প্রশ্ন- আপনার নামের মতো গানেও চমক। এই গান ছবিতেও এতটা জনপ্রিয় হবে ভেবেছিলেন?
চমক- জানি না এটা চমক কি না, আমি এই ধরনের গানই লিখি। অনেকদিন থেকেই গান নিয়ে কাজ করছি। তাই জনপ্রিয়তা শব্দটা আমার কাছে নতুন নয়। ২০২০ জানুয়ারিতে এই গানটা লিখেছিলাম। ফেব্রুয়ারিতে ইউটিউবে আপলোড করি। তখনই গানটা বেশ জনপ্রিয় হযেছিল। এরপর জিনিয়া সেন গানটা শোনেন। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপর বাকিটা তো ইতিহাস।
advertisement
আরও পড়ুন- আজ শাহিদ কাপুরের জন্মদিন, স্ত্রী মীরা রাজপুতের আদুরে উপহারে আপ্লুত নেটদুনিয়া...
প্রশ্ন- এই গান নিয়ে আপনার জনপ্রিয়তা তো মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো!
চমক- উপভোগ করছি। সেই সঙ্গে চেষ্টা করেছি পা টা মাটিতে রাখার। আমার গান এখন অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। ভাল লাগছে।
প্রশ্ন- আপনার বন্ধু , অনুরাগীরা কী বলছেন?
চমক- সবার খুব ভাল লেগেছে। আমারও খুব ভাল লাগছে যখন আমার এক বন্ধু বলছে ওর বাচ্চা আমার গান শুনে ঘুমোচ্ছে আর এক বন্ধুর বাড়িতে তার বাবা-মা আমার গান শুনছেন। সব বয়সের মানুষ আমার গান শুনছেন, তাদের ভাল লাগছে এটাই আমার পাওয়া। আমি এতেই খুশি।
প্রশ্ন- অনেকদিন আপনি গানের জগতে রয়েছেন। গান নিয়ে ট্রোলডও হয়েছেন নিশ্চয়ই। খারাপ লাগে?
চমক- দেখুন সবাইকে একসঙ্গে খুশি করা যায় না। অনেক নেগেটিভ কমেন্ট থাকে, সেখান থেকেও কিছু শেখা যায়। ট্রোলিং যদি ব্যক্তিগত হয়, কমেন্ট ডিলিট করে দিই। ব্লকও করে দিই।
প্রশ্ন- গণিতের জটিল ফর্মূলা আর রোম্যান্টিক গানের লিরিক। কম্বিনেশন তো মারাত্মক। কীভাবে ব্যালান্স করেন?
চমক- দুটোই আমার ভালবাসা। খুব প্রিয় বিষয়। এই দুটো বিষয়ের মিলন আমার কল্পনায়। আমি গণিতের যে ভিডিও বানাই বা যে গান লিখি সবটাই মনের তাগিতে। দুটোই আমার ভালবাসার রসদ। এই ভালবাসাটাই সবার সঙ্গে শেয়ার করে আমি আনন্দ পাই।
প্রশ্ন- তা হলে চমক হাসানের প্রথম ভালবাসা কী?
চমক- প্রথম ভালবাসা গান। গণিত তার পরে। গান লেখা শুরু করেছি ছোট বয়সেই। প্রথম গান লিখি ক্লাস সেভেনে।
প্রশ্ন- আপনার কার গান শুনতে ভাল লাগে?
চমক- আমি সবরকম গান শুনি। লোকগীতি আমার খুব পছন্দ। রবীন্দ্রসংগীত, নজরুল গীতি শুনি। বাংলা রক ব্যান্ডের গানও ভাল লাগে।
প্রশ্ন- আপনার ভিডিওতে ফ্যামিলিকে খুব দেখা যায়। বোঝা যায় আপনাদের দারুণ বন্ডিং।
চমক- আমার গান লেখার পিছনে আমার ফ্যামিলির ভূমিকা অনেকটাই। গান লেখার রসদ ওরাই। আমার কাছে এটা একটা ব্লেসিংস যে আমার কাজে আমার পরিবারকে আমি সঙ্গে পাই।
প্রশ্ন- আপনাদের তো লাভ ম্যারেজ। গান শুনিয়ে প্রোপোজ করেছিলেন?
চমক- ঠিক গান শোনাইনি। তবে আলাপ হয়েছিল গানের অনুষ্ঠানে। তখন আমি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি। আর বহ্ণি পড়ত আর্কিটেকচার। আমাদের ব্যাচের একটা মিউজিক্যাল অনুষ্ঠানে ওকে প্রথম দেখি। দেখেই ভাল লেগে যায়।
প্রশ্ন- লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট?
