ছত্রপতি শিবাজির বীর সৈনিক, সুবেদার তানাজি মলুসারে। শিবাজি মহারাজের ডান হাত বললেও চলে। মারাঠা সামরাজ্যের জয় গাঁথা। বিশেষ করে শিবাজির গুণগান রয়েছে ছবিতে। বার বার উঠে আসে স্বরাজের প্রসঙ্গ। যেটা দেশাত্মবোধকে ঘা দেয়। মুঘল সাম্রাজ্যের হাত থেকে কোন্ধানা কেল্লা ছিনিয়ে নেয় মারাঠা সৈন্যরা। তাঁদের নেতৃত্ব দেন তানাজি। মারাঠারা দেশের জন্য প্রাণ দিতে পারে। মুঘল বহিরাগত। মারাঠার শত্রু মুঘল। ভাল জয় মন্দের পরাজয়। এইটুকু মাথায় রেখে ছবিটা দেখতে হবে।
advertisement
ইতিহাসের খুঁটিনাটি জানবেন ভেবে ছবি দেখলে হতাশ হবেন। বরং অ্যাকশন, পিরিয়ড-ওয়ার ছবি দেখতে যাচ্ছেন ভেবে যদি দেখেন, ভাল লাগবে।
তানাজি হিসেবে অজয় দেবগণ বিশ্বাসযোগ্য। পাতাল কাঁপানো সংলাপ, যা এমনিতে অসম্ভব মনে হলেও তাঁর গলায় মানিয়ে যায়। দেশাত্মবোধক ভাব জাগিয়ে তুলতে সফল অজয়। অজয় ট্রু সেন্সে মর্দ মারাঠা। তবে এই ছবির সারপ্রাইজ প্যাকেজ সইফ আলি খান। মুঘল সাম্রাজ্যের রাজপুত সেনাপতি উদয় ভান রাঠোরের ভূমিকায় সইফ। ট্রেলর দেখে আপনার উদয় ভান এবং খিলজিকে একই থান থেকে কাটা মনে হতে পারে, তবে সেটা ঠিক নয়। উদয় ভান নিষ্ঠুর, মানুষ মারা তাঁর কাছে কোনও ব্যাপার নয়। সইফ একটা অদ্ভুত স্মার্টনেস নিয়ে এসেছেন উদয় ভানের চরিত্রে। সেন্স অফ হিউমার রয়েছে উদয় ভানের। কস্টিউম থেকে শরীরী ভাষা, সইফ এই চরিত্রে যেটা এনেছেন, সেটা অনবদ্য। তাঁকে এক কথায় বলা যায়, এলিগেন্ট খারাপ লোক। তানাজির স্ত্রী সাবিত্রীর চরিত্রে কাজল। ‘তানাজি’-তে তাঁর স্ক্রিন প্রেজেন্স খুব স্বল্প।
অজয়ের সঙ্গে তাঁর দৃশ্যগুলো পর্দায় ম্যাজিক সৃষ্টি করেছে। তাঁদের রিয়ালের ইনস্ট্যান্ট কেমিস্ট্রি পর্দায় রিফলেক্ট করছে। ছবির কাস্টিং দুর্দান্ত। শরদ কালেকারকে ছত্রপতি শিবাজি হিসেবে এমন মানিয়েছে, যে অন্য কাউকে এই চরিত্রে আর ভাবাই যায় না। লুক কেনি আওরঙ্গজেব হিসেবে দারুণ।
বলিউডের পরিচালকদের বিগত বেশ কিছু বছর ধরে ইতিহাস পছন্দের বিষয় হয়ে উঠেছে। সঞ্জয় লীলা বনশালী, আশুতোষ গোয়ারিকরদের সঙ্গে যোগ হল ওম রাউতের নাম। বহু শতাব্দী আগের ইতিহাসের গল্প আজকের দিনের জন্য গ্রহণযোগ্য করে তোলার পথ খুঁজে পেয়েছেন ওম এবং অজয়। অসাধারণ সিনেমেটোগ্রাফি, ব্র্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, সেট, কস্টিউম সব কিছু দেখে বোঝা যায় এই ছবি সময় নিয়ে, যত্ন নিয়ে করা। থ্রিডি-তে হওয়ায় ছবিটি দেখতে আরও ভাল লাগবে। ওয়ার সিক্যুয়েন্স গুলো অনবদ্য। মাঝে-মধ্যে মনে হতে পারে আপনি ভিডিও গেম খেলছেন। ছবি দেখে ‘বাহুবলী’র এমনকী সারজিক্যাল স্ট্রাইকের কথাও মনে পড়ে যেতে পারে। কিন্তু সব কিছু সুন্দর ভাবে একটা সুতোয় গাঁথা।
বীর গাঁথা, দারুণ যুদ্ধ, স্মার্ট ফিল্ম মেকিং রয়েছে। তবে দেশাত্মবোধ ছাড়া কোনও আবেগ নেই। যোদ্ধা ছাড়া মানুষ হিসেবে এঁরা কেমন তা জানার উপায় নেই ছবিতে।‘ তানাজি’ একটা ওয়েল মেড ওয়ার ছবি যাতে ভাল অভিনয় থাকলেও, পুরোটাই মেলোড্রামা ঘরানার। ‘পানিপথ’-এর চেয়ে ঢের গুণ ভাল। একবার দেখে আসতে পারেন, মন্দ লাগবে না।