একসময় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়ের মামলা প্রসঙ্গে ইডি-র আইনজীবী বলেছিলেন, 'পেঁয়াজের খোসা যত ছাড়ানো হবে, ততই তথ্য বেরোবে'। এখন তো কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সার্বিক ভাবে এই কথা বলাই যায়। গত ২০ জানুয়ারিই হুগলির বলাগড়ের তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিলেন ইডি-র গোয়েন্দারা। সেই সময় তাঁর বাড়ি থেকে চাকরিপ্রার্থীদের নাম, অ্যাডমিট কার্ড, সুপারিশ পত্র পাওয়া গিয়েছিল।
advertisement
কিন্তু, সূত্রের খবর, তল্লাশি চলাকালীন শুধুমাত্র, এসএসসি, টেট-এর প্রার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড, সুপারিশ পত্রই নয়, মিলেছিল সরকারি কর্মীদের বদলির সুপারিশ পত্রও। এর থেকে ইডি আধিকারিকরা ধারণা করছেন, শুধুমাত্র চাকরির বিনিময়ে টাকাই নয়, সরকারি কর্মচারীদের কাঙ্খিত জায়গায় বদলির বিনিময়েও টাকা নিতেন শান্তনু। প্রসঙ্গত, গত ১০ মার্চ ইডি-র হাতে গ্রেফতার হয়েছেন নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের আরেক মুখ শান্তনু।
ইডি-র দাবি, শুধু চাকরির বিনিময়ে টাকাই নয়, পছন্দ সই জায়গায় বদলির বিনিময়েও জেলার প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন শান্তনু। সূত্রের খবর, কাঙ্ক্ষিত জায়গায় বদলি করিয়ে দেওয়ার আর্জি নিয়ে তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কাছে আসতেন সরকারি কর্মচারীরা।
তাঁদের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বদলি করিয়ে দেওয়ার জন্য শান্তনু মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন বলে দাবি ইডির। প্রাইমারি টিচার্সদের বদলির ( transfer) জন্য মাথা পিছু ৫০ হাজার - এক লক্ষ টাকা করে টাকা নেওয়া হতো। ইডি সূত্রের দাবি, এভাবে প্রায় ২০০-র ও বেশি প্রাথমিক শিক্ষককে বদলি করেছিল শান্তনু। এই বদলি প্রক্রিয়ায় প্রাথমি শিক্ষা পর্ষদে যাঁরা শান্তনুকে সাহায্য করত এবার তাঁদের একে একে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার তোড়োজোড় শুরু করেছে তারা।
আরও পড়ুন: দুবাই-ব্যাঙ্কক-মলদ্বীপ! অভিনেতা বনি সেনগুপ্তর ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণেও এবার নজর ED-র
বেআইনি নিয়োগ নিয়ে শান্তনু, কুন্তল ঘোষ ও তাপস মণ্ডলের বৈঠক হয়েছিল ২০১৮ সালে। দুটো জায়গায়। একটি বৈঠক হয় শান্তনুর বাড়িতে এবং অপরটি কুন্তল ঘোষের বাড়িতে। কুন্তলের থেকে শান্তনু ক্যান্ডিডেট প্রতি মোটা অঙ্কের টাকা কমিশন পেতেন। তাপস মণ্ডল ক্যান্ডিডেটদের থেকে যে টাকা কুন্তলকে দিতেন সেই টাকার কমিশন নিতেন শান্তনু।
কিন্তু, এই তাপস-কুন্তলের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ হয়েছিল শান্তনুর? ইডি জেরায় জেনেছে, তাপসের ২৫০ জন ক্যান্ডিডেটের চাকরি মানিক ভট্টাচাৰ্য করে দিতে অস্বীকার করেন। তাপস তখন শীর্ষ এক নেতার দ্বারস্থ হতে চান। সেই শীর্ষ নেতার ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির কাছে তাপসকে নিয়ে যায় কুন্তল। সেখানেই বৈঠক হয়। বলা হয়, শান্তনু সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তারপরে, শান্তনুর বাড়িতে তাপস ও কুন্তল যান। শান্তনু তখন তাপসকে আশ্বাস দেয় যে, কুন্তলকে টাকা দিতে পারেন। চাকরি করে দেবেন। অর্থাৎ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে নিয়োগ দুর্নীতিতে উল্লেখযোগ্য পূর্ণভূমিকা ছিল তা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত গোয়েন্দারা।
আগামী সোমবার, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইডি-র বিশেষ আদালতে পেশ করা হবে।
ARPITA HAZRA