প্রাথমিক ভাবে আচমকা এই বিক্ষোভে দর্শকাসনে উপস্থিত অতিথিরা হতচকিত হয়ে গেলেও মুখ্যমন্ত্রীর জবাব শুনে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান তাঁরা৷ শেষ পর্যন্ত নির্বিঘ্নেই নিজের বক্তব্য শেষ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনাদের দলকে বলুন আমাদের রাজ্যে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে যাতে তাঁরা আমাদের সঙ্গে লড়াই করতে পারে৷’ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে ঘিরে যখন এই ঘটনা ঘটছে, তখন দর্শকাসনে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও৷
advertisement
লন্ডন সফরে শিল্প বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন বৈঠক থাকলেও কেলগ কলেজের এই বক্তব্যই ছিল মুখ্যমন্ত্রীর সফরের মূল আকর্ষণ৷ আর সেখানেই ঘটে যায় এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা৷ হাতেগোনা কয়েকজন বিক্ষোভকারীর এই কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সাময়িক ছন্দপতন ঘটলেও যেভাবে বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে সৌজন্য বজায় রেখেই গোটা পরিস্থিতি মুখ্যমন্ত্রী সামাল দিয়েছেন, তাতে রাজনীতিবিদ হিসেবে তাঁর কদর আন্তর্জাতিক মহলেও আরও বাড়ল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷ শেষ পর্যন্ত দর্শকাসনে থাকা বাকিদের সমবেত প্রতিবাদের মুখে বিক্ষোভকারীরা হল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন৷
আরও পড়ুন: অক্সফোর্ডে ঐতিহাসিক মুহূর্ত, পিয়ানোতে ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ বাজিয়ে বাংলার আত্মার ছোঁয়া দিলেন মমতা
কেলগ কলেজে নারী, শিশু এবং সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের সামাজিক উন্নয়নের উপরে বক্তব্য রাখার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে৷ বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য সাথী, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পের উল্লেখ করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এর পর রাজ্যে শিল্প পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে টাটাদের টিসিএস সংস্থার বিনিয়োগের প্রসঙ্গ তুলতেই দর্শকাসনের পিছনের দিক থেকে কয়েকজন হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে উঠে দাঁড়ান৷ তাতে রাজ্যে নির্বাচন এবং ভোট পরবর্তী হিংসার মতো ঘটনা, আরজি কর কাণ্ডের কথা লেখা ছিল৷ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মাঝেই চিৎকার করে নিজেদের বক্তব্য জানানোর চেষ্টা করেন ওই বিক্ষোভকারীরা৷
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সামান্য বিচলিত না হয়ে শুরু থেকেই শান্ত অথচ দৃঢ় গলায় বিক্ষোভ সামাল দিতে থাকেন৷ বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আমাকে স্বাগত জানাচ্ছেন, আপনাদের ধন্যবাদ৷ আপানাদের আমি মিষ্টি খাওয়াবো৷’ বিক্ষোভকারীরা আরজি কর কাণ্ডের কথা তুললে মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা বলেন, ‘একটু জোরে বলুন, আমি শুনতে পাচ্ছি না৷ আপনাদের সবকথা আমি মন দিয়ে শুনব৷ আপনারা কি জানেন, এই মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে? এই মামলার তদন্তের দায়িত্বও এখন কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে, মামলাটি আর আমাদের হাতে নেই৷’
মমতা আরও বলেন, ‘এখানে রাজনীতি করবেন না, এটা রাজনীতি করার মঞ্চ নয়৷ আমার রাজ্যে গিয়ে আমার সঙ্গে রাজনীতি করবেন৷ এর পরেই বিক্ষোভকারীরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার কথাও তোলেন৷ মুখ্যমন্ত্রী তখন এক বিক্ষোভকারীদের ব্রাদার বলে সম্বোধন করে বলেন, মিথ্যে কথা বলবেন না৷ আপনাদের প্রতি আমার সহানুভূতি রয়েছে৷ কিন্তু এটাকে রাজনীতির মঞ্চ না করে বাংলায় গিয়ে আপনাদের দলকে আরও শক্তিশালী করতে বলুন, যাতে তারা আমাদের সঙ্গে লড়াই করতে পারে৷’
মুখ্যমন্ত্রীর এই জবাব শুনেই জোর হাততালি দিতে থাকেন দর্শকাসনে থাকা অতিথিরা৷ এর পরে আরও সুর চড়ানোর চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা৷ মুখ্যমন্ত্রীও পাল্টা তাদের বলেন, ‘আমাকে অপমান করতে গিয়ে আপনাদের প্রতিষ্ঠানকে অসম্মান করবেন না৷ আমি এখানে দেশের প্রতিনিধি হয়ে এসেছি৷ নিজেদের দেশকে অপমান করবেন না৷’
এর পরই সমবেত ভাবে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সরব হন অনুষ্ঠানের আয়োজক এবং উপস্থিত অতিথিরা৷ বাধ্য হয়ে সভাস্থল ছেড়ে বেরিয়ে যান ওই বিক্ষোভকারীরা৷ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা শুনতে বহু প্রবাসী ভারতীয় ছাড়াও বেশ কিছু বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন৷ তবে এই অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছেন অনুষ্ঠানের আয়োজকরা৷
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য শান্ত ভাবেই বলেন, ‘আপনারা আমাকে এখানে বার বার ফিরে আসার জন্য আরও উৎসাহিত করলেন৷ মনে রাখবেন, দিদি কাউকে তোয়াক্কা করে না৷ দিদি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো হেঁটে আসে৷ যদি আমাকে ধরতে পারেন, ধরুন!’