলভিক ব্যথা।
৫. লো-ব্যাক পেন।
৬. দুর্বলতা এবং ওজন হ্রাস।
সার্ভিক্যাল ক্যানসার প্রতিরোধ এবং দ্রুত রোগ নির্ণয়ের কৌশল কী?
এটা নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায় হল রোগ বৃদ্ধিকে রুখে দেওয়া। এইচপিভি ভ্যাকসিন এবং স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে এটা করা হয়ে থাকে।
স্ক্রিনিং:
প্রাথমিক পর্যায়ে এমনকী প্রি-ক্যান্সারাস পর্যায়ে সার্ভিক্যাল ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব। আসলে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে উপসর্গ প্রকাশের আগেই ক্যানসার ধরা পড়ে যায়।
১. প্রজননের বয়সে প্যাপ স্মিয়ার বা এইচপিভি ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে রুটিন স্ক্রিনিং সহায়ক হতে পারে।
২. এইচপিভি সংক্রমণ অথবা প্রি-ইনভেসিভ সার্ভিক্যাল ক্যানসার নির্ণয়ের স্ক্রিনিংয়ের সুবিধা ২৫-৬৫ বছর বয়সী মহিলারা পেয়ে থাকেন।
৩. এইচপিভি টাইপ ১৬ অথবা ১৮ সংক্রমণের পুরোপুরি অটোমেটেড স্ক্রিনিং চিকিৎসার নতুন মানদণ্ড।
৪. স্ক্রিনিং পজিটিভ এলে কোনও স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রে কোলপোস্কোপি করা হয়। এর মাধ্যমে সার্ভিক্সের অসুস্থ অংশগুলিকে দেখা হয় এবং তার বায়োপ্সি করা হয়।
এইচপিভি ভ্যাকসিনেশন:
সার্ভিক্সের ক্যানসারের জন্য দায়ী এইচপিভি প্রতিরোধ করার জন্য অত্যন্ত কার্যকর এইচপিভি ভ্যাকসিন।
১. ছেলে এবং মেয়ে উভয়কেই দেওয়া হয় এইচপিভি ভ্যাকসিন।
২. মূলত ৯ বছর থেকে ২৬ বছর বয়সীদেরই দেওয়া হয় এটা।
৩. শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হওয়ার আগেই এই ভ্যাকসিন নেওয়া উপযুক্ত।
৪. তবে ২৭-৪৫ বছর বয়সী মহিলারা এই ভ্যাকসিন নিতে পারেন, কিন্তু ২৬ বছর পার হলেই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমতে থাকে।
৫. ভ্যাকসিনের ধরন – Cervarix (বাইভ্যালেন্ট), Gardasil (কোয়াড্রিভ্যালেন্ট), Gardasil9 (ননঅ্যাভালেন্ট)
সার্ভিক্যাল ক্যানসারের চিকিৎসার উপায়:
রোগের পর্যায় অনুযায়ী এর চিকিৎসা করা হয়। অর্থাৎ রোগের ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে এক-এক রকম চিকিৎসা হবে।
১. প্রি-ইনভেসিভ পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে লেজার, থার্মাল অ্যাব্লেশন এবং ক্রায়োথেরাপির মতো লোকাল ট্রিটমেন্ট হয়। তবে এক্ষেত্রে অবশ্য জরায়ু বাদ যায় না।
২. ইনভেসিভ রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ইউটেরাস সার্জারির মাধ্যমে বাদ দেওয়া (হিস্টেরেক্টোমি)-ও একটা বিকল্প।
৩. তবে রোগ ছড়িয়ে পড়লে রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপিই চিকিৎসার উপায়।
৪. রোগের অগ্রগতি ঘটলে নিরাময়ের হার কমতে শুরু করে।
