পিপিএফ: নিরাপদ ভবিষ্যতের গ্যারান্টি –
যখনই আমরা নিরাপদ এবং নিশ্চিত রিটার্ন সহ বিনিয়োগের কথা বলি, তখনই PPF-এর নাম প্রথমেই আসে। এটি সরকারের একটি ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প, বিশেষভাবে সেইসব লোকেদের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে, যেমন অবসরকালীন সময়ের জন্য, একটি বড় তহবিল জমা করতে চায়। পিপিএফ বর্তমানে বার্ষিক ৭.১% সুদের হার প্রদান করে, যা প্রতি বছর মূলধনের সঙ্গে যোগ করা হয় (চক্রবৃদ্ধি)। এর মানে হল যে, কেবল জমা করা অর্থের উপর সুদই পাওয়া যাবে না, বরং সেই সুদের উপরও সুদ পাওয়া যাবে এবং এই চক্রবৃদ্ধির শক্তি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছোট বিনিয়োগকেও অনেক বড় করে তুলবে।
advertisement
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, পিপিএফ-এ করা বিনিয়োগ, এর উপর প্রাপ্ত সুদ এবং ম্যাচিউরিটিতে প্রাপ্ত সম্পূর্ণ পরিমাণ – তিনটিই করমুক্ত (ইইই স্ট্যাটাস)। প্রতি বছর পিপিএফ-এ সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১.৫ লাখ টাকা জমা করা যেতে পারবে।
কোটিপতি বানানোর ১৫+৫+৫ সূত্র –
এবার আসা যাক সেই বিশেষ সূত্রে, যা সকলকে কোটিপতি বানাতে পারে। এটি ১৫+৫+৫-এর নিয়ম। এটি কোনও ম্যাজিক নয়, বরং পিপিএফ নিয়মের একটি সঠিক ব্যবহার।
প্রথম ধাপ: ১৫ বছরের যাত্রা –
একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্টের মূল মেয়াদপূর্তির সময়কাল ১৫ বছর। এই সূত্রের অধীনে, প্রথম ১৫ বছর ধরে পিপিএফ অ্যাকাউন্টে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১.৫ লাখ টাকা জমা করা যেতে পারে।
মোট বিনিয়োগ: প্রতি বছর ১.৫ লাখ x ১৫ বছর = ২২.৫ লাখ
১৫ বছর পর ৭.১% সুদের হারে তহবিল: প্রায় ৪০.৬৮ লাখ হবে
এতে সুদের আয়: ৪০.৬৮ লাখ – ২২.৫ লাখ = ১৮.১৮ লাখ (অর্থাৎ যে পরিমাণ অর্থ জমা করা হয়েছে তার থেকে সামান্য কম সুদ পাওয়া গিয়েছে)
আরও পড়ুন: ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে ২২ লাখ টাকা পাওয়া যাবে, এই সরকারি স্কিম FD-র চেয়েও ভাল
দ্বিতীয় ধাপ: প্রথম ৫ বছরের এক্সটেনশন (নতুন বিনিয়োগ ছাড়াই)
১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর দুটি বিকল্প আছে – হয় সমস্ত টাকা তুলে নিতে হবে, অথবা পিপিএফ অ্যাকাউন্ট ৫-৫ বছরের ব্লকে তা বাড়িয়ে দিতে হবে। এই সূত্রে আমরা সম্প্রসারণের পথ বেছে নিলাম। এখন, পরবর্তী ৫ বছর (অর্থাৎ ১৬তম বছর থেকে ২০তম বছর পর্যন্ত) নিজেদের অ্যাকাউন্টে কোনও নতুন টাকা জমা করতে হবে না এবং সেই ৪০.৬৮ লাখ টাকা যেমন আছে তেমনই রেখে দিতে হবে।
২০ বছর পূর্ণ হলে সেই তহবিল প্রায় ৫৭.৩২ লাখ টাকায় বৃদ্ধি পাবে।
এই ৫ বছরে শুধুমাত্র সুদ থেকে অতিরিক্ত আয়: ৫৭.৩২ লাখ – ৪০.৬৮ লাখ = ১৬.৬৪ লাখ (কিছু না করেই!)
