প্রশ্ন- প্রথমেই জানতে চাইবো, ঋতুদির (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) নিজের এতো কাজ, আপনিও আপনার জগতে চরম ব্যস্ত। বাচ্চারা আপনার সঙ্গে সিঙ্গাপুরেই থাকে। ওদের মন বোঝার সময় পান?
পাই যে বলবো না। সময় করে নিতে হয়। সব কিছুর মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখাটাই আসল। ওটাই চেষ্টা করি।
প্রশ্ন- যখন সময় দিতে পারেন না, ওদেরর বোঝান কী করে?
advertisement
আমি রিশোনা বা অঙ্কনের সঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করি। ওদের নিয়ে সাইকলিং করতে যাই। আর কী জানেন তো, বড়দের
চেয়ে বাচ্চারা অনেক বেশি মানিয়ে নিতে পারে। আশপাশ যেমন, তেমনটা করে চলতে জানে। তবে আমি ওদের প্রত্যাশা রাখার
চেষ্টা করি। হতাশ করি না।
প্রশ্ন- সেটা কেমন?
ওদের যদি আগে কিছু কথা দিয়ে থাকি, সেটা রাখার চেষ্টা করি। যদি বলি কাল সাইকেলের সিট কিনতে যাবো। কিংবা মেয়ের
ঘরের জন্য এলইডি লাইট কিনতে যাব। যতোই ব্যস্ততা থাকুক, দিনের দিন সেই পরিকল্পনা, বাতিল করি না। সেটা করলে বাচ্চারা
খুব কষ্ট পায়। বা উল্টোটাও হতে পারে। ছেলে-মেয়ে কিছুর জন্য খুব বায়না করছে, কিন্তু সেদিন কাজের চাপ রয়েছে। ওদের
মিথ্যে আশা দিই না। বরং বুঝিয়ে বলি। ওরা কিন্তু বোঝে। ওদের বলি, আজ আমার মিটিং রয়েছে। কাল আমরা ঠিক এই
জিনিসটা করবো। ওরা হাসিমুখে বলে, ‘ঠিক আছে’। আর একটা কথা জানেন, বাচ্চারা কিন্তু কিছু ভোলে না।
প্রশ্ন- সেটা তো ঠিকই, আপনি কি ছেলে-মেয়েকে বকাবকি করেন?
আমার ছেলে অঙ্কনের সারাক্ষণ মায়ের (ঋতুপর্ণা) সঙ্গে ঝগড়া লেগেই থাকে। প্রতি নিয়ত, মান-অভিমান চলে। তবে আমি বকার
চেয়েও আলোচনা করায় বিশ্বাসী। আমি ওদের সঙ্গে প্রচুর কথা বলি। অঙ্কন ও রিশোনার বয়েসের অনেকটা ফারাক রয়েছে। অঙ্কনের
সঙ্গে ওর মতো করে কথা বলি। রিশোনার সঙ্গে আবার ধরনটা একেবারে ভিন্ন। বকি না তেমন। তবে অঙ্কনের ক্লাস ইলেভেন,
টুয়েলভ-এর সময়কার কথা। কাজের জন্য বাইরে থেকেও, ওকে স্কাইপে অঙ্ক করিয়েছি। বাবা হিসেবে ওদের সবসময় পাশে থাকার
চেষ্টা করি। এই তো আপনার সঙ্গে কথা বলছি, ছেলে এসে জিজ্ঞেস যে, করছে আরও কতক্ষণ লাগবে? ও আমার সঙ্গে ওয়ার্ক
আউট করবে। আপাতত এটাই দাবি।
প্রশ্ন- এই যে বললেন, অঙ্কন ও রিশোনার ক্ষেত্রে ব্যবহারটা এক নয়, একটু ভেঙে বলুন।
বাচ্চাদের ভালোর জন্য আমাকে নানা পালকের টুপি পরতে হয়। আমার ছেলের এখন ১৬, ১৭ বছর বয়স। বুঝতেই পারেন,
বয়ঃসন্ধিকালের বাচ্চারা কেমন হয়। ছোটও নয়, আবার বড়ও নয়। ওকে কিছু বোঝাতে গেলে, যুক্তি দিয়ে সেটা প্রমাণ করতে হয়।
মেয়ের ক্ষেত্রে পুরোটাই উল্টো। ওকে আবদার করে যদি বলি প্লিজ এটা করো না, ও হাসি মুখে মেনে নেয়। তবে বয়সের তফাত
যাই হোক না কেন, ওরা সারাক্ষণ মারপিঠ করে। এই ঝগড়া, এই গলায় গলায় বন্ধুত্ব।
প্রশ্ন- বাবা না মা, ছেলে-মেয়ের ভাল বন্ধু কে?
