TRENDING:

মরুভূমির দেশ অ্যারিজোনায় পুজো হয় উইকএন্ডে, তবে নিষ্ঠায় কোনও ফাঁক নেই

Last Updated:

অফিস শেষে শুক্রবার রাত থেকেই শুরু হয় বোধন ও ষষ্ঠী । শনিবার সকাল থেকে যথাক্রমে সপ্তমী, অষ্টমী ও সন্ধিপুজো । রবিবারে নবমী ও দশমী । লিখছেন সৃজিতা সাহা...

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#অ্যারিজোনা: আশ্বিনের মাঝামাঝি উঠিল বাজনা বাজি, পূজার সময় এল কাছে ... কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের মতো দু-তিনমাস আগে থেকে প‍্যাণ্ডেলের বাঁশ বাঁধা শুরু না হলেও দুর্গাপুজো নিয়ে আমেরিকার প্রবাসী বাঙালিদের উত্তেজনা কিছু কম নয় ৷ গুটিকয়েক বাঙালি থাকলেও পুজোর আয়োজন হয় প্রায় সব জায়গাতেই । গ্র‍্যান্ড ক‍্যানিয়নের রাজ‍্য অ্যারিজোনার ফিনিক্স শহরে দু’টি জায়গায় দুর্গাপুজো হয়ে থাকে ৷ আয়োজক সংস্থা সংহিতা এবং বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন অফ অ্যারিজোনা ।
advertisement

পুজো উদ‍্যোক্তারা সকলেই এদেশে কর্মরত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক ও আরও নানা পেশায় নিযুক্ত বাঙালি । অংশগ্রহণ করে উচ্চশিক্ষার্থে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীরাও । বিশেষত উল্লেখ্য, এই প্রবাসে পুজোপার্বনের দিনে দূর হয়ে যায় এপার বাংলা - ওপার বাংলার ফারাক । ভারতীয় বাঙালি ছাড়াও পুজোয় যোগদান করে বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষেরাও ।

পঞ্জিকা মতে তিথি লগ্ন মেনে না হলেও সংশ্লিষ্ট জায়গার সুযোগ সুবিধে অনুযায়ী, সাধারণত শনি রবিবার দেখে পুজোর র্নিঘণ্ট নির্ধারিত হয় । ভাবছেন কী, সপ্তাহান্তে পুজো ? অফিস শেষে শুক্রবার রাত থেকেই শুরু হয় বোধন ও ষষ্ঠী । শনিবার সকাল থেকে যথাক্রমে সপ্তমী, অষ্টমী ও সন্ধিপুজো । রবিবারে নবমী ও দশমী । দু’টো সংস্থার পুজোতেই যাতে সকলে আসতে পারে সেকথা মাথায় রেখে সাধারণত পর পর দুটো উইকএন্ডে করা হয় আয়োজন ।

