বিহারের বক্সার জেলার ঘটনা। সম্প্রতি ৫৬ বছর বয়সী ব্যক্তিকে আদালত বেকসুর ঘোষণা করে খালাস করেছে। জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় নাবালক ছিলেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু তা সত্ত্বেও গত ৪৩ বছর তিনি মামলা লড়ছেন। এর মধ্যে ৩৩ বছর কেটে গিয়েছে ঘটনার সময় নিজের নাবালকত্ব প্রমাণ করতেই।
১৯৭৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বক্সারের বাসিন্দা মুন্না সিং-এর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৮ এবং ৩০৭ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তবে শুধু মুন্না নয়। ঘটনায় তাঁর বাবা শ্যাম বিহারী সিং-সহ আরও ৯ জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৮ ধারায় মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে দাঙ্গা বাঁধানো এবং ৩০৭ ধারায় খুনের চেষ্টার মামলা করা হয়েছিল। হিসেব বলছে সে সময় মুন্নার বয়স ছিল ১৩ বছর। কিন্তু ঘটনার সময় তিনি যে নাবালক ছিলেন তা প্রমাণ করতে পেরেছেন ২০১২ সালে। তারও দশ বছর পর ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর সাক্ষ্য, প্রমাণের অভাবে আদালত তাঁকে খালাস করে দেয়।
advertisement
রিপোর্ট অনুসারে, বক্সারের জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সহকারী প্রসিকিউশন অফিসার এ কে পান্ডে বলেন, জুভেনাইল বোর্ড বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করেছে। মুন্না সিং-এর বিরুদ্ধে কোনও সাক্ষী না থাকায় তাঁকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মুন্নার আইনজীবী রাকেশকুমার মিশ্রর মতে, ঘটনার সময় তাঁর মক্কেলের বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর এবং তিনি তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। কিন্তু ২০১২ সাল পর্যন্ত তাঁকে নাবালক হিসেবে বিবেচনাই করা হয়নি।
২০১২ সালে বক্সারের এসিজেএম ২-এর আদালতে বিচার চলাকালীন, মুন্না সিংহকে তাঁর বয়স জিজ্ঞাসা করেছিলেন আইনজীবী রাকেশকুমার মিশ্র। সে সময় মুন্না জানান, তাঁর বয়স ৪৬ বছর, তখন এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে মামলাটি নথিভুক্ত হওয়ার সময় তিনি নাবালক ছিলেন। তারপর ২০১২ সালের নভেম্বরে মামলাটি বক্সার জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে স্থানান্তর করা হয়।
আরও পড়ুন- বিয়ে কী ? এই নিয়ে লেখা ছাত্রের প্রবন্ধ এখন ভাইরাল ! হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যাবে
মুরার থানার চৌগাই গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান মুন্না সিং বলেন, তিনি প্রায় এক মাস জেলে কাটিয়েছেন। এই মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর তিনি অনেক মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আদালতে যান।
মুন্না সিং-এর বাবা-সহ মামলার পাঁচ অভিযুক্ত বিচার চলাকালেই মারা গিয়েছেন। কয়েক বছর আগে, বক্সার আদালত এই মামলায় দু’জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। অন্য দু’জনকে মু্ক্তি দিয়েছিল।
কিন্তু নাবালক প্রমাণ হওয়ার পরও মুন্নার বিচারে এত দেরি হল কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে রাকেশকুমার মিশ্র বলেন, গত ১০ বছরে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের মামলা বক্সার থেকে পটনা, সেখান থেকে আরাহ এবং তারপর ফের বক্সার বোর্ডের স্থানান্তরের কারণেই এই বিলম্ব। মিশ্র মতে, গোটা ঘটনায় মুন্না কোনও ভাবেই সরাসরি জড়িত ছিলেন না। এই মামলায় জড়ানো হয়েছিল কারণ তাঁকে ঘটনাস্থলে দেখা গিয়েছিল। ১৩ বছরের মুন্না ঘটনাস্থলে শুধুমাত্র কৌতূহলবশত উপস্থিত ছিলেন।