#মুম্বই: সোমবার মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ঝড় উঠবে জানা ছিল। কিন্তু দেখার ছিল সেই ঝড়ের সূচনা কে করেন? দুই দলেই একাধিক বড় শট খেলার ব্যাটসম্যান ছিলেন। কিন্তু 'ইউনিভার্স বস' যে দলে থাকবেন ঝড় ওঠার সম্ভাবনা সেই দলের বেশি সেটা বোঝার জন্য ক্রিকেট বোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন নেই। ক্রিস গেইল দেখালেন বয়স বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু আগের সেই ভয়ঙ্কর ঝড় তোলার ক্ষমতা কমেনি। তিন নম্বরে নামলেন পঞ্জাবের হয়ে। প্রথমটা একটু দেখেশুনে শুরু করলেন। তারপর রুদ্রমূর্তি ধারণ করলেন। বেন স্টোকসকে ছক্কা মেরে আইপিএলে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৩৫০ ছক্কা মারার রেকর্ড তৈরি করলেন।
advertisement
গত বছর আরবে প্রথমদিকে রিজার্ভ বেঞ্চে বসে সময় কাটিয়েছিলেন। সাতটা ম্যাচে ২৮৮ রান করেন পঞ্জাবের হয়ে। ঈর্ষণীয় স্ট্রাইকরেট রেখে। এদিন রাহুলের সঙ্গে ভরসা দিলেন দলকে। এমনিতে আইপিএলের ইতিহাসে বিদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ডেভিড ওয়ার্নারের পর ক্রিস গেইল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। চার হাজারের ওপর রান। তবে ভাগ্য ভাল রাজস্থানের। অধিনায়ক সঞ্জু বল তুলে দিলেন রিয়ান পরাগের হাতে। লোভ সামলাতে না পেরে তুলে মারতে গেলেন ক্রিস গেইল। বাউন্ডারি লাইন থেকে ছুটে এসে দুর্ধর্ষ ক্যাচ ধরলেন বেন স্টোকস। ২৮ বলে ৪০ রানে থেমে গেল গেইল ঝড়। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল রাজস্থান। অর্ধশতরান পেলেন না ঠিকই, কিন্তু জামাইকান কিংবদন্তি বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন এবারের আইপিএলের দলগুলোর রাতের ঘুম তিনি কেড়ে নিতে চলেছেন।
টুর্নামেন্ট যত এগোবে ততই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবেন তিনি। মাঠের বাইরে গান বাজনা, নাচ, মিউজিক ভিডিও নিয়ে সময় কাটে। কিন্তু পেশাদার তারকা ক্রিস গেইল নিজের আসল কাজটা যে এখনও সমান দক্ষতায় করতে পারেন তা সেদিন প্রমাণ করলেন আবার। পঞ্জাবের বড় রান তোলার পথ প্রশস্ত করে দিয়ে গেলেন। 'রাহুল, নাম তো সুনাহি হোগা' । শাহরুখ খানের হিন্দি সিনেমার বিখ্যাত ডায়ালগ শোনেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ভারতীয় ক্রিকেটের রাহুল মানে 'দ্য ওয়াল' রাহুল দ্রাবিড়কেই চিনত লোকে। ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন রাহুল কে এল রাহুল। তাঁর জাত নিয়ে প্রশ্ন ছিল না কখনই। গতবার পঞ্জাবের অধিনায়ক হিসেবে দুর্ধর্ষ ব্যাট করেছিলেন আইপিএলে। সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন আরবের মাটিতে।
এদিন প্রথম ম্যাচেই রাজস্থানের বিরুদ্ধে প্রমাণ করলেন নিজের সেরা ছন্দেই আছেন টিম ইন্ডিয়ার এই ব্যাটসম্যান। ওপেন করতে নেমে প্রথমে সাবধানে শুরু করলেন। খুচরো রান নিয়ে স্কোরবোর্ড চালু রাখলেন। সেট হয়ে যাওয়ার পর নিজের হাত খুললেন। বেন স্টোকস, মুস্তাফিজুর, গোপাল কোনও বোলারকেই ছাড়লেন না। বুঝিয়ে দিলেন ভারতীয় দলের হয়ে একদিনের সিরিজে শেষদিকে যে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তা বজায় রাখবেন আইপিএলে। রাহুলের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য কখনও তাঁকে দেখে মনে হয় না কষ্ট করে বড় শট মারছেন। টেকনিক এতটাই উন্নত।
গতবার দ্বিতীয় পর্যায় পরপর বেশ কয়েকটা ম্যাচ জিতে প্লে-অফে পৌঁছতে পারেনি পঞ্জাব। এদিন প্রথম ম্যাচে রাহুল বার্তা দিলেন তিনি তৈরি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে। পাল্লা দিয়ে রাহুলকে সাহায্য করলেন দীপক হুদা। পঞ্জাব ইনিংসে একাধিক ছক্কা হাঁকালেন তিনি। সব মিলিয়ে রাহুল এবং দীপক শাসন করলেন রাজস্থান বোলারদের।
এই দুজনের জন্যই প্রথমে ব্যাট করে ও বড় রান তুলল পঞ্জাব। রাহুলের ব্যাটিং এদিন যেন ঠিক কবিতার মত। মাঝের সময়ে অস্ট্রেলিয়া সফরের পর রানের মধ্যে ছিলেন না। প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছিল। কিন্তু তিনি দেখিয়ে দিলেন জাত ব্যাটসম্যান কাকে বলে। রাহুলের ব্যাট চলতে থাকলে স্বপ্ন দেখতেই পারে পঞ্জাব।শেষপর্যন্ত ৪৯ বলে ৯১ রানে বাউন্ডারিতে তেওয়াতিয়ার হাতে ধরা পড়লেন রাহুল। ক্রিকেটপ্রেমীদের অনেকদিন মনে থাকবে এই ইনিংস।