advertisement

জোজোর গানের তালে নাচ ৷

না, এই দেশে পূজাবার্ষিকী পত্রিকা, পুজোর কেনাকাটা, দোকানে দোকানে আগমণী সেল, কিংবা কাশের দোলা, রাস্তায় আলোকসজ্জা কোনওটাই নেই ... তবু বাঙালি মাত্রেই এই দু’দিন দেশ থেকে এনে রাখা ধুতি-পাঞ্জাবি বা শাড়ি, ভারি গয়না... ওয়ার্ডড্রোব ছেড়ে বেরোবেই । আর সাজগোজের পাশাপাশি, নিখাদ বাঙ্গালিয়ানার আরেকটি অঙ্গ পুজোর ভোগ ও খাওয়াদাওয়া । ভোগ রান্নার দায়িত্ব নেন সাধারণত পুজো কমিটি মেম্বারদের পরিবার। অনান্য এলাহি খাওয়া দাওয়ার ভার থাকে ক‍্যাটারিং সংস্থার উপর । বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন অফ অ্যারিজোনার পুজোয় অন‍্যতম আর্কষণ শুক্রবার সন্ধ্যায় আনন্দমেলা । অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা প্রত‍্যেকেই কিছু না কিছু স্টল দিয়ে থাকেন ৷ ঘুগনি, পিঠেপুলি, রোল বা চপ-সিঙ্গারা... হরেক রকম দেশি খাবারের গন্ধ কলকাতার নস্টালজিয়া জাগাবেই ৷ স্টল থেকে প্রাপ্ত অর্থ অধিকাংশ সদস‍্যই অবশ্য দান করে থাকেন পুজোর উদ্দেশ্যে । শনিবার দুপুরের মেনু শুরু হয় ফল প্রসাদ ও খইদই মাখা দিয়ে ৷ থাকে খিচুড়ি, লাবড়া তরকারি, বেগুনভাজা, চাটনি, মিষ্টি । মিষ্টি তৈরির ভিয়েন বসার মতো না হলেও পান্তুয়া, সন্দেশ তৈরির জন্য রীতিমতো বরাত দেওয়া হয় কিছু বাংলাদেশি সংস্থাকে । আর কোনও বছর কমতি পড়লে, টিনের প‍্যাকড্ রসগোল্লা তো আছেই ৷ দুপুরের খাওয়াদাওয়ায় ব‍্যুফের ব‍্যবস্থা থাকলেও, রাতে সাধারণত প‍্যাকেট সিস্টেম রাখা হয় । বিরিয়ানি, পাঁঠার মাংস, ফিস ফ্রাই আর মিষ্টি দিয়ে শনিবারের অনুষ্ঠান সমাপন । রবিবার সকাল থেকেই বিজয়ার বিষণ্ণতা । মেনুতে ষোলোআনা নির্ভেজাল বাঙালি ছোঁয়া - দুপুরে ভাত, ডাল, মাছের ঝোল আর বিকেলে লুচি আলুর দম, বোঁদে।

advertisement

সপরিবারে এখানেও মা আসেন, তবে সপ্তাহান্তে ৷

পুজোর যাবতীয় উপকরণ, দশকর্মার দ্রব‍্যাদি কিছু ভারতীয় স্টোরগুলোতে পাওয়া গেলেও, অনেক ক্ষেত্রেই পুজো কমিটির সদস্যরা যে যখন দেশে ফেরেন, দায়িত্ব ভাগ করে কিছু কিছু জিনিস তাঁরাও নিয়ে যান সাতসমুদ্র পার করে ... স্বভাবতই মায়ের পুজোর জোগাড় সম্পর্কে অনেক আগাম ভেবে রাখতে হয় তাঁদেরও । আয়োজন স্থান বিশেষে যেমনই হোক, আসল তো অন্তরের নিষ্ঠা-ভক্তি ... তাই একশো আটটা পদ্ম এদেশে না মিললেও অন্য যে কোনো একশো আটটা ফুলের ব‍্যবস্থা রাখা হয় নিবেদনের জন্য । নবপত্রিকাকে স্নান বা পুজোর অন‍ান্য কাজে পর্যাপ্ত গঙ্গা জল পাওয়াও দুষ্কর, তাই সাধারণ জলের সঙ্গে মিশিয়েই কাজ চালাতে হয়। ইন্দো-আমেরিকান কালচারাল সেন্টারের যে অডিটোরিয়ামে পুজো হয়, সেখানেও একশো আটটা প্রদীপ জ্বালাতে আগাম অনুমতি নিয়ে রাখা হয় ।

advertisement

পৌরহিত‍্যের যাবতীয় দায়িত্ব সামলান দীর্ঘদিনের প্রবাসী বয়োজ‍্যেষ্ঠ কয়েকজন বাঙালি ।

