এই বছরে কাজরি তীজ উদযাপিত হবে ২৫ অগাস্ট, বুধবারে। যদিও তৃতীয়া তিথি ২৪ অগাস্ট, মঙ্গলবার বিকেল থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে। ২৪ অগাস্ট, ২০২১ তারিখে বিকেল ৪টে ০৪ মিনিট থেকে শুরু হচ্ছে তৃতীয়া তিথি, তা স্থায়ী হবে ২৫ অগাস্ট, ২০২১ তারিখের বিকেল ৪টে ১৮ মিনিট পর্যন্ত।
হরিয়ালি তীজের মতো কাজরি তীজেরও উপাস্য দেবী মাতা পার্বতী। ভগবান শিবকে পতিরূপে লাভ করার জন্য যে কঠোর তপস্যা করেছিলেন দেবী, লোকবিশ্বাস অনুযায়ী তা সার্থক হয়েছিল হরিয়ালি তীজে। সেই থেকে স্বামীসৌভাগ্য লাভে তৃতীয়া তিথিতে মাতা পার্বতীর আরাধনা বিশেষ ফপ্রদ বলে গণ্য করা হয়। বলা হয়, এই ব্রতের উদযাপনকারিণী সধবাকে আয়ু, সৌভাগ্য, দাম্পত্যসুখের আশীর্বাদ দেন মাতা পার্বতী; কুমারীরা তাঁর কৃপায় পান মনোমত স্বামী। এছাড়া কাজরি তীজে নিমগাছের আরাধনার প্রচলন রয়েছে, এই সূত্রে দীর্ঘ নীরোগ জীবনলাভে নিমড়ি মাতার অনুগ্রহের কথাও বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
advertisement
কাজরি তীজ উদযাপন:
১. হরিয়ালি তীজের মতো কাজরি তীজেও গাছের ডালে দোলনা বেঁধে আনন্দ উদযাপনের রেওয়াজ রয়েছে।
২. এই উৎসবে মহিলারা বর্ষার আগমনে স্বামীসঙ্গের আকুতি নিয়ে যে গান গাইতেন, তা পরবর্তীকালে ভারতীয় মার্গসঙ্গীতে কাজরি নামে একটি বিশেষ ধারার জন্ম দিয়েছে। এই গান ছাড়া কাজরি তীজের উদযাপন অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
৩. হরিয়ালি তাজের মতো কাজরি তীজেও ব্রাহ্মমুহূর্তে স্নান সেরে নেন মহিলারা। এই তীজেও হাতে, পায়ে মেহন্দির সাজ সৌভাগ্যসূচক রূপে গণ্য করা হয়।
৪. সাধারণত মহিলারা দল বেঁধে নিমগাছের চার পাশে পুজো দিয়ে এই ব্রত উদযাপন করেন।
৫. কাজরি তীজে নির্জলা উপবাসই প্রথা, চাঁদকে অর্ঘ্য দেওয়ার পরে উপবাস ভঙ্গ করতে হয়। একান্ত অসমর্থ হলে ফলাহার করা যায়।
৬. চাঁদকে অর্ঘ্য দেওয়ার পরে ছাতু দিয়ে উপবাস ভঙ্গ করা এই ব্রতের বিশেষ প্রথা।
৭. সধবাদের ষোল শৃঙ্গার বা সাজের সামগ্রী উপহার দেওয়া এই তিথিতে পুণ্যদায়ক বলে বিবেচিত হয়।
কