স্প্যানিশ ছবি ‘Campeons’-এর রিমেক ‘সিতারে জমিন পর’। ভারতীয় দর্শকদের জন্য এটি একটি অনন্য গল্প উপহার দিয়েছে। কিন্তু কোথাও গিয়ে এই ছবিটি সেই পর্যায় অতিক্রম করতে পারেনি, যেখানে এটি একটি দুর্ধর্ষ ছবি হয়ে উঠতে পারে। আরএস প্রসন্ন পরিচালিত এই ছবির গল্প আবর্তিত হয়েছে গুলশন নামে এক অ্যাসিস্ট্যান্ট বাস্কেটবল কোচকে ঘিরে। দিল্লির এক বাস্কেটবল টুর্নামেন্টে গিয়ে তিনি হেড কোচকে ঘুষি মেরে বসেন। আসলে ওই হেড কোচ তাঁকে ‘টিঙ্গু’ বলে ঠাট্টা করছিলেন।
advertisement
ক্রুদ্ধ গুলশন মদ্যপান করে একটি পুলিশ ভ্যানকে আঘাত করেন। এরপর তাঁর ঠাঁই হয় লক-আপ এবং পরে আদালতে তোলা হয়। এই কারণে গুলশনকে জরিমানা দিতে হয় এবং কমিউনিটি সার্ভিস শুরু করতে হয়। সেখানে তাঁকে একটি হোস্টেলের ইন্টেলেকচুয়ালি ডিজেবল কিছু মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে হয়। যাতে তাঁরা জাতীয় স্তরে বাস্কেটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারেন। সেখানেই গুলশনের আলাপ হয় সুনীল, রাজু, শর্মাজি, করিম, বান্টু, লোটাস, হরগোবিন্দ, সতবীর এবং গোলু।
আরও পড়ুন: NIRF র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের সেরার সেরা মেডিক্যাল কলেজ কোনগুলো? তালিকায় বাংলার কোন কলেজ? রইল পুরো তালিকা
এই মানুষগুলি কেউ অটিজম, ডাউন্স সিন্ড্রোম এবং ফ্র্যাজাইল এক্স সিন্ড্রোমে আক্রান্ত। কিন্তু তাঁদের জীবনের উদ্দীপনা একেবারেই কম নয়। ব্যক্তিগত দিক থেকে আবার গুলশনের দাম্পত্য জীবনে রয়েছে সমস্যা। তাঁর স্ত্রী সুনীতা সন্তান চান, কিন্তু গুলশন তা চান না। ফলে এই সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা থেকে বাঁচতে মায়ের সঙ্গেই থাকেন তিনি। এভাবেই এগোতে থাকে ছবির গল্প।
তবে ‘সিতারে জমিন পর’-এর গুলশন কিন্তু ‘তারে জমিন পর’-এর নিকুম্ভের মতো পারফেক্ট নন। তাঁর চরিত্রটিতে ত্রুটি রয়েছে, বালখিল্যও আছে। নিজের জীবনের বেদনার সঙ্গে যুঝছেন তিনি। সেই কারণে ‘সিতারে জমিন পর’ ছবিটি দুর্দান্ত, উপন্যাসের মতো এবং মন ছুঁয়ে যায়। এর মধ্যে সব উপাদানই ছিল। কিন্তু কিছু ত্রুটি এটিকে আর দুর্দান্ত ছবির আখ্যা পেতে দিল না। ২ ঘণ্টা ৩৯ মিনিটের এই ছবি অতিরিক্ত দীর্ঘ এবং মনে হচ্ছিল যেন, ছবির গল্প অত্যন্ত ধীর গতিতে এগোচ্ছে। বিশেষ করে ছবির দ্বিতীয় ভাগটি যেন শেষই হতে চাইছিল না। নির্মাতারা হয়তো সুন্দর ভাবে ছবিটি শেষ করতে চেয়েছেন, কিন্তু ততক্ষণে দর্শকরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলবেন।
কিন্তু সমস্ত সমস্যার সমাধানের প্রয়োজন হয় না। আর হলেও কিছু নির্দিষ্ট বিষয় দর্শকদের কল্পনার উপরে ছেড়ে রাখাই ভাল। গুলশনকে নিজের জীবনের আবেগ এবং নানা রকম সমস্যার সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। এই থিমগুলিকে কখনও সুন্দর ছিমছাম কায়দায় তুলে ধরা হয়েছে, তো কখনও বা তা হয়নি। কিন্তু তা গল্প বলার উপর কোনও প্রভাব ফেলেনি। গুলশনের কাঠখোট্টা মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডলি অহলুওয়ালিয়া তিওয়ারি। তিনি গল্পে একটি দারুণ মাত্রা যোগ করেছেন। তবে ছবির দ্বিতীয় ভাগে যেন তাঁর সেই প্রভাব কোথাও হারিয়ে গিয়েছে। এর পাশাপাশি আমিরের গুলশন এবং জেনেলিয়া দেশমুখের সুনীতার রসায়ন যেন কোথাও গিয়ে কাজ করেনি। এমনকী মিউজিকও নয়। আমির অবশ্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছেন। তাঁর এবং তাঁর ছাত্রদলের দৃশ্যগুলি দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলবে।