এই গান শোনেনি, এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। একাধারে কবি, পর্বতারোহী, প্রশিক্ষিত কথাকলি নৃত্যশিল্পী, পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার- এহেন রঙিন মানুষটিকে স্মরণ করতে তেমনই বর্ণাঢ্যতায় সেজে উঠেছিল সেদিনের অনুষ্ঠান। সহজিয়া উৎসবের প্রতিটি পরতে ছিল জীবন উদযাপনের ছাপ, যা কবি অরুণ চক্রবর্তী শেষদিন পর্যন্ত জীবন চর্চা ও চর্যায় মেনে চলেছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেবদাস বাউল, মনসুর ফকির, খুদাবক্স ফকির, লক্ষ্মণদাস বাউল, গৌতমদাস বাউল, রীণা দাসী, রঞ্জন প্রসাদ, স্বপন বসু, ভূমির সৌমিত্র রায়, তাজু, বাসু পাল, শোভনসুন্দর, মৌনীতা প্রমুখ।
advertisement
উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ ছিল বাঁকুড়া থেকে আগত ওরাওঁ লোকনৃত্যশিল্পীদের দল। সহজিয়ার কর্ণধার দেব চৌধুরীর নির্দেশনায় অরুণ চক্রবর্তীর লেখা কয়েকটি গানের অনবদ্য গীতি-কোলাজ উপস্থাপনা করে ‘সহজ সুরের পাঠশালা’র ছাত্র-ছাত্রীরা। অনুষ্ঠানটিকে আরও মনোগ্রাহী করে তুলতে কবির বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও প্রোজেকশন করা হয় পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে।
এ বারের ‘সহজিয়া সম্মান’ পেলেন মুর্শিদাবাদের প্রবীণ সাধক-গায়ক শ্রী খুদাবক্স ফকির এবং নগর বাউল শ্রী স্বপন বসু। সহজিয়া ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট শ্রী সিদ্ধার্থ দাস বলেন, ‘অরুণদা সবসময়ই জীবনকে সেলিব্রেট করতেন, আমরাও তেমনই সেলিব্রেশনের মধ্যে দিয়েই আমাদের প্রিয় কবিকে ট্রিবিউট জানিয়েছি।
অরুণদা নাগরিক মানুষ হয়েও বুকের মধ্যে গ্রাম লালন করতেন, আর সহজিয়ার কাজও গ্রামীণ ও নাগরিক কৃষ্টি ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ও সঠিক উপস্থাপনার মধ্যে দিয়ে তাকে আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় তুলে ধরা’। কবি অরুণ, চেনা-জানা মানুষের সঙ্গে দেখা হলেই লজেন্স খাওয়াতেন। উল্লেখ্য, এইদিন অনুষ্ঠানেও দর্শকদের সবাইকে সহজিয়ার পক্ষ থেকে লজেন্স দেওয়া হয়। উৎসব শেষ হয় মনসুর ফকিরের চন্ডীদাসের পদাবলী ও গ্রামীণ আখড়া ধারার ‘মিলন গীতি’ দিয়ে।