চমক- বলতে পারেন। কিন্তু আমি এতটাই লাজুক ছিলাম, সেদিন ওকে কিছু বলতে পারিনি। বলেছিলাম প্রায় সাড়ে চার বছর পর।
প্রশ্ন- কুষ্টিয়া থেকে আমেরিকা আর এখন টালিগঞ্জের একজন সফল মিউজিক ডিরেক্টর। জার্নিটা নিশ্চয়ই সহজ ছিল না?
চমক- আমার জার্নিটা অনেকটা আমার বেড়ে ওঠার মতোই।
প্রশ্ন- কীরকম? বলতে পারেন এটা আমার জীবনের ভ্রমণ কাহিনি। আমার ছোটবেলা কেটেছে বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার একটা গ্রামে। সেখান থেকে কুষ্টিয়া শহরে আসা, তারপর ঢাকায় আসা। সেখান থেকে আমেরিকা। এই প্রত্যেকটা জায়গা আমাকে একটু একটু করে পরিণত করেছে।
প্রশ্ন- টালিগঞ্জে আপনার প্রথম গানই সফল। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এই সফলতা চাপ কি একটু বাড়িয়ে দিল?
চমক- আমি কোনও চাপ নিতে চাই না। আমি মনের আনন্দে কাজ করি। সেখানে কোনও চাপ আসুক আমি সত্যিই চাই না। অবশ্যই আমার স্বপ্ন আছে। এটা এখন আমার কাছে খুব কঠিন সময়। এখন আমি যেটুকু পাচ্ছি তাতেই খুশি থাকতে চাই।
প্রশ্ন- টালিগঞ্জ থেকে ডিরেক্টরদের ফোন পাচ্ছেন?
চমক- না এখনও কোনও ফোন পাইনি।
প্রশ্ন- উইন্ডোজের আগামী ছবিতেও নিশ্চয়ই আপনার গান থাকছে?
চমক- আগামী দুটো ছবিতে আমার গান থাকার কথা। সেরকম কথাই হয়েছে।
প্রশ্ন- কী গান লিখলেন?
চমক- শুরু করেছি। আমি যেমন সহজ সরল ভাষায় গান লিখি, সেরকম গানই আমার শ্রোতাদের শোনাব। তবে এখনও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।
প্রশ্ন- আপনার ফ্যানরা পরের গান কোথায় শুনবেন, ছবিতে নাকি ইউটিউবে?
চমক- ইউটিউবে।
প্রশ্ন- কবে?
চমক- ইচ্ছে আছে ২৮ এপ্রিল। ওই দিনটা আমাদের কাছে স্বপ্নের একটা দিন। বহ্নিকে ওই দিন প্রোপোজ করেছিলাম। আমার গানটাও পরিবারকে সঙ্গে নিয়েই।
প্রশ্ন- চমক হাসানের উইশ লিস্টটা ঠিক কেমন?
চমক- কিছু চিন্তা আছে, স্বপ্ন আছে। কিছুটা ব্যক্তিগত, কিছুটা সমাজের জন্য। সত্যি কথা বলতে গান নিয়ে কখনও বড় কোনও স্বপ্ন দেখিনি। গান আমার মনের রসদ। গানের জগতে বিখ্যাত হব এমন স্বপ্নও দেখিনি। গানের কোনও অ্যালবামও করিনি। আমার স্বপ্ন গণিত নিয়ে কাজ করার। বাংলায় গণিতকে আরও সহজভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। গান নিয়ে আমি যদি কাজ নাও করি, ভাল গান তৈরি হওয়া থেমে যাবে না। সাধারণ মানুষকে গণিতকে ভালবাসতে শেখানো, গণিতকে সহজ করে তোলা এই কাজটাই আমি করতে চাই।
আরও পড়ুন- লাল বেনারসি, স্বামীর সঙ্গে আদিখ্যেতা মাখা ‘সাধের’ ছবি ভাইরাল বলি অভিনেত্রীর
প্রশ্ন- ধরুন গান নিয়ে আপনি এতটাই ব্যস্ত হয়ে গেলেন, গণিতের হাত ছাড়তে হল।
চমক- এটা আমার কাছে খুব কষ্টের হবে। আমি এটা চাই না। এটা হতেও দেব না। গান নিয়ে আমি নিজেকে এতটা ব্যস্ত রাখতে চাই না, যাতে গণিত আমার জীবন থেকে হারিয়ে যায়।
প্রশ্ন- কলকাতায় কবে আসছেন? প্রোগ্রাম করার জন্য অর্গানাইজারদের ফোন পাচ্ছেন?
চমক- আমার ভিসার একটা জটিলতার জন্য কলকাতায় আসতে পারছি না। আমার আর বহ্ণির কোলকাতায় আসার খুব ইচ্ছে। ওখানে কত মানুষ এখন আমার গান শুনছেন। এটা সামনে থেকে দেখেতে পারলে খুব ভাল লাগত। এই সমস্যাটা মিটে গেলেই আসব। প্রোগ্রামের জন্য ফোন এখনও পাইনি।