বাংলা সিনেমা এবং বাংলা কবিতা দুই জগতেই অবাধ বিচরণ ছিল বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর। তৈরি করেছেন 'বাঘ বাহাদুর', 'লাল দরজা', 'চরাচর', 'মন্দ মেয়ের উপাখ্যান', 'কালপুরুষ', 'উত্তরা', 'স্বপ্নের দিন', 'তাহাদের কথার মত ছবি'। একদা তাহাদের কথায় যেমন এক অন্য মিঠুন চক্রবর্তীকে উপহার দিয়েছিলেন তিনি, তেমনই শেষ বয়সেও আনোয়ার কা আজিব কিসসা ছবিতে নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকিকে ব্যবহার করে চমকে দিয়েছিলেন।
advertisement
পরাধীন ভারতে ১৯৪৪ সালে পুরুলিয়ার আরায় জন্ম বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর। আমৃত্যু পুরুলিয়ার অনুষঙ্গ ফিরে এসেছে তাঁর প্রতিটি কাজে। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত পেশাগত জীবন শুরু করেন অধ্যাপক হিসেবে। অর্থনীতির তত্ত্ব আর বাস্তব জীবনের দূরত্বই তাঁকে সিনেমায় টেনে আনে। বুদ্ধদেব কলকাতা ফিল্ম সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত হন। প্রথমেই বানান একটি 10 মিনিটের তথ্যচিত্র।
পূর্ণদৈর্ঘ্যের সিনেমা হিসেবে 'দূরত্ব' তাঁকে প্রথম খ্যাতি দেয়। মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, সত্যজিৎ রায়-এই ত্রয়ী বাংলা ছবিতে যে সাংস্কৃতিক রেনেসাঁ এনেছিলেন তার যোগ্য উত্তরাধিকারী ছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। অন্তত ১১টি ছবিরর জন্য নানা সময়ে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। লোকার্নো, কান, বার্লিনের মতো নামজাদা আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালে তাঁর ছবি প্রশংসিত হয়েছে। বাঙালি তাঁকে মনে রাখবে কমলকুমার মজুমদারের গল্প অবলম্বনে 'নিম অন্নপূর্ণা' বা 'তাহাদের কথা'-র মতো কালজয়ী ছবির জন্য।
বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন মামা সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত কাছে। অন্তর্জলী নামে একটি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনাও একসময় শুরু করেছিলেন তিনি। কৃত্তিবাস গোষ্ঠীর সঙ্গে সখ্য ছিল তাঁর। কবি ভাস্কর চক্রবর্তী, সামশের আনোয়াররা ছিলেন তাঁর আত্মার আত্মীয়। বন্ধু ফালগুণী রায়ের লেখা কবিতা আউরাতেন, "মানুষ বেঁচে থাকে, মানুষ মরে যায়/ কাহার তাহাতে ক্ষতি? কিই বা ক্ষতি হয়? আমার শুধু বুকে গোপনে জ্বর বাড়ে. মানুষ বেঁচে থাকে মানুষ মরে যায়।" তাঁর অগণিত ভক্তের কাছে ফিরে ফিরে আসছে এই কবিতা।