মাঝখানের বছরগুলো দিয়ে অবশ্য বয়ে গিয়েছে অনেক জল। বকুল থেকে বেরিয়ে কাদম্বিনী হয়েছেন ঊষসী। পেয়েছেন জি বাংলা সোনার সংসারের সেরা নায়িকার পুরস্কার। ডেব্যু করেছেন ওয়েব প্ল্যাটফর্মেও। আগামী দিনে কোন ভূমিকায় দেখা যাবে তাঁকে? কেরিয়ার থেকে জীবন। প্যানডেমিক থেকে প্ল্যানিং ঊষসীর ((Ushasi Ray) সঙ্গে নিউজ 18 এর আড্ডায় উঠে এল এমনই অনেক গল্প।
advertisement
'ক্যালক্যাটা টাইমস্ মোস্ট ডিসায়ারেবল টিভি উওম্যান ২০২০'! কেমন লাগছে?
উত্তর : আমি আপ্লুত! আমার স্বপ্নের মত লেগেছে। ২০১৯ এ জি বাংলা সোনার সংসারের সেরা নায়িকার সম্মান পেয়ে যেমন লেগেছিল। মনে হযেছিল অনেক বড় কিছু করে ফেলেছি। ভীষণ 'স্পেশাল' মনে হয়েছিল। ঠিক তেমনই লাগছিল এই সম্মান পেয়ে। আমি সত্যি আশা করিনি। যেদিন খবরটা বেড়িয়েছিল এতো ফোন কল আর মেসেজ পেয়েছি! এত মানুষের শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন পেয়েছি... যেটা আমার প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। মানুষের ভালোবাসা ও আশীর্বাদ পেয়ে আমি সত্যি ধন্য।বাংলার দর্শকের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই।
এই মুহূর্তে কাজ নিয়ে কী চলছে? 'মিলন তিথি'তে যাত্রা শুরু করে, 'বকুল কথা' হয়ে 'কাদম্বিনী'। ছোট পর্দায় দাগ কেটে আগামী দিনে কি ওয়েবেই আরও বেশি দেখা যাবে ঊষসীকে? নাকি বড় পর্দাতে এবার আত্মপ্রকাশের পালা?
উত্তর : আসলে একটা পছন্দের চরিত্র থেকে বেরিয়ে আরেকটা চরিত্রে ঢুকে পড়াটা আমাদের কাছে যতটা সহজ হয় দর্শকদের কাছে নেওয়াটা কিন্তু ততটা সহজ হয় না। তাঁদের মনে পুরনো ভাল লেগে যাওয়া চরিত্রটার ইমেজ থেকে যায় বেশ কিছুদিন। তাই কোনও নতুন চরিত্রে নতুন ভাবে আসার জন্য একটু 'গ্যাপ' বা 'বিরতি' থাকা বোধহয় দর্শকদের জন্য ভাল। যেমন বকুল কথা শেষ হওয়ার পরের দিনই আমার কাদম্বিনীর প্রোমো এসে গিয়েছিল। কিন্তু লক ডাউনের জন্য টেলিভিশনের পর্দায় আসতে আরও তিন মাস দেরি হয়েছিল কাদম্বিনীর। তাতে অনেকের অনেক অসুবিধা হয়েছিল। আমার কিন্তু সুবিধে হয়েছিল। ওই 'গ্যাপ'টা। এবারও সেরকমই একটা গ্যাপ হয়ত চলছে। খুব শিগগিরই আবারও ফিরছি, এটুকু কথা রইল দর্শকদের কাছে।
কলকাতাতেই পড়াশোনা, বড় হওয়া। কিন্তু জন্ম কৃষ্ণনগর। এই কৃষ্ণনগর লিঙ্কটা একটু বলো...
উত্তর : আসলে আমার মামাবাড়ি ওখানে। ঘূর্ণিতে। আমি জন্মেছি ও ওই শহরে। তাই হয়ত শহরটার উপর অদ্ভুত একটা টান। মামাবাড়ির প্রতিও। মা ওখানকার হোলি ফ্যামিলি স্কুলে পড়েছেন। ওখানকার কলেজেও। তারপরে কলকাতায়। আমার স্কুল কলেজ কলকাতা হলেও বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ওখানে যাওয়া মাস্ট! প্রতি বছর জগদ্ধাত্রী পুজোয় কৃষ্ণনগর আমায় যেতেই হবে! না হলে মোটেই শান্তি পাই না। এই বছরও গিয়েছি।
ছোটোবেলাতে তুমিও কী বকুলের মত 'টমবয়' ছিলে? পড়াশোনা ছাড়া আর কী নিয়ে সময় কাটাতে?
উত্তর : আমি ক্লাস থ্রি থেকে অভিনয় শিখতে শুরু করি। সেই সময় মা-বাবা গান-নাচ-আঁকা সবেতেই দিয়েছিলেন। যেন দেখতে চাইছিলেন আমার কোনটা ভাল লাগে। কিন্তু আমি শুরু থেকেই গ্রুপ থিয়েটারটাই ভালবাসি। সেই সময় আমার অন্য সব কিছুতে আমি শুধু এক্সকিউজ দিতে থাকতাম। পড়াশোনা, গান, নাচ সবেতেই ফাঁকি দিতাম এই থিয়েটার ক্লাসে যাওয়ার জন্য। এতটাই ভাল লাগত গ্ৰুপ অ্যাক্টিভিটি আর অভিনয়ের অ-আ-ক-খ শেখার সেই সময়গুলো। মা-বাবাও বুঝতে পেরেছিলেন বোধহয় আমি কী ভালোবাসি।
এই প্যান্ডেমিক বা অতিমারি সবাইকেই কিছুটা বদলে দিচ্ছে। তোমার নিজের মধ্যে কী কোনও বদল চোখে পড়ল?
উত্তর : সে তো অবশ্যই। আমি আগে খুব লং ড্রাইভে যেতে ভালবাসতাম। বন্ধু-বান্ধবের আড্ডা, পার্টি এগুলো লেগেই থাকত। এখন সেটা পুরো বদলে গিয়েছে। বাড়িতে থাকতে থাকতে যেন বাড়ির এই 'কমফোর্ট জোন'-টাকেই ভালোবেসে ফেলেছি। এখন কোনও কাজে বেরোতে হলে মনে হয় কখন বাড়ি ফিরব। এমনকী খুব কাছের বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আড্ডা দিতে চাইলেও বেশির ভাগ সময় ওদের বাড়িতে ডেকে নিই। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড গার্গীর বাড়িতেও যাই বা ও আসে আমার বাড়ি। কিন্তু বাইরে বেশিক্ষণ থাকতে আমার আর ভাল লাগে না। এটা এই লম্বা সময় বাড়িতে থাকার ফলেই হয়েছে বলে মনে হয়।
বন্ধুদের কথায় মনে পড়ল। জীবনের কোনও বিশেষ বন্ধু যাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা। কিংবা আগামী দিনে একসঙ্গে পথ চলার প্ল্যান? এমন কেউ কী এল জীবনে?
উত্তর : (হাসতে হাসতে ঊষসীর চটপট উত্তর) হ্যাঁ। অবশ্যই। আর সেটা আমার কাজ। আমার কেরিয়ার। তার সঙ্গেই ডেটিং করছি। অনেক স্বপ্ন দেখছি। অনেক স্বপ্নের সফল হওয়া বাকি। তাই এই মুহূর্তে কাজ ছাড়া অন্য কোনও দিকে মন দিতে চাই না। কাজের প্রেমেই ডুবে থাকতে চাই আগামী কয়েকটা বছর।