আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশন শুরু। ১০ ফেব্রুয়ারি পেশ হওয়ার কথা রাজ্য বাজেট। এই আবহে, বিধানসভায় অধ্যক্ষ্য বিমান বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, 'রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া একাধিক বিল রাজ্যপালের অনুমোদন না মেলায় আটকে রয়ছে। বিধানসভায় পাস হওয়া বিলে সম্মতি বা অসম্মতি দেওয়ার জন্য একটা সর্বোচ্চ সময়সীমা থাকা দরকার। প্রয়োজনে তার জন্য সংবিধান সংশোধন করা উচিত।'
advertisement
বিগত রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সময়ে বিধানসভায় পাস হওয়া প্রায় ১৯টি বিল রাজ ভবনে আটকে রয়ছে। এর মধ্যে যেমন রাজ্যের নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত বিল রয়ছে তেমনি অনুপ্রবেশ, হাওড়া পুরভোট সংক্রান্ত বিল রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগে রাজ্যপালের ক্ষমতা খর্ব করে সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানোর মতো বিতর্কিত বিল রয়ছে৷
এই বিলগুলি বিধানসভায় পাস হলেও, তদনীন্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের অনুমোদন না মেলায় তা কার্যকর করা যায়নি। তা নিয়ে ধনকড়ের সঙ্গে বিধানসভা ও রাজ্য সরকারের সংঘাত, নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গত ১৮ জুলাই ২০২২, জগদীপ ধনকড় উপরাষ্ট্রপতি হয়ে দিল্লি চলে যাওয়ার পর, 'স্টপগ্যাপ রাজ্যপাল' হিসাবে দায়িত্ব নেন মনিপুরের রাজ্যপাল লা গণেশন। স্থায়ী ও পূর্ণ সময়ের রাজ্যপাল না হওয়ায় গণেশনের পক্ষে ধনকড়ের সিদ্ধান্তের রদবদল করা সম্ভব ছিল না। হয়ও নি। এর পর, গত ২৩ নভেম্বর ধনকড়ের উত্তরসূরি হিসাবে সি ভি আনন্দ বোস রাজ্যের স্থায়ী রাজ্যপাল হিসাবে শপথ নেন।
প্রাথমিক আড়ষ্ঠতা কাটার পর, রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকের পর, বর্তমান রাজ্যপাল সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি, পুষ্প প্রদর্শনী উপলক্ষে স্পিকারের আমন্ত্রণে সস্ত্রীক বিধানসভায় আসেন রাজ্যপাল। সরস্বতী পূজোতেও রাজ্যপালকে আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে বিধানসভার পক্ষ থেকে। অন্যদিকে, রাজ্য সরকার ও বিধানসভার সঙ্গে রাজ্যপালের এই ' সুসম্পর্কে' নাকি বেজায় ক্ষুব্ধ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও রাজ্য বিজেপি।
বাইরে থেকে এসব দেখে বিধানসভা ও শাসক দলের কেউ কেউ মনে করেছিলেন, রাজ্যের বকেয়া বিলের অনুমোদন নিয়ে জট হয়তো এবার কাটতে চলেছে। কিন্তু,শপথের পর দু' মাস গড়িয়ে গেলেও, বাস্তবে রাজ্যের বকেয়া বিল নিয়ে রাজ ভবনের অবস্থান কিছু বদলায়নি।
পর্যবেক্ষকদের মতে, ধনকড়ের মতো বিধানসভা ও রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে প্রকাশ্যে সংঘর্ষে না গেলেও, ধনকড়ের নেওয়া সিদ্ধান্তের কোনও নড়চড় করেননি বর্তমান রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। আসলে, ধনকড়ের সঙ্গে বর্তমান রাজ্যপালের তফাৎ কাজের ধরনে। ফলে, রাজ্য সরকার বা বিধানসভার প্রতি রাজভবনের দৃষ্টিভঙ্গিরও কোন পরিবর্তন হয়নি।
রাজনৈতিক মহলের মতে, পোড়খাওয়া রাজনীতিক শুভেন্দুর এটা বুঝতে দেরি হয়নি। তাই দ্রুত রাজ্যপাল ইস্যুতে এখন 'নরম' শুভেন্দু। এই আবহেই হতে চলেছে রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশন।
গতবার, বাজেট পেশের দিন অধিবেশনে বিজেপির বিরোধিতার জেরে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় বাজেট না পড়েই নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েছিলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামতে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। শেষ পর্যন্ত, কোনওমতে একটি বাক্য পড়েই বিধানসভা ছেড়ে চলে যান ধনকড়। সেই স্মৃতি এখনও টাটকা শাসক দলের। ফলে,আসন্ন বাজেট অধিবেশনকে ঘিরে উদ্বেগ রয়ছে শাসকের। কারণ,শাসক দল মনে করে, বিগত বাজেট অধিবেশনে বাজেট পেশ নিয়ে যা ঘটেছিল, তার প্লট নাকি তৈরি হয়েছিল রাজমভবন আর বিজেপির মধ্যে 'বোঝাপড়া'র ভিত্তিতে। সেদিক থেকে এবার নতুন রাজ্যপালের ভূমিকা কী হবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
এই প্রসঙ্গে, পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ' আমরা আশা করছি এই রাজ্যপাল কোনও পক্ষপাত মূলক কাজ করবেন না।' স্পিকার বিমান বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, রাজ্য সরকার কোনও বেআইনি বিল পাস করায়নি, তা সত্বেও কোনও সংশোধন করতে হলে রাজ্য তা করতে তৈরি। কিন্তু, অনির্দিষ্টকাল বিল আটকে রাখা ঠিক নয়। আশা করি, নতুন রাজ্যপাল সেটা বুঝেছেন।'
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, আসলে, আসন্ন বাজেট অধিবেশনের আগে এটা দু' পক্ষের ওয়ার্ম আপ। রাজ্যপাল হিসাবে প্রথম ইনিংস খেলতে নেমে, শাসক ও বিরোধীর এই স্নায়ুর লড়াইকে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করাই এখন আসল চ্যালেঞ্জ বর্তমান রাজ্যপাল আনন্দ বোসের।