ক্ষমতায় আসা ইস্তক রাজ্যের পর্যটন শিল্পের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার দাবি করে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রের খবর, পর্যটনের প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যেই পরিবহণ নিগম প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা খরচ করে ৪৫ আসনের দু’টি দোতলা বাস তৈরি করিয়েছিল। বাস তৈরি করানো হয় বিশেষজ্ঞ সংস্থা জামশেদপুরের ‘বেবকো বা বিবিকো’কে দিয়ে। ভারত স্টেজ-৪ গোত্রের এই বাসে স্টেজ বদলের জন্য নয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে। আপাতত, ২টি বাস কেনা হলেও, ভবিষ্যতে ধাপে ধাপে মোট ১০ টি দোতলা বাস কেনার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্যের। জানা গিয়েছে, আপাতত, এই বড়দিন থেকে পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত উৎসবের মরসুমে এই বাস চালাবে রাজ্য পর্যটন দফতর।
advertisement
আরও পড়ুন: তৈরি হয়েছে বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত, বড়দিনে আবহাওয়ার বড় আপডেট হাওয়া অফিসের
এই দো-তলা বাস এ রাজ্যের পর্যটন দফতরের মুকুটে নতুন পালক বলে মনে করা হচ্ছে। এই দু’টি বাসই হুডখোলা।বর্ষা বা গরমে ছাদে অস্থায়ী ছাউনি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে নির্মাণসংস্থার সঙ্গে নিগম-কর্তাদের কথা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিশেষ এক ধরণের শিট ব্যবহার করা যাবে। তবে হুড খোলা ছাদেই আপাতত এই উৎসবের মরসুমে মজা পাবে শহরের মানুষ। বিশেষ করে শিশুরা যাতে আনন্দ পায়, তাই এই বাস আগামী কয়েকদিন থাকবে পার্ক স্ট্রিটে।
বহুদিন ধরেই রাজ্য সরকার কলকাতায় আবার দো-তলা বাস চালাতে আগ্রহী। অনেকটা লন্ডনের সিটি ট্যুরের ধাঁচে শহরে পর্যটনের ক্ষেত্রে এই বাস ব্যবহারের কথা ভাবা হয়েছিল। এবার এই বাস দিয়ে সেই লক্ষ্যপূরণ হবে বলে মনে করছেন দুই দফতরের আধিকারিকেরা।
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরে তৃণমূলের 'দরজা খোলা' নিয়ে পাল্টা দিলীপ ঘোষ, করলেন মারাত্মক দাবি!
ইতিহাস বলছে, কলকাতার রাস্তায় প্রথম দোতলা বাস চলে ১৯২৬ সালে। পরিবহণের জন্য স্বাধীনতার পর সিএসটিসি নামের সংস্থা তৈরি হয়। তারাই কলকাতার রাস্তায় দোতলা বাস নামায়। ১৯৯০ থেকে এই বাসের সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকে। একটা সময় ব্যরাকপুর, হাওড়া, বেহালা থেকে চলাচল করত এই দোতলা বাস।
কিন্তু নানা সমস্যার জন্য ২০০৫-এ দোতলা বাসের রাস্তায় নামা বন্ধ হয়। এখন স্মারক হিসেবে একটি দোতলা বাস রাখা রয়েছে নিউটাউনের ইকো পার্কে। তবে সেই বাসের রং বদলে ফেলা হয়েছে। লাল থেকে নীল-সাদা হয়েছে। ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসে বা বিশেষ অনুষ্ঠানে রাজারহাট, নিউটাউনে চালানো হয় এই বাস।
নতুন নীল-সাদা বাসে অবশ্য থাকছে সমস্ত আধুনিক ব্যবস্থা। থাকছে আগের চেয়ে বেশি চওড়া সিঁড়ি। তবে যাত্রী সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে তা বাসের ভিতর দিয়েই বাসের ছাদে উঠে গিয়েছে সেই সিঁড়ি। বাসের মধ্যে থাকছে সিসি ক্যমেরা, প্যানিক বাটন। আসন আগের চেয়ে অনেক বেশি আরামদায়ক। দো-তলা অংশ ঘিরে রাখা আছে স্বচ্ছ ফাইবার গ্লাস দিয়ে।
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর "কলকাতার যীশু" কবিতায় দোতলা বাসের গল্প আছে। এছাড়া একাধিক সিনেমাতেও কলকাতার নস্ট্যালজিক এই দোতলা বাসের নানা গল্প রয়েছে। সেই পুরনো স্মৃতি আবারও এই নতুন বাসের হাত ধরে ফিরবে বলে মনে করছেন পরিবহণ ও পর্যটন দফতরের আধিকারিকরা।