তৃতীয় পর্যায়: দ্বিতীয় ৫ বছরের এক্সটেনশন (নতুন বিনিয়োগ ছাড়াই)
২০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর, আবার সেই অ্যাকাউন্টটি পরবর্তী ৫ বছরের জন্য (অর্থাৎ ২১তম বছর থেকে ২৫তম বছর পর্যন্ত) বাড়িয়ে দিতে হবে এবং এই সময়ের মধ্যেও কোনও নতুন টাকা জমা করতে হবে না।
২৫ বছর পূর্ণ হলে সেই তহবিল প্রায় ৮০.৭৭ লাখ টাকায় বৃদ্ধি পাবে।
বিগত ৫ বছরে শুধুমাত্র সুদ থেকে অতিরিক্ত আয়: ৮০.৭৭ লাখ – ৫৭.৩২ লাখ = ২৩.৪৫ লাখ
যদি এক্সটেনশনেও বিনিয়োগ চালিয়ে যাওয়া যায় –
উপরে উল্লিখিত পদ্ধতিটি হল যদি কেউ ১০ বছরের এক্সটেনশনের সময় কোনও নতুন বিনিয়োগ না করে। কিন্তু, কারও যদি আরও একটু সাহস থাকে এবং এই ১০ বছর (১৫ বছর পর) প্রতি বছরে ১.৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে থাকে, তাহলে দেখা যাক কী আশ্চর্য ঘটনা ঘটে।
মোট বিনিয়োগ (২৫ বছরের বেশি): প্রথম ১৫ বছরের জন্য ২২.৫ লাখ + পরবর্তী ১০ বছরের জন্য ১৫ লাখ (১.৫ লাখ x ১০) = ৩৭.৫ লাখ
২৫ বছর পর মোট তহবিল: এটি প্রায় ১.০৩ কোটিতে বৃদ্ধি পাবে।
শুধুমাত্র সুদ থেকে মোট আয়: ১.০৩ কোটি – ৩৭.৫ লাখ = ৬৫.৫৮ লাখ (অর্থাৎ জমা করা টাকার চেয়ে বেশি সুদ)
এবার আসল মজা: প্রতি মাসে নিশ্চিত ৬০,৯৪১ টাকা কীভাবে পাওয়া যাবে –
২৫ বছরের এই বিনিয়োগের পর, যখন পিপিএফ অ্যাকাউন্টে ১.০৩ কোটি টাকার বিশাল তহবিল জমা হবে, তখন চাইলে তা তোলা যেতে পারে। কিন্তু, যদি কেউ সারা জীবন প্রতি মাসে ভাল পরিমাণ টাকা পেতে চায়, তাহলে আরেকটি স্মার্ট উপায় আছে।
এই ১.০৩ কোটি টাকার তহবিল পিপিএফ অ্যাকাউন্টে রাখা উচিত এবং এটি থেকে কোনও টাকা তোলা উচিত নয় (বা নতুন কোনও টাকা যোগ করা উচিত নয়)। পিপিএফ নিয়ম অনুযায়ী, কোনও বিনিয়োগ ছাড়াই ম্যাচিউরিটির পরেও সেই অ্যাকাউন্টটি চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে এবং এতে বর্তমান সুদের হার (বর্তমানে ৭.১%) পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: বেসরকারি না সরকারি ব্যাঙ্ক-এর লকার? এই বছর কোন ব্যাঙ্ক সবথেকে কম ভাড়ায় লকার দিচ্ছে? জেনে নিন
বার্ষিক সুদ: ৭.১% হারে ১.০৩ কোটি টাকার বার্ষিক সুদ হবে প্রায় ৭.৩১ লাখ (₹১,০৩,০০,০০০ x ৭.১ / ১০০)।
যদি এই বার্ষিক সুদকে ১২ মাসে ভাগ করা হয়, তাহলে প্রতি মাসে ৬০,৯৪১ (₹৭,৩১,৩০০ / ১২) টাকা পাওয়া যাবে।
আর সবচেয়ে ভাল দিকটা হল মূলধনের পরিমাণ ১.০৩ কোটি টাকা অপরিবর্তিত থাকবে। অর্থাৎ, প্রতি মাসে ৬০,৯৪১ টাকা খরচ চালিয়ে যাওয়া যাবে এবং এক কোটি টাকার তহবিলও নিরাপদ থাকবে। এটাই প্রকৃত আর্থিক স্বাধীনতা।
পিপিএফের কিছু নিয়ম যা জানা উচিত –
১) শুধুমাত্র কর সাশ্রয় –
বিনিয়োগ (ধারা ৮০সি -র অধীনে বার্ষিক ১.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত), অর্জিত সুদ এবং সম্পূর্ণ মেয়াদপূর্তির পরিমাণ, সবই করমুক্ত।
২) মাত্র ৫০০ টাকা থেকে শুরু –
যে কোনও ভারতীয় নাগরিক, তিনি বেতনভোগী, গৃহবধূ, ছোট ব্যবসায়ী বা ছাত্র যা-ই হন, পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। সর্বনিম্ন বার্ষিক বিনিয়োগ মাত্র ৫০০ টাকা।
৩) ১৫ বছরের লক-ইন –
পিপিএফ একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। এর লক-ইন পিরিয়ড ১৫ বছর। কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে ৭ম বছর থেকে আংশিক প্রত্যাহার (৫০% পর্যন্ত) করা যেতে পারে।
৪) প্রতি ৫ বছর অন্তর মেয়াদ বৃদ্ধি –
যদি কেউ ১৫ বছর পর অ্যাকাউন্টটি চালিয়ে যেতে চান, তাহলে প্রতি ৫ বছর অন্তর এটি বাড়াতে হবে। নতুন বিনিয়োগ ছাড়াই বা নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমেও এটি বাড়ানো যেতে পারে।
৫) বার্ষিক ১.৫ লাখ টাকার বেশি নয় –
এক আর্থিক বছরে পিপিএফ-এ ১.৫ লাখের বেশি বিনিয়োগ করা যাবে না। এমনকি যদি তা করা হয়, তবুও অতিরিক্ত পরিমাণের উপর সুদ বা কর ছাড় পাওয়া যাবে না।
কে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে –
যে কোনও প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয় নাগরিক, যে কোনও পোস্ট অফিস বা অনুমোদিত ব্যাঙ্ক শাখায় তাঁর নামে একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। একজন নাবালক শিশুর নামে তার বাবা-মা বা আইনত অভিভাবকও একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।
আজ একটি ছোট বিনিয়োগ, আগামীকাল একটি বড় সহায়তা –
এখানে দেখা গিয়েছে, কীভাবে পিপিএফের এই ১৫+৫+৫ ফর্মুলা এবং পরবর্তী স্মার্ট পরিকল্পনা কেবল কোটিপতিই বানাতে পারে না, বরং অবসরের পরে একটি আরামদায়ক এবং টেনশনমুক্ত জীবনও নিশ্চিত করতে পারে। এই স্কিমটি তাদের সকলের জন্য একটি আশীর্বাদ যারা তাদের ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ উপায়ে একটি বড় তহবিল তৈরি করতে চায়। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ ধরে রাখার জন্য, যা দরকার তা হল একটু পরিকল্পনা, শৃঙ্খলা এবং ধৈর্য। তাই সকলেরই পিপিএফ বিনিয়োগ শুরু করা উচিত। কারণ আজকের ছোট বিনিয়োগ আগামীকাল সবচেয়ে বড় সহায়তা হয়ে উঠবে।