সূত্রের খবর, আকাশ এয়ার বিভিন্ন ডোমেস্টিক রুটে বিমান ভাড়া কমিয়ে দিয়েছে। তাদের মুম্বই-বেঙ্গালুরু উড়ানের ভাড়া এখন হয়েছে ২০০০ টাকা থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে। আবার মুম্বই-আহমেদাবাদ রুটে মাত্র ১৪০০ টাকায় মিলছে এই সংস্থার উড়ানের টিকিট। গোটা অগাস্ট মাস জুড়ে ওই ভাড়া ছিল যথাক্রমে ৩৯৪৮ টাকা এবং ৫০০৮ টাকা।
ভাড়া কমানোর বিষয়ে পিছিয়ে নেই আমাদের দেশের সবথেকে বড় বিমান সংস্থা ইন্ডিগো (IndiGo)-ও। আকাশ এয়ারের উড়ানের ভাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তারাও কমিয়েছে এই দুই রুটের বিমান ভাড়া। শুধু তা-ই নয়, এই দুই রুটে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভাড়া কমিয়েছে আর এক বিমান সংস্থা গোফার্স্ট-ও।
advertisement
একই ভাবে গত কয়েক দিনে কমেছে দিল্লি-লখনউ রুটের উড়ান ভাড়াও। এই রুটে সবথেকে সস্তায় দর দিচ্ছে এয়ার এশিয়া এবং ইন্ডিগো। দিল্লি-লখনউ রুটে এই দুই বিমান সংস্থার ভাড়া এখন রয়েছে ১৯০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে। এর পাশাপাশি কমেছে কোচি এবং বেঙ্গালুরু রুটের বিমানের ভাড়াও। এই রুটের বিমান ভাড়া কমে হয়েছে ১১০০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকার মধ্যে, আর সবথেকে সস্তা দর দিচ্ছে গোফার্স্ট, ইন্ডিগো এবং এয়ার এশিয়ার মতো বিমান সংস্থাগুলি।
আবার গত কয়েক দিনে মুম্বই-জয়পুর রুটের বিমান ভাড়াও বেশ সস্তা হয়ে গিয়েছে। আগে উর্ধ্বসীমার নিয়ম থাকাকালীন এই রুটের বিমানের ভাড়া ছিল ৫০০০ টাকা থেকে ৫৫০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু সেই উর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়ার পর থেকে গত কয়েক দিনে ভাড়া কমে হয়েছে প্রায় ৩৯০০ টাকা।
বিমান পরিবহণ বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের উড়ান সংস্থাগুলির মধ্যে যে প্রতিযোগিতা রয়েছে, সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে বিমানের নতুন ভাড়ার তালিকা। আসলে একটা বিমান সংস্থা যে-কোনও একটা রুটে ভাড়া কমিয়ে দিতেই তাদের পাল্লা দিতে প্রতিদ্বন্দ্বী বিমান সংস্থাগুলিও সংশ্লিষ্ট রুটে নিজেদের বিমানের ভাড়া কমিয়ে দিচ্ছে। আর এটাই প্রমাণ করে যে, ক্রমেই বিমান পরিবহণ ইন্ডাস্ট্রির বিকাশ ঘটছে।
বিমান সংস্থাগুলি যে মার্কেট শেয়ার ধরে রাখতে চাইছে, তার প্রতিফলন শুধুমাত্র বিমানের কম ভাড়াতেই নয়। এর পাশাপাশি প্রতিযোগিতার পণ্য, চাহিদা, সরবরাহ, ব্যয় এবং কার্যকর কার্গো রাজস্বের উপরেও দেখা যাচ্ছে। বিমান পরিবহণ বিশেষজ্ঞ অমেয়া জোশি (Ameya Joshi) বলেন, এই ধরনের তীব্র প্রতিযোগিতা দুর্বলতম প্রতিযোগীকে প্রতিযোগিতা থেকে বাইরে পাঠিয়ে দেবে। যদি প্রত্যেকেই একসঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকতে চায়, তা-হলে তাদের লাভের পথে দেরি হবে।
আবার সিনিয়র এয়ারলাইন আধিকারিকরা বলেন, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের চলতি ত্রৈমাসিকে সারা ভারতের বিভিন্ন রুটে কম চাহিদার কারণে ভাড়া কমেছে। আসলে এই ত্রৈমাসিকে ভারতে ভ্রমণের মরসুম একেবারেই থাকে না। তাঁদের আরও বক্তব্য, সামনেই উৎসবের মরসুম আসছে। আর তার জেরে কিছুটা হলেও ভাড়া বাড়তে চলেছে। তবে বিমানের ভাড়ার উর্ধ্বসীমা জারি থাকলে হয়তো এই ভাড়া কম হতে পারত। অভ্যন্তরীণ এয়ারলাইনের এক সিনিয়র আধিকারিক জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে কর্পোরেট ট্রাভেল আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। যা ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর এই পরিস্থিতি দেখে বিমান সংস্থাগুলিও বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে বিমানের ভাড়া কমিয়ে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: জামিনের আবেদন খারিজ, ১০ দিনের সিবিআই হেফাজতে এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ
ওই আধিকারিক আরও বলেন যে, গত কয়েক মাসে কর্পোরেট ভ্রমণের জেরে যাত্রীর চাপও বেড়েছে। আর যাতায়াত বৃদ্ধি পাওয়ায় ইন্ডাস্ট্রিও আশ্বস্ত হয়ে বিমানের ভাড়া কমিয়ে দিচ্ছে। ২০২০ সালের মে মাসে অভ্যন্তরীণ বিমানের ভাড়ার মূল্যের উপর উর্ধ্বসীমা ধার্য করে ভারত সরকার। আসলে বিমান ভাড়ার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে এর দুই বছরেরও বেশি সময় পরে সম্প্রতি সরকার ঘোষণা করে যে, চলতি বছরের অগাস্ট মাসের শেষে ভাড়ার সেই উর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ফিক্সড ডিপোজিটেও ফাঁদ পাতছে প্রতারকরা! রইল তা থেকে বাঁচার উপায়
বিমান সংস্থার ওই আধিকারিকের কথায়, বিমানের জ্বালানি বা এটিএফ (ATF)-এর নতুন মূল্য নির্ধারণের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে সকল বিমান সংস্থাই। এটা শুধুমাত্র বিমান সংস্থাগুলিকেই সাহায্য করবে না, তার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরাও সুবিধা পাবেন। কারণ জ্বালানির নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হলে টিকিটও সস্তা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও যোগ করেন, বিভিন্ন মেট্রো রুটে যাতায়াতের ভাড়া তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সস্তা হতে পারে। কারণ দিল্লি এবং মুম্বইয়ের মতো মেট্রো শহরে সরবরাহের ক্ষেত্রে কমতে পারে জ্বালানির মূল্য।