গত ২৫ শে নভেম্বর বিধানসভায় সংবিধান দিবসের স্মরণ অনুষ্ঠানে প্রথমার্ধের অধিবেশনের পর আচমকাই বিরোধী দলনেতাকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও প্রণাম করেন শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতার সঙ্গে সাক্ষাৎকে সরকারের তরফে সৌজন্য সাক্ষাৎ হিসাবে তুলে ধরা হলেও, বিজেপি ও রাজ্যের বিরোধী রাজনীতিতে তা নিয়ে রীতিমত ঢিঢি পড়ে যায়।
advertisement
অস্বস্তিতে পড়ে যায় বিজেপি। ঘটনার রেশ কাটলে, প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে বিষয়টিকে হাল্কা করার চেষ্টা করেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন শুভেন্দু নিজেও। ঘটনার ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই দলীয় সভায় মমতাকে 'প্রাক্তন'করে দেবার হুঁশিয়ারীও দেন শুভেন্দু। কিন্তু, তাতে শুভেন্দু - মমতা সৌজন্যের রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা থেমে যায়নি৷ ঠিক এই সময়েই তড়িঘড়ি এই ছবি ও তথ্যে সমৃদ্ধ সাকুল্যে ৬ পৃষ্টার পুস্তিকা প্রকাশ। যে পুস্তিকার মূল কথাই হল, বিরোধী দলনেতাকেও মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে কসুর করেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
রাজনৈতিক মহলের মতে, প্রচার মাধ্যম ও রাজনৈতিক মহলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তার স্বাক্ষাতের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে, ঘটনাটি যে নিছকই বিধানসভার সংসদীয় রাজনীতির পরিসরে দেখানো সৌজন্য, সেটা প্রমাণ করতেই উঠে পড়ে লেগেছেন শুভেন্দু।
পর্যবেক্ষকদের মতে, মমতার সৌজন্য রাজনীতিতে কোনও মতে সাড়া দিতে হলেও, বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না নন্দীগ্রামের বিধায়ককে। তাই ২৪ ঘণ্টা পেরতে না পেরতেই ঘনিষ্ট মহলে শুভেন্দু বলতে শুরু করেন, বিধানসভার সাক্ষাৎ আর সৌজন্য বিধানসভাতেই শেষ। বিধানসভার বাইরে মুখ্যমন্ত্রী ও তার দলের বিরুদ্ধে কোনও আপোষের প্রশ্নই নেই। সে কারনেই তড়িঘড়ি এই পুস্তিকা প্রকাশ।
সাকুল্যে ৬ পাতার এই পুস্তিকায় শুভেন্দু দাবি করেছেন, রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি সরকারের অগণতান্ত্রিক কাজের বিরুদ্ধে আইনী লড়াই জারি থাকবে। খুব শিগগিরই মুখ্যমন্ত্রী ও তার আধিকারিকদের জনগনের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলেও হুঁশিয়ারী দিয়েছেন শুভেন্দু।
বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দিতে এই পুস্তিকা প্রকাশ করে শুভেন্দু জানিয়েছেন, তিনি এই পুস্তিকা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে সব বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের বিরোধী দলনেতাদের কাছে পাঠাবেন। উদ্দেশ্য একটাই, মুখ্যমন্ত্রীর স্বরুপ উন্মোচন করা। যিনি বিধানসভায় সৌজন্য দেখিয়ে বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়কদের নিজের ঘরে ডাকেন চা খেতে, অথচ, এলাকায় সরকারি বৈঠকে ডাক পান না বিরোধী বিধায়ক আর মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই দেন না বিরোধী দলনেতাকে। দেশবাসীর কাছে সেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে চেনানোই এই পুস্তিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য।
যদিও, বিরোধী দলনেতার এই বইকে 'মিথ্যা মামলার' অভিযোগ বলেই কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের মুখপাত্র কূনাল ঘোষ বলেন, সাহস থাকে তার বিরুদ্ধে সিবিআই এর এফ আই আর দিয়ে বই লেখা শুরু করুন শুভেন্দু। সারদা, নারদা মামলায় শুভেন্দুর ভূমিকা সম্বলিত পুস্তিকা প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে পাঠানোর পাল্টা হুঁশিয়ারী দিয়ে রেখেছেন কূণাল।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, এই স্বরুপ উন্মোচনের জন্য এতদিন অপেক্ষা করতে হল কেন বিরোধী দলনেতাকে? আগামী ৫ ডিসেম্বর দিল্লি যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকের সম্ভবনাও আছে। তার আগে, নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতেই কি বিরোধী দলনেতা এই সময়কে বেছে নিলেন? উত্তর দেবে সময়।