ওরা প্রচণ্ড বুদ্ধিমান। যেটা জানে মা কোনও ভাবেই মেনে নেবেন না, সেটার জন্য বাবার কাছে। আর যেটা জানে বাবা কিছুতেই
রাজি হবেন না, সেটার জন্য মায়ের সাহায্য প্রার্থী হয়। আমার আপনার চেয়ে বুদ্ধি বেশি।
প্রশ্ন- বাবা-মেয়ের সম্পর্ক তো খুব আদরের। আপনি কি মেয়ের প্রতি একটু বেশি দুর্বল?
এই অপবাদ আমার ছেলে আমাকে দেয়। ও বলে ‘একই ভুল কাজ যদি আমি করি, আর বোন করে, তাহলে আমি মার খেয়ে
যাবো। বোনকে তুমি কিছুই বলবে না।’ অঙ্কন খানিক ঠিক এই ব্যাপারে। রিশোনাকে কড়া করে কিছু বলবো, সেটা ভাবতেই পারি
না।
প্রশ্ন- আপনার স্ত্রীর জগৎ সম্পূর্ণ আলাদা, বাচ্চাদের বড় করতে কখনও অসুবিধা হয়নি?
দেখুন এটা না একটা প্রক্রিয়া। যতো দিন যাচ্ছে, আমরাও বুঝতে পারছি, কীভাবে আরও ভাল অবিভাবক হওয়া সম্ভব। ঋতুর
(ঋতুপর্ণা) মা, আমার মা, দুই মায়ের সাহায্য না পেলে, বাচ্চাদের বড়ো করতে পারতাম না। ঋতুর যখন শ্যুটিং থাকে, আমার
মা সিঙ্গাপুরে এসে থাকেন। নাতি-নাতনিকে নজরে রাখেন। ঋতুও প্রচণ্ড চেষ্টা করে। নিজের শ্যুটিং গুলো ওভাবেই রাখে, যাতে
বাচ্চাদের সময় দিতে পারে। মা হিসেবে সমস্ত কর্তব্য পালন করার চেষ্টা করে। পুরো জিনিসটা করতে ওঁর কষ্ট হয়, সেটা আমি
বুঝি। আসলে আমি একেবারেই নিজের মতো থাকি। খুব একটা মিশুকে নই। লকচারিতা পুরোটাই ঋতু করে।
প্রশ্ন- আচ্ছা আমরা ঋতুদির (ঋতুপর্ণা) সময় জ্ঞান নিয়ে ঠাট্টা করে থাকি। ব্যক্তিগত ক্ষেত্রেও কি সব সময় দেরি করেন?
শেষবার ও বোধহয় আমাদের বিয়ের দিন সময়ে এসেছিলো (হো হো করে হেসে উঠলেন)। এরপর আর কোনও দিনের কথা মনে
পড়ে না। ওঁ মনে করে কৃষ্ণ ঠাকুরের মতো, এক সময়ে তিন জায়গায় থাকা সম্ভব। আমি আবার সবকিছু ঘড়ি ধরে করি। এক্ষেত্রে
আমাদের কোনও মিল নেই। তবে ভারতের বাইরে ঋতু মোটামুটি সময় অনুযায়ী কাজ করে।
প্রশ্ন- কথায় আছে না, বিপরীত মানুষরাই একসঙ্গে ভাল থাকেন। আচ্ছা বাচ্চারা, মা না বাবা, কাকে ভয় পায়?
ওরা একমাত্র বাবাকেই ভয় পায়। মায়র সঙ্গে মতবিরোধ হয়। তবে মাকে, ওই চালু ভাষায় ম্যানেজ করে নেয়।
প্রশ্ন- ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট স্বপ্ন রয়েছে আপনার?
দেখুন আমি তেমন করে ভাবি না। আমার বাবা-মা দু’জনই ডাক্তার ছিলেন। আমি পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। কোনও কিছু চাপিয়ে
দেওয়া উচিত নয়। তবে আমার একটাই দাবি, যেটা করবে সেটাই সেরা হবে। মধ্য মেধার কোনও জায়গা নেই। ছবি আঁকলে
সবচেয়ে ভাল ছবি আঁকো। খেলোয়ার হলে, অলিম্পিকে স্বর্ণ পদক নিয়ে আসো। আমি ঋতুকেও (ঋতুপর্ণা) সেটাই বলি।