ছোট্ট এক কামরার ঘরে বড় ছেলেকে নিয়ে এখনও জ্ঞানেশ্বরী (Jnaneswari Express Accident) দুর্ঘটনায় নিখোঁজ স্ত্রী ও এক পুত্রের ফিরে আসার আশায় বছর পঞ্চাশের সুরেন্দ্র সিং| এগারো বছর অতিক্রম হলেও এখনো রেল তাঁর স্ত্রী নিলাম ও মেধাবি মেজো ছেলে রাহুলের কোনও হদিশ দিতে পারেনি| এমনকী পরিবারের চারজনকে খুইয়েও পাননি কোনও চাকরি| বেলুড়ের বাত্রা পরিবারের মতো সুরেন্দ্র সিং এরও দাবি, চাই না কিছু। শুধু কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে দাবি, তাঁর পরিজনদের খোঁজ দিক যে তাঁরা মৃত না জীবিত|
advertisement
স্ত্রী পুত্রের খোঁজে সুরেন্দ্র সিং বেসরকারি দফতরের চাকরিটিও হারিয়েছেন| বড় ছেলেকে মানুষ করতে হাতে তুলে নিয়েছেন ক্যাব ট্যাক্সির স্টিয়ারিং| বাড়িতে এখনও সযত্নে রেখে দিয়েছেন দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার স্ত্রী নিলমের একটি পায়ের পাতার ছবি| পায়ের পাতায় লাগানো আলতার মতো বিশেষ রং দেখে শনাক্ত করলেও সেই সময় হাসপাতাল মর্গ থেকে উধাও হয়ে যায় সেই দেহাংশটিও | সেই পায়ের পাতার ছবি আজ বুকে জড়িয়ে ধরে চোখের জলে কাটে অবসর সময়|
দুই সন্তান ও এক বছর ছয়ের আত্মীয়ের কন্যাসন্তানকে নিয়ে ছত্তীশগড়ের দুরদে বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিলেন স্ত্রী নিলাম সিং| সঙ্গে মেজো ছেলে রাহুল ও ছোট ছেলে রোহিত| কলকাতার বেসরকারি স্কুলের সেই বছরেই স্কুলের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন রাহুল| সেই রেজাল্ট নিয়ে বাড়ি ফিরেই মায়ের সঙ্গে রওনা হয়েছিলেন তিনি| ২৭ মে, ২০১০ সালের সেদিন সকালেই দূরদ থেকে বাড়ি ফিরেই আবার মায়ের সঙ্গে সেখানে যাওয়ার জেদ করেছিলেন রাহুল | সুরেন্দ্র নিজেই ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন টিকিটের| জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের S5 কামরায় ছিলেন চারজন| ছয় বছরের খুশবু আর বছর তেরোর রোহিতের নিথর দেহের খোঁজ পেলেও আজও নিখোঁজ স্ত্রী নিলম ও ছেলে রাহুল| সুরেন্দ্র আশায় আছেন হয়তো ফিরে আসবেন তাঁরা। সেই আশাতেই এখনও কলকাতার বাড়ি না বিক্রি করে আগলে রেখেছেন সুরেন্দ্র সিং | কারণ স্ত্রী পুত্র তো হাওড়ার বাড়ির হদিশ জানে না, পাছে বাড়ি ফিরে যদি আবার হারিয়ে যায় তাঁরা|
