বিজেপি-র অভিযোগ, টালিগঞ্জে নাকি তৃণমূল না হলে কাজ পাওয়া যায় না...
এটা অনেকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যাঁরা এই অভিযোগ আনেন, ভুল বলেন না। এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে। সে বিষয়ে আমি জানিও। তবে, আমি ভাগ্যবান, আমায় কোনও রাজনৈতিক বিদ্বেষের শিকার হতে হয়নি। এবার, কেন হয়নি? সেটা আমি জানি না। হয়তো আমি ফরচুনেট!
advertisement
এত বছর বাদে ফেরা! হঠাৎ 'মেয়েবেলা' সিরিয়ালটার জন্যই 'হ্যাঁ' বললেন কেন?
অনেকদিন ধরেই একাধিক কাজের কথা চলছিল। অনেক ছবির চিত্রনাট্যও শুনছিলাম। তারমধ্যে, এই সিরিয়ালের নির্মাতারা অনেক মাস ধরে আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন। আমার কাছে কমিটমেন্ট বরবারই খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, আমার ইচ্ছে ছিল টেলিভিশন দিয়েই অভিনয়ে ফিরব।
শুধুই কমিটমেন্ট? কোথাও তো 'বীথি' চরিত্রটা আপনাকে নাড়া দিয়েছিল...
সে তো বটেই! আমার ছোটবেলার সঙ্গে 'বীথি'-র কিছু-কিছু মিল আছে ঠিকই, তবে আমি যে 'বীথি'-কে নিজের প্রতিবিম্ব হিসেবে দেখি, তা নয়! আমার চলন-বলন চিরকালই খুব দৃপ্ত, দৃঢ়! 'বীথি'-র অনেক সহ্যক্ষমতা!
আর আপনার?
আমি খুব রাগি। অনেক কিছু বলে ফেলতে পারি। ফটফট। মুখের উপর। 'বীথি' অনেক সমঝে চলা মানুষ।
শেষ কবে খুব রাগ করেছেন?
আমি মাঝেমধ্যেই রেগে যাই। এই যে রাস্তায় দেখি বাইকগুলো একধারে দাঁড় না করিয়ে মাঝরাস্তায় রেখে দেয়। আমার খুব রাগ হয়। আমার বাড়ির সামনে একটা স্কুল আছে। যখন ওই পাড়ায় বাড়ি কিনেছিলাম, তখন সেটি ছিল ছোট একটা স্কুল। গত ২৫ বছর ধরে ওই পাড়ায় থাকি। আগে একটা শান্ত পরিবেশ ছিল। কিন্তু এখন আর নিয়মগুলো মানা হয় না। ওরা বোঝে না এখানে অন্য মানুষজনও থাকেন। তাদের একটা ডেড-এন্ড থেকে বের হতে হয়। মানুষের বিপদ-আপদ থাকে। তাড়া থাকে। এগুলো দেখে আমার খুব রাগ হয়। ফুটপাত থাকতেও মানুষে রাস্তায় দাঁড়িয়েই কথা বলে যাচ্ছে। আমার খুব রাগ হয়।
অভিনয়ে ফেরার সিদ্ধান্তটা নিলেন কেন?
অনেক বছর ধরেই বন্ধুরা বলছিল অভিনয়ে ফেরার কথা। তাই ভাবলাম, এখন যখন সময় আছে, ফিরি। যতদিন পারব, যতদিন ইচ্ছে করবে, করব। আসলে আমি যখন রাজনীতিতে যাই, জগৎটা আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন ছিল। কিছু জানতাম না। সবটা শিখতে হয়েছে। প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়েছে। অনেকটা সময় দিতে হয়েছে। তবে, রাজনীতিতেও আমি সবসময় নিজের সত্ত্বা বজায় রাখি। রাজনীতির ধাঁচে নিজেকে কখনও ফেলিনি। আজও ফেলিনা।
রাজনীতি আর ধারাবাহিক... কীভাবে তাল সামলাবেন?
