সরকারি তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে ৫ মাসে ১৩ বার বন্ধ করা হয়েছে বাংলা-সিকিম লাইফলাইন। সম্প্রতি সিকিমে অতিবৃষ্টির জেরেও অনেক জায়গায় ধস নামে। সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয় ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। শিলিগুড়ি থেকে সিকিমের মধ্যে ১৭৪ কিলোমিটার পাহাড়ি রাস্তার মধ্যে কালীঝোরা থেকে মেল্লি পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার রাস্তা বেহাল। এই এলাকায় মাঝেমধ্যেই ধস নামে। তখন তড়িঘড়ি রাস্তা সারিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। এসবই অস্থায়ী সমাধান।
advertisement
কিন্তু বারবার কেন এমন হচ্ছে? প্রযুক্তিবিদদের মতে, পরিবেশের কথা না ভেবেই পাহাড়ের উপরে ব্যাপক নগরায়ণ হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে হোটেল-রেস্তোরাঁ। এছাড়া পাহাড়ে নানা পরিকাঠামোও তৈরি হচ্ছে। কোথাও রেললাইন তো কোথাও আবার পাহাড়ি নদীতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে তিস্তার উপরে একাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে। এর জেরে পাহাড়ের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে। ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এ সব কারণেই ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে বার বার ধস নামে। পার্থপ্রতিম বিশ্বাস, অধ্যাপক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছেন, পাহাড়ের ঢালের ভারসাম্যের সঙ্গে নির্ভর করে রাস্তার ভাগ্য। অর্থাৎ রাস্তা কতটা টিকবে বা টিকবে না।
নগরায়ণের ফলে পাহাড়ের বাস্তুতন্ত্রে কতটা নষ্ট হচ্ছে তার উপরে নির্ভর করে পাহাড়ের ভারসাম্য। পাহাড়ে নগরায়ণের ফলে সেখানকার স্টেবিলিটি নষ্ট করেছে। নদীর গতিপথে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হওয়া ভারসাম্য হারানোর একটা বড় কারণ। এতে নদীর স্বাভাবিক গতি প্রাভাবিত হয়েছে। ফলে বর্ষা এলে নদী মূল খাত ছেড়ে দু’পাশ দিয়ে জোড়ে বইছে। এতে ভাঙন হচ্ছে। ফলে পাহাড়ের উপরে রাস্তা ভারসাম্য হারাচ্ছে। রাস্তার চাপে নীচের শিলাস্তর ভঙ্গুর হচ্ছে। ধারণ ক্ষমতা হারাচ্ছে। ফলে স্থায়িত্ব এবং ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে বাধ্য। ঝোরার পাশে বেশি ধস নামে। এগুলো নদীর স্বাভাবিক জলপ্রবাহের রাস্তা। সেখানে চাপ বাড়লে ক্ষতি হতে বাধ্য। কিন্তু এই ধস রোখার উপায় কী? স্ট্রাকচারাল এঞ্জিনিয়ার বিশ্বজিৎ সোমের মত, বিকল্প নতুন রাস্তা তৈরি না হলে এই সমস্যা থেকেই যাবে।