চলছে নবপত্রিকা স্নান ৷

তবে এদেশে মায়ের মূর্তি কখনোই বিসর্জন হয় না । বাংলার কুমোরটুলি থেকে সুদূর আমেরিকায় প্রতিমা আনানো অত‍্যন্ত ব‍্যয়সাপেক্ষ ও পরিশ্রমসাধ‍্য বলে, পূ্জোর পর বছরভর মায়ের মূর্তি সযত্নে রাখা থাকে স্টোরেজে । সংহিতার পুজো অপেক্ষাকৃত নতুন শুরু হলেও, বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন অফ অ্যারিজোনার সাবেকি প্রতিমা প্রায় পনেরো বছরের পুরোনো। পুজোর পর এতদিন বাক্সবন্দী রাখা থাকত এক সদস্যের বাড়ির গ‍্যারেজে । কিন্তু মরুভূমির দেশে অত‍্যধিক উষ্ণতার কথা চিন্তা করে সম্প্রতি কয়েক বছর হল মূর্তিটি রাখা হয় ক্লাইমেট কন্ট্রোলড স্টোরেজে । প্রতি বছর মায়ের নতুন নতুন মুখ না দেখা হলেও এই প্রবাসে পুরোহিত মশাইয়ের সংস্কৃত মন্ত্রোচারণ, ঢাকের বাদ‍্যি শুরু হলেই যেন গোটা পরিবেশটাই আজন্ম উৎসবপ্রিয় বাঙালির আরো একাত্ম হয়ে ওঠে।

advertisement

পুজোর দিন আলপনা দেওয়া, ফল কাটা, মালা গাঁথার কাজে হাত লাগায় ছোট থেকে বড় সকলেই ৷ অষ্টমীর অঞ্জলির ভিড়ে মিশে থাকে কোনও সদ‍্য আগত যুগলের চোখাচোখি হওয়ার মিষ্টি মুহূর্তও... ঠিক যেগুলো ছাড়া বাংলার পুজো কখনও সর্বজনিন হয়ে উঠতে পারে নাহ ৷ দর্শনার্থীদের মধ্যে মিশে থাকেন অনেক অবাঙালী ভারতীয় বা অনান্য বিদেশি মানুষেরাও ৷ কারো সহকর্মী, কারও বন্ধু বা রুমমেট, হওয়ার সূত্রে পুজো দেখতে আসেন ।

জমিয়ে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ৷

আর বাঙালীর দুর্গাপুজো মানে তো শুধু কিছু ধর্মীয় আচার পালন নয়, পুজোর প্রস্তুতি পর্বের পাশাপাশি তাই দেড়-দুমাস আগে থেকেই জোরকদমে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া । সাধারণত একটা সন্ধে তোলা থাকে কোনও আমন্ত্রিত শিল্পীর জন্যে ... গত কয়েক বছরে বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন অফ অ্যারিজোনার পক্ষ থেকে প্রথিতযশা গায়িকা জোজো (২০১৬), রূপঙ্কর (২০১৭), দোহারের (২০১৮) মতো বাংলা ব‍্যান্ডকে আনার ব‍্যবস্থা করা হয়েছিল । বাকি দু’দিন বয়স নির্বিশেষে সকলে নিজেরাই নাচ, গান, নাটক, আবৃত্তির জমজমাট পারফরমেন্সে মঞ্চ মাতিয়ে তোলে । বিশেষত যে প্রজন্ম এদেশেই জন্মাচ্ছে ও বড় হচ্ছে, বাংলায় একেবারেই অনভ্যস্ত, সেই মুখগুলোও পুজোর অনুষ্ঠান মানে বাংলাতেই কিছু না কিছু উপস্থাপনার চেষ্টা করে । সবশেষে দশমীর সিঁদুর খেলা, ঠাকুর বরণ, আর বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়ে প্রবাসী ঘরেও উৎসব শেষে চিরন্তন মনখারাপের সুর ।

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
শীতের মরশুম এলেই গৃহবধূদের উপরি রোজগার! সংসার সামলে ছুটছেন মোয়ার দোকানে
আরও দেখুন

লেখা ও ছবি: সৃজিতা সাহা

Click here to add News18 as your preferred news source on Google.
দেশের সব লেটেস্ট খবর ( National News in Bengali ) এবং বিদেশের সব খবর ( World News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ ডাউনলোড করুন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
বাংলা খবর/ খবর/বিদেশ/
মরুভূমির দেশ অ্যারিজোনায় পুজো হয় উইকএন্ডে, তবে নিষ্ঠায় কোনও ফাঁক নেই