কলকাতা: পুরনো দ্বন্দ্ব ফের নতুন করে উসকে উঠল তৃণমূলের অন্দরে। একেবারে বাছা বাছা বিশেষণে দলের বর্ষীয়ান সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে আক্রমণ শানিয়েছিলেন সাংসদ মহুয়া মৈত্র। শনিবার এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে মহুয়া নিজেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ করে রীতিমতো কড়া কড়া শব্দ প্রয়োগ করলেন। যা নিয়ে নতুন করে মহুয়া-কল্যাণ দ্বৈরথ শুরু হল বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। আর সোমবার দলের সাংসদদের সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকে লোকসভায় তৃণমূলের চিফ হুইপ পদ থেকেই পদত্যাগ করে ফেললেন কল্যাণ। যা নিয়ে জোর জল্পনা ছড়িয়েছে তৃণমূলের অন্দরে।
advertisement
এদিনের বৈঠকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতার দায়িত্ব দিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তৃণমূলের সংসদীয় দলের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে এই ঘোষণা করেন তিনি৷ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় সংসদে আসতে পারছেন না৷ এই পরিস্থিতিতে অভিষেককেই লোকসভায় গুরুদায়িত্ব দিলেন মমতা৷ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি এবার থেকে লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা হচ্ছেন অভিষেক৷ ফলে জাতীয় রাজনীতিতেও অভিষেকের গুরুত্ব আরও বাড়ল৷ কিন্তু সমস্ত আলোচনার কেন্দ্রে কল্যাণের পদত্যাগ।
ওই বৈঠকের পরেই কল্যাণ সোশ্যাল মিডিয়ায় মহুয়া মৈত্রকে কার্যত তুলোধনা করেন। তিনি লেখেন, ”আমি সম্প্রতি মহুয়া মৈত্রর একটি পাবলিক পডকাস্টে করা ব্যক্তিগত মন্তব্যগুলি নোট করেছি। তার শব্দের নির্বাচন, যার মধ্যে একজন সহকর্মী সাংসদকে ‘শূকর’-এর সঙ্গে তুলনা করার মতো অমানবিক ভাষাও রয়েছে। এটা শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়, বরং স্বাভাবিক আলোচনার মৌলিক নিয়মগুলির প্রতি গভীর অবজ্ঞা প্রতিফলিত করে।”
কল্যাণের সংযোজন, ”আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমি যা বলেছি তা ছিল জনসাধারণের জবাবদিহি এবং ব্যক্তিগত আচরণের প্রশ্ন, যা প্রতিটি ব্যক্তিত্বকে মুখোমুখি হতে প্রস্তুত থাকতে হবে, সে তিনি পুরুষ হোন বা মহিলা। যদি সেই কথাগুলি অস্বস্তিকর হয়, তবে এটি বৈধ সমালোচনাকে “নারী বিদ্বেষ” হিসাবে চিহ্নিত করে পর্যালোচনা থেকে পালানোর জন্য যথেষ্ট নয়। একজন পুরুষ সহকর্মীকে ‘যৌনভাবে হতাশ’ বলে চিহ্নিত করা সাহস নয়, এটি সরাসরি অপমান। যদি এমন ভাষা একজন মহিলার প্রতি নির্দেশিত হত, তবে দেশব্যাপী ক্ষোভ হত, এবং ঠিকই হত। কিন্তু যখন একজন পুরুষকে লক্ষ্য এটা বলা হয়, তা উপেক্ষা করা হয় বা এমনকি প্রশংসিতও হয়। স্পষ্ট করে বলি, অপমান অপমানই — লিঙ্গ নির্বিশেষে। এমন মন্তব্য শুধু অশালীন নয়, এটি একটি বিষাক্ত দ্বৈত মানকে শক্তিশালী করে যেখানে পুরুষদের চুপচাপ সহ্য করতে বলা হয় যা কখনও সহ্য করা হবে না যদি ভূমিকা উল্টে যায়।”
কিন্তু কেন তিনি পদ ছাড়লেন, সে বিষয়েও মুখ খুলেছেন কল্যাণ নিজেই৷ শ্রীরামপুরের সাংসদ বলেন, ‘মমতাদি অভিযোগ করেছেন লোকসভায় সমন্বয় ঠিক মতো হচ্ছে না, ফলে আঙুল তো আমার দিকে তোলা হচ্ছে৷ তাই আমি ছেড়ে দিলাম৷” শুধু তাই নয়, কল্যাণ অভিযোগের সুরে আরও বলেন, ”দিদি বলছেন ঝগড়া করছি৷ যাঁরা আমাকে গালাগাল দেয়, তা শুনে আমি কি সহ্য করব? দলকে জানিয়েছি, দল আমাকেই উল্টে দায়ী করেছে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাল ভাবে দল চালাক৷ আমার পদত্যাগে লোকসভায় ভাল হলে, সেভাবেই দল চলুক৷’’