কঠিক নয়। খুব গোছানোভাবে আমাদের শ্যুটিং হচ্ছে। কাজ অনেকটাই এগিয়ে রেখেছি। আমার কাজ মাসে ১৫-১৮ দিন । বাকি সময়টা রাজনীতি, সংসার, পড়াশোনা...
৮ বছর বাদে যেদিন প্রথম সেট-এ ফিরলেন, তার আগের রাতে ঘুম এসেছিল?
একদম! একটা অন্যরকম উত্তেজনা হয়েছিল। শুধু মনে একটা ভাবনা ছিল, আমি তো এখন খারাপ দেখতে হয়ে গিয়েছি, ২০১৫ সালের রূপা গঙ্গোপাধ্যায় আর নেই! কেমন লাগবে ক্যামেরায়! তবে গুরুজনেরা আমায় বলতেন, ' নিজের চেহারা নিয়ে অভ্যস্থ হয়ে যাও। তাহলে দেখবে কোনও সমস্যা হবে না কোনওদিন।'
এখন তো সিরিয়ালে সপ্তাহে সপ্তাহে টিআরপি-র টার্গেট! মানিয়ে নিতে অসুবিধা হবে না?
মনে হয় হবে না! আমি এই সব বিষয়ে আগেই আলোচনা করে নিয়েছি। এইসব ছোটখাট বিষয় নিয়ে আমায় কেউ খুব একটা ঘাঁটিয়ে দিতে পারবে না।
এখনকার সিনেমা-সিরিয়াল দেখেন?
' দ্য ব্ল্যাকলিস্ট'-এর রেমন্ড রেডিংটন-কে দেখে ফেলেই গণ্ডগোল করে ফেলেছি। একমাসের মধ্যে পুরো সিরিজটা দেখে ফেলেছি। রাত ৩টের আগে ঘুমোতে পারতাম না। বলতে পারেন, এটা দেখার পরই আমার আবার অভিনয়ে ফিরতে রাজি হওয়া।
আর বাংলা?
খুব একটা আপটু ডেট নই। তবে বিশ্বাস করি, সব কাজই কঠিন এবং সবাই পরিশ্রম করে নিজের সেরাটাই দেন। দর্শকের ভাললাগা-খারাপলাগা সময়ের সঙ্গে বদলায়। আমি যখন 'এক মুঠো ছবি' বানিয়েছিলাম, সেভাবে সাড়া ফেলেনি দর্শকদের মধ্যে। নতুন একটা কনসেপ্ট ছিল। ছোট-ছোট সিনেমার কোলাজ। অথচ এখন ওটিটি-তে এরকম সিরিজের ছড়াছড়ি।
আপনি তো বলেছেন 'পাঠান' দেখবেন না ...
কত সিনেমাই তো দেখিনি আর কোনওকিছু নিয়ে বেশি মাতামাতিও পছন্দ করিনা। শাহরুখ খান খুব ভাল অভিনেতা। কিন্তু খুব ভাল অভিনেতার-ও সব সিনেমা আমায় দেখতে হবে, তার কোনও মানে নেই। তাছাড়া, সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃতুর পর, মৃত্যু তো নয়, হত্যার পর হিন্দি ইন্ডাস্ট্রির প্রতি আমার একটা অভিমান তৈরি হয়েছে। এই অভিমানটা আমায় তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। আমি একাধিক অভিনেতার ভিডিও ক্লিপ দেখেছি, যাঁরা প্রকাশ্যে সুশান্তকে হ্যাঁটা করেছিলেন। বলিউডের প্রতি এই খারাপলাগাটা এখনও রয়ে গিয়েছে।
সিনেমাটা না হয় দেখলেন না, কিন্তু 'বেশরম রং' গানটায় দীপিকা পাড়ুকোনের গেরুয়া বিকিনি নিয়ে বিজেপি নেতারা যে গেল গেল রব তুলেছেন, তা নিয়ে কী বলবেন?
আমি এই বিতর্কটি সম্পর্কে অবগত-ই নই।