কিন্তু হঠাৎই রেখা থমকালেন। থমকালেন দীর্ঘদেহি এক মানুষের সামনে। Bioএই মানুষটাকেও ইন্ড্রাস্ট্রিতে লড়াই করেই আসতে হয়েছিল। ফিল্মি পথের মোড়ে হঠাৎই দেখা দু-জনের। নমক হারাম ছবিতে। সেটে বন্ধুত্ব যেমন হয় আর কী? গহন গভীর চোখ সেদিন ওই চোখে কে কার সর্বনাশ দেখেছিল কে জানে ?
তারপর জানেমন ও দো আনজানে। অমিতাভের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ক্রমশ গাঢ় হল। কিন্তু এ কি, সেটে ডায়লগ বলার সময় তাঁর সামনে দাঁড়িযে গলা কেঁপে যাচ্ছে কেন? কেন-ই বা কাঁপ ধরছে বুকের মধ্যে।
advertisement
এ এক অন্য ছবির স্ক্রিপ্ট, যা কোউ কোনওদিন লিখতে পারবে না। যার কোনও পরিচালক নেই। নেই বাঁধাধরা কোনও সংলাপ। একে অপরের প্রতি অমোঘ আকর্ষণে বাঁধা। সেই টানে দু-জনেই ভেসে গেলেন। ব্যারিটোন কণ্ঠের ছোঁয়া তখন রেখার মনে, প্রাণে। জীবন বড় নিষ্ঠুর। যে সময় শুধু ঠকতেই ভাল লাগে। অমিতাভের প্রেমে পাগল হলেন রেখা। রেখার অপার সৌন্দর্য আর আবেদনের পরতে পরতে জড়িয়ে অমিতাভও।
শুরু হল ফিসফাস। মুম্বইয়ের আকাশে বাতাসে জোর গুজব। রেখা-অমিতাভের জুটি নিয়ে। এরপরেই ঘটল ঘটনাটা। সালটা উনিশশো আশি। ঋষি কাপুর আর নীতু সিংয়ের বিয়ের আসর। বলিউডের সব হুজ হুরা হাজির। বিয়ের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত অমিতাভও এসেছেন স্ত্রী জয়াকে নিয়ে। হঠাৎ আসরে ধূমকেতুর মত আবির্ভাব রেখার। সবার চোখ আটকে গেল তাঁর দিকেই। কপালে সিঁদুর গলায় মঙ্গলসুত্র। সঙ্গে মানানসই সাজ। তিনি বিবাহিত নন, তবু তিনি সালঙ্কারা স্ত্রীর বেশে। ব্যাপারটা চোখ এড়ায়নি অমিতাভ জায়ারও। বিয়ের আসরে বেশিক্ষণ অবশ্য থাকেননি রেখা। চলে যাওয়ার পরেও থেকে গিয়েছিল রেখার আকস্মিক প্রবেশের রেশ।
রেখার ঢোকাটা অনেকটা বিদ্যুৎ চমকের মতো ছিল। সকলেই চমকে গিয়েছিলেন রেখার এই সিঁদুর আর মঙ্গলসুত্র দেখে। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত জয়া বচ্চন ও অমিতাভও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
রেখা পরে অবশ্য সাফাই দিয়েছিলেন। একটি শুটিংয়ের সেট থেকেই নাকি সটান হাজির হয়েছিলেন ঋষি-নীতুর বিয়ের আসরে। সিঁদুর আর মঙ্গলসুত্রের কথা মনে ছিল না। নিন্দুকেরা অবশ্য অন্য কথা বলে।
অমিতাভের জীবনে তখন রেখার ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। বচ্চন পরিবারে অশান্তির কালো মেঘ। স্বামীর এই পরকীয়া মেনে নিতে পারছিলেন মিসেস বচ্চন। কেউ কেউ বলেন, মুকাদ্দর কা সিকন্দর ছবিতে অমিতাভ-রেখার রোমান্স দেখে কেঁদেও ফেলেছিলেন জয়া।
সম্পর্কের টানাপোড়েনে জেরবার এই তিনজনকে এক ফ্রেমে নিয়ে সিনেমা? সেইসময় অসাধ্যসাধন করেছিলেন যশ চোপড়া। অমিতাভ,রেখা আর জয়াকে রাজি করিয়ে ফেললেন সিলসিলা ছবির জন্যে। ১৯৮১ সালে সিলসিলায় এই তিনজনের জীবনই যেন উঠে এল রুপোলি পর্দায়। সুপার ডুপার হিট হল সিলসিলা।
ইয়ে কঁহা আ গ্যায়ে হাম... আসমুদ্র হিমাচল তখন উত্তাল এই ছবি নিয়ে। সেই শুরু সেই শেষ। রেখার জীবন থেকে ধীরে ধীরে মুছে গেল একটা নাম। অমিতাভ বচ্চন।