#মুম্বই: ছোট্ট মেয়ের কখনও হাসিমুখ, কখনও গাল গড়িয়ে অশ্রুর দাগ। অভিনয় দিয়ে সবার মনে দীর্ঘস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছিল সেই নিষ্পাপ মুখ। বেবি গুড্ডু। এ ছিল তার পোশাকি নাম, কিন্তু এ নাম দিয়েই সে জয় করে নিয়েছিল তামাম মানুষের দিল। এক-একটি ছবিতে এমন দাগ কাটার মতো অভিনয় ছিল যে, পোস্টারের নায়ক নায়িকা নয়, বেবি গুড্ডুর অভিনয় দেখতে জড়ো হত সিনেমাহলে সবাই।
advertisement
বেবি গুড্ডুকে ভালবাসতেন জয়া প্রদা, মিঠুন চক্রবর্তী থেকে রাজেশ খন্না। রাজেশের এমন প্রিয়পাত্রী ছিল বেবি যে, রাজেশ একটি টেলিফিল্ম বানিয়েছিলেন। বেবি গুড্ডুর জীবন আধারিত।
ছবির জগতে এসেছিলেন তিন বছর বয়সে। গুটি গুটি পায়ে। শাহিন্দা বেগ। মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সহপরিচালক এম এম বেগের কন্যা তিনি। বাবার উৎসাহে ছোট্ট বয়সে অভিনয়ে আসা। 1985 সালে পাপ পুণ্য ছবিতে তার অভিষেক । প্রথম ছবি থেকেই মিষ্টি মেয়েটা সবার পছন্দের হয়ে উঠেছিল। ঘর ঘর কি কপালি, পরিবার, আজ কা অর্জুন, নাগিনা, অউলাদ, সমুদ্র ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে সবার ফেভারিট হয়ে উঠেছিল। যে-কোনও ছবিতে শিশুশিল্পীর প্রয়োজন হলে আগে ডাক পড়ত তার।
টুথপেস্ট ও কোল্ড ড্রিঙ্কের বিজ্ঞাপনে তার অভিনয় রাতারাতি বিখ্যাত করে দিয়েছিল শুধু নয় অনেক বাবা মায়েরা ভাবতে শুরু করেছিলেন কচিকাঁচাদের ছবির জগতে আনার কথা।
কিন্তু 1991 সালের পর থেকে আর তাকে দেখা যায়নি ছবির দুনিয়ায়। বলিউড থেকে বেবি গুড্ডু চিরতরে বিদায় নিয়েছিল। এমনকি যোগাযোগ রাখেনি কারওর সঙ্গে। কী এমন ঘটল যে এই সিদ্ধান্ত নিতে হল? হারিয়ে যেতে হল ঝাঁ চকচকে দুনিয়া থেকে।
তার খবর জানতে চাইলে বেগ পরিবারও বিশেষ কিছু বলতে চাননি। বাবা বলেছিলেন দীর্ঘ দিন শুটিংয়ে থাকার জন্য পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছিল। ফ্লোর থেকে বাড়ি ফিরে বেচারা এত ক্লান্ত থাকত যে পড়াশোনা করার এনার্জি পেত না ছোট্ট মেয়েটি। তাই এই সিদ্ধান্ত।
কিন্তু অনেক শিশুশিল্পীই তো পরবর্তীতে ফিরে এসেছেন নায়িকা হয়ে অভিনয়ের চেষ্টা করেছেন। বেবি গুড্ডুর ক্ষেত্রে সেটাও হল না কেন?
বলিউড থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেও, এক বলিউড তারকাই আবিষ্কার করেন তাঁকে। এমিরেটস এয়ারলাইন্স ফ্লাইটে দুবাই থেকে ফেরার সময়ে দেখা হয় এক ফর্সা অপূর্ব সুন্দরী এয়ারহস্টেসের সঙ্গে। সেই তারকাও এককালে বেবি গুড্ডুর বাবা হিসেবে অভিনয় করেছিলেন। চিনতে পারার পর উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন তিনি। আসলে ছোট্ট বেবি গুড্ডুর কাছে, রঙিন দুনিয়ার হাতছানি নয়, দূর আকাশে ওড়ার বাসনা ছিল তীব্র। মা-বাবাও সেটা বুঝতে পেরে আর জোর করেননি তাকে। স্কুলজীবন শেষ করে এয়ার হস্টেস ট্রেনিং নিয়েছিল সে।
চল্লিশোর্ধ শাহিন্দা এখন এমিরেটস সংস্থার উচ্চপদে কর্মরত। দুবাইতে স্থায়ী বসবাস করেন তিনি। বিয়ে করে দুই সন্তানের মা হয়েছেন তিনি। সম্পূর্ণ অন্য জগতের বাসিন্দা আজ।
সেই বেবি গুড্ডু এখন টিভির পুরনো ছায়াছবির বাসিন্দা হয়ে আছে। আছে ডিভিডি, ইউটিউবেও। আজ অনেক বছর বাদে, দুটি একই মেয়ের জীবনের মধ্যে যোজন যোজন ফারাক। বিস্তর ব্যবধান।
