পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার দিন নিহত স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বপন কামিল্যার দেহ নিউ টাউনের যাত্রাগাছিতে ফেলে আসার সময় সিসিটিভি ফুটেজে ধৃত দু জনের ছবি মিলেছে৷ দেহ ফেলে আসার সময় গাড়ি চালাচ্ছিলেন বিডিও প্রশান্ত বর্মনের গাড়ি চালক রাজু ঢালি৷ অন্যদিকে সিসিটিভি-তে বিডিও-র বন্ধু পেশায় ঠিকাদার জলপাইগুড়ির বাসিন্দা তুফান থাপাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে৷
advertisement
গত ২৮ অক্টোবর দত্তাবাদের দোকান থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের বাসিন্দা স্বপন কামিল্যাকে অপহরণ করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ৷ এর দু দিন পর ৩০ নভেনম্বর নিউ টাউনের যাত্রাগাছিতে খালপাড় থেকে ওই অপহৃত ব্যবসায়ীর দেহ উদ্ধার হয়৷ রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মণই গাড়িতে কয়েক জন সঙ্গীকে নিয়ে এসে ওই ব্যবসায়ী এবং তাঁর বাড়ির মালিককে অপহরণ করেন বলে মৃত ব্যবসায়ীর পরিবারের অভিযোগ৷ বাড়ির মালিককে সেদিনই ছেড়ে দেওয়া হলেও দু দিন বাদে নিউ টাউন থেকে স্বপন কামিল্যার মৃতদেহ উদ্ধার হয়৷
মৃতের পরিবারের অভিযোগ, বিডিও প্রশান্ত বর্মনের বাড়িতে কিছুদিন আগে সোনার গয়না চুরি হয়৷ সেই গয়না ওই ব্যবসায়ীর দোকানে বিক্রি করা হয় বলে দাবি করেন ওই বিডিও৷ সেই সূত্রেই স্বপনবাবুর খোঁজ করতে তাঁর পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের বাড়িতেও পৌঁছন তিনি৷ বিডিও যেদিন দাঁতনে যান, সেদিনের একটি ভিডিও সংবাদমাধ্যমকে দেয় মৃত ব্যবসায়ীর পরিবার৷ যার বিরুদ্ধে বিডিও-র বাড়িতে সোনা চুরির অভিযোগ উঠেছিল, অশোক কর নামে বিডিও-র বাড়ির প্রাক্তন কর্মীও বিডিও-র বাড়ি থেকে সোনা চুরি করে দত্তাবাদের স্বর্ণব্যবসায়ী স্বপন কামিল্যাকে বিক্রি করার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন৷
মৃত ব্যবসায়ীর ময়নাতদন্ত রিপোর্টেও তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করার কথাই উল্লেখ করা হয়েছে৷ পুলিশ সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত যে সিসিটিভি ফুটেজ এবং তথ্যপ্রমাণ পুলিশের হাতে এসেছে, তাতে এই ঘটনায় বিডিও-র যোগের যথেষ্ট জোরাল প্রমাণ মিলেছে বলেই খবর৷ বিডিও-র নীলবাতি লাগানো গাড়িতেই ওই ব্যবসায়ীকে তাঁর দোকান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়৷ একই সঙ্গে ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ভাড়া বাড়ির মালিককেও একই সঙ্গে অপহরণ করা হয়েছিল৷ যদিও নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়ার পর বাড়ির মালিককে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ স্বর্ণ স্বপন কামিল্যার বাড়ির মালিক নিজেই এই ঘটনার কথা জানিয়েছে৷
পাশাপাশি, বিডিও-র বয়ানেও তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি৷ অভিযুক্ত বিডিও এখন দাবি করছেন, তাঁর বাড়ি থেকে নাকি কোনও সোনা চুরিই হয়নি৷ অথচ তাঁর বাড়িরই প্রাক্তন কর্মী সোনা চুরির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন৷ সোনা ফেরত পেতে বিডিও তাঁকে মারধরও করেন বলে দাবি অশোক কর নামে ওই প্রাক্তন কর্মী৷ অশোক করের দাবি, তিনিই বিডিও প্রশান্ত বর্মনকে স্বপন কামিল্যা নামে ওই ব্যবসায়ীকে সোনা বিক্রির কথা জানিয়েছিলেন৷
শুধু তাই নয়, অভিযুক্ত বিডিও দাবি করেছেন সম্প্রতি তিনি কলকাতাতেই আসেননি৷ অথচ তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, ২০ অক্টোবর প্রশান্ত বর্মন বিমানে বাগডোগরা থেকে কলকাতায় এসেছিলেন৷ ২৯ অক্টোবর ফেরেন তিনি৷ অর্থাৎ স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বপন কামিল্যাকে অপহরণ এবং খুনের সময় কলকাতাতেই ছিলেন বিডিও প্রশান্ত বর্মন৷ তা হলে কেন তিনি মিথ্যে কথা বলছেন, সেই প্রশ্ন উঠছে৷ এই অপহরণ এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিডিও-র যুক্ত থাকার এত জোরাল প্রমাণ সত্ত্বেও কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, তাতে পুলিশের ভূমিকাতেও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে৷
পুলিশ সূত্রে খবর, বিডিও প্রশান্ত বর্মনের গাড়ির চালক এবং বন্ধুকে আদালতে পেশ করে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাওয়ার আবেদন জানানো হবে৷ হেফাজতে নিয়ে দু জনকে জেরা করে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আরও তথ্য পেতে চায় পুলিশ৷
