১৯৩৮-এর ১৯ মে তৎকালীন বম্বে শহরে জন্ম গিরিশের। চার ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন তিনি। তাঁর প্রাথমিক পড়াশোনা কর্নাটকে। অঙ্ক এবং সংখ্যাতত্ত্বে স্নাতক হওয়ার পর রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করেন। একসময় কাজ করতেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসে। ক্রমে চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি অভিনয় ও লেখালেখিতে যোগ দেন।
চার দশকের বেশি সময় ধরে নাট্য চর্চার সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন কারনাড। বহু নাটক লিখেছেন। ১৯৬১ সালে তাঁর বিখ্যাত নাটক ‘যাত্রী’ রাতারাতি তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায়। এরপর একে একে মঞ্চস্থ হয় 'তুঘলক', 'হায়াভাদানা'-র মতো বিখ্যাত নাটক। মরাঠি নাটকের অন্যতম কান্ডারি ছিলেন গিরিশ কারনাড । তাঁর দেখানো পথ ধরে আজও বহমান মরাঠি নাটক। হিন্দি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি ভাষায় অভিনয় করেছিলেন কারনাড । একাধিক ছবির পরিচালকও ছিলেন যার মধ্যে রয়েছে বহু কন্নড় ও মরাঠি ছবি।
advertisement
১৯৬০ থেকে কন্নড় ভাষায় লেখক হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করেন গিরীশ । ১৯৯৮ সালে সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরস্কার জ্ঞানপীঠে ভূষিত হন। পরিচালক হিসেব ১৯৭৪ সালে পেয়েছেন পদ্মশ্রী, ১৯৯২ সালে ভূষিত হয়েছেন পদ্মবিভুষণ সম্মানে। পেয়েছিলেন চারটি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডও।
১৯৭০-এ মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সংস্কার’ ছিল গিরিশের অভিনীত প্রথম ছবি। একে একে ‘নিশান্ত’ (১৯৭৫), ‘মন্থন’ (১৯৭৬), ‘স্বামী’ (১৯৭৭), ‘পুকার’ (২০০০), ‘ইকবাল’ (২০০৫)- এর মতো ছবিতে অভিনয় করেন। হাল আমলের বলিউডের ছবি 'ডোর'-এ দাপুটে শ্বশুর, কিংবা সলমন খানের সঙ্গে ২০১২-এ ‘এক থা টাইগার’ এবং ২০১৭-এ ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’-এর মতো হার্ডকোর কমার্শিয়াল ছবিতেও সমান সাবলীল কারনাড। টেলিভিশনেও ছিলেন সচ্ছন্দ । ১৯৮৬-’৮৭তে জনপ্রিয় টিভি ধারাবাহিক ‘মালগুডি ডেজ’-এ অভিনয় করেছিলেন। তাঁর প্রয়াণে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিল্পী মহলে।
ধর্ম ও জাতপাতের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন কারনাড। বারবার তাঁর নাটকে উঠে এসেছে সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরও তিনি মুখ খুলেছিলেন। তাঁর নাটকের পরতে পরতে ফুটে উঠত বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা, অবক্ষয় ও রাজনৈতিক বিষয়। সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি নিজেকে আরবান নকশাল বলে প্রতিবাদে নামেন। এর জন্য মামলাও হয় তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছিল, তিনি নকশালদের উৎসাহ যোগাচ্ছেন।