শ্রাবণ সোমবারের উৎপত্তি:
বলা হয়, এই শ্রাবণ মাসের শুরুতেই দেবাসুরের সম্মিলিত প্রয়াসে শুরু হয়েছিল সমুদ্রমন্থনের উদ্যোগ। মন্থন চলছিল দুর্দান্ত গতিতে, ক্ষীরসমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠেছিল মন্থনদণ্ডের ঘর্ষণে। সেই সময়েই সমুদ্রের তলদেশ তোলপাড় করে উঠে আসে মহাগরল কালকূট। সেই বিষের ধোঁওয়ায় সৃষ্টি উৎসন্নে যেতে বসেছিল। দেবতা, অসুর এবং সৃষ্টির সমুদায় জীবনকে রক্ষা করার জন্য কালকূট পান করেছিলেন ভগবান শিব। মাতা পার্বতী এই সময়ে হাত দিয়ে তাঁর কণ্ঠ চেপে ধরায় বিষ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারেনি, তা গলায় আটকে যায়। কিন্তু বিষের প্রভাবে শিবের কণ্ঠদেশ নীলবর্ণ ধারণ করে, তাঁর নাম হয়ে যায় সেই থেকে নীলকণ্ঠ। উপরন্তু বিষের দারুণ দহনে তাঁর সর্বাঙ্গে তীব্র জ্বালা শুরু হয়। লোকবিশ্বাস, সেই বিষতাপ প্রশমনের জন্য দেবতারা কলসে করে সমুদ্রের জল এনে তাঁর অভিষেক করেছিলেন যাতে শরীর শান্ত হয়। সেই ঘটনা স্মরণে আজও শ্রাবণ মাসের চারটি সোমবারে ভক্তেরা বাঁকে করে গঙ্গাজল নিয়ে গিয়ে কোনও শিবমন্দিরে লিঙ্গাভিষেক সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি, বাড়িতেও শিবের বিশেষ পূজাভিষেকের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
advertisement
শ্রাবণ সোমবার ব্রত উদযাপনের পদ্ধতি:
১. সকালে স্নান করে নিতে হবে।
২. পূর্ব দিকে মুখ করে বসতে হবে, সামনে থাকবে শিবলিঙ্গ।
৩. হাতে এক আঁজলা জল নিয়ে ব্রত উদযাপনের সঙ্কল্প করতে হবে।
৪. এর পর দুধ, দই, ঘি, মধু এবং গঙ্গাজলে শিবলিঙ্গের অভিষেক করতে হবে।
৫. প্রতি অভিষেকের সময়ে জপ করতে হবে পঞ্চাক্ষরা মন্ত্র- ওম নমঃ শিবায়।
৬. অভিষেক শেষে শিবকে উপবীত, আতপ চাল, বিল্বপত্র, পুষ্পার্ঘ নিবেদন করতে হবে।
৭. সব শেষে দীপ এবং ধূপে আরতি অবশ্য কর্তব্য।
শ্রাবণ সোমবার ব্রত উপবাস পদ্ধতি:
শিবপূজার পর থেকেই শুরু হয় উপবাস। এক্ষেত্রে সামর্থ্য থাকলে নির্জলা উপবাস করতে হয় সন্ধ্যা পর্যন্ত, অন্যথায় ফলভক্ষণ শাস্ত্রসম্মত।
শ্রাবণ সোমবার ব্রত উদযাপনের পুণ্যফল:
১. শিবের আশীর্বাদে ভক্তের আধ্যাত্মিক জ্ঞানপ্রাপ্তি হয়।
২. শিব সৃষ্টির রক্ষক এবং সংহারও, তাই এই ব্রত করলে শিবের কৃপায় স্মৃতিশক্তি এবং ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি পায়।
৩. এই ব্রত করলে মনোমত সঙ্গী/সঙ্গিনী লাভ হয়।
৪. শিবের কৃপায় জীবনপথের সব প্রতিবন্ধকতা দূর হয়।
৫. এই ব্রতে নিবেদিত প্রদীপের আলো জ্ঞানের আলো নিয়ে আসে জীবনে।
৬. এই ব্রতে নিবেদিত গঙ্গাজল ভক্তের মোক্ষপ্রাপ্তির সহায়ক হয়।
৭. এই ব্রতে ভাঙ অর্পণ করলে শত্রুভয় দূর হয়।
শ্রাবণ সোমবার ব্রত উপবাসের সুফল:
বর্ষাকালে সূর্যালোক কম থাকে বলে আমাদের পরিপাকক্রিয়া শ্লথ হয়ে পড়ে, এক্ষেত্রে নিরামিষ ভোজন বা পূর্ণ উপবাস শরীরকে সুস্থ রাখে।
শ্রাবণ মাসের অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্রত:
শ্রাবণ মঙ্গলবারে বিবাহিতাদের জন্য মঙ্গলগৌরী ব্রত, শ্রাবণ শুক্রবারে বরাহলক্ষ্মী ব্রত এবং পুরুষদের জন্য শ্রাবণ শনিবারে বেঙ্কটেশের পূজা বিশেষ ফলদায়ক।
ইংরেজি ক্যালেন্ডার মতে শ্রাবণ সোমবারের পুণ্য তারিখ:
১. রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ছত্তিসগঢ়, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডে শ্রাবণ সোমবারের পুণ্য তারিখগুলি হল ২৬ জুলাই, ২ অগস্ট, ৯ অগস্ট, ১৬ অগস্ট এবং ২২ অগস্ট।
২. অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, গোয়া, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, কর্নাটক এবং তামি নাড়ুতে শ্রাবণ সোমবারের পুণ্য তারিখগুলি হল ৯ অগস্ট, ১৬ অগস্ট, ২৩ অগস্ট, ৩০ অগস্ট, ৬ সেপ্টেম্বর এবং ৭ সেপ্টেম্বর।