এটি আসলে এক বিশেষ ধরনের চাল, যা মণিপুরে উৎপন্ন হয়। অ্যান্থোসায়ানিন পিগমেন্টের কারণে এই চালের রঙ কালো হয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং নানা ধরনের ভিটামিনে ভরপুর এই চালের জন্য জিআই ট্যাগ পেয়েছে মণিপুর। কিন্তু এবার সেই মণিপুরি ধানের চাষ শুরু হয়েছে বিহারে। মণিপুরের বিখ্যাত ‘চক হাও’-এর ব্যাপক ফলন হচ্ছে পূর্ব চম্পারণ জেলায়।
advertisement
আগে মাত্র একজন কৃষক এই বিশেষ জাতের ধান চাষ করতেন। কিন্তু এখন এই সুগন্ধি মণিপুরি ধানের জাদু এমনই আবিষ্ট করেছে যে, এই জেলার শতাধিক কৃষক এর চাষ শুরু করেছেন। জেলার কোতোয়া ব্লকের গোপী ছাপরা পঞ্চায়েতের সাগর চূড়ামন গ্রামের বাসিন্দা প্রয়াগদেব সিং গত তিন বছর ধরে কালো ধান ‘চক হাও’ চাষ করছেন। তিনি জানান, পূর্ব চম্পারণ জেলায় ভাল ফলন হচ্ছে এই ধানের। জমির উর্বরতাও বজায় রয়েছে।
কৃষক জানান, ‘চক হাও’ মণিপুরি জাতের কালো ধান। লাল মাটিতে চাষ করলে এই চাল দারুন সুগন্ধযুক্ত হয়ে থাকে। তবে পূর্ব চম্পারণে মাটিতেও এর মৃদু সুবাস অক্ষুণ্ণ রয়েছে। কৃষক প্রয়াগদেব সিং দাবি করেন, পশ্চিম চম্পারণের কৃষক বিজয় গিরি প্রথমে এই ধানের বীজ বরাত দিয়ে আনিয়েছিলেন। মাত্র এক কিলোগ্রাম বীজ দিয়েছিলেন তিনি। সেই বীজ থেকে এখন কয়েক কুইন্টাল কালো চাল উৎপন্ন হয়েছে।
‘চক হাও’ এর দু’টি জাত রয়েছে—
প্রয়াগদেব সিং বলেন, ‘এই মণিপুরি ধানের দু’টি জাত রয়েছে। ‘চক হাও-০১’ জাতের ধান সাধারণত ১৭০ দিনে পরিণত হতে পারে। অন্য দিকে, ‘চক হাও-০২ জাতের ধান রোপণের ১২০ দিনের মধ্যেই পরিণতি পায়।’
চক হাও-০১ বীজের ক্ষেত্রে মাত্র ১-২টি ধান রোপণ করা হয়। একটি বীজ থেকে ১৫-২০টি চারা বের হয়। এই জাতের বীজ থেকে প্রায় ৬ থেকে ৭ ফুট লম্বা গাছ হয়। এর চাল আবার একটু মোটা হয়। অন্য দিকে, ‘চক হাও-০২’ জাতের বীজ থেকে যে গাছ বের হয়, তা প্রায় তিন ফুট লম্বা।
কৃষক প্রয়াগদেব সিং জানান, তিনি প্রাথমিক ভাবে মাত্র পাঁচ কাঠা জমিতে এই মণিপুরি জাতের ধান শুরু করেছিলেন। এখন ৩ বছর পর ১০ কাঠা জমিতে চাষ করছেন তিনি। সব থেকে বড় বিষয় হল, এই ধান চাষের সময় কোনও প্রকার রাসায়নিক সার ব্যবহার করবেন না তিনি। বরং নিজেই জৈব সার তৈরি করে নেন।
মণিপুরের বাসিন্দারা বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠানে এই চাল রান্না করেন। এটি রান্না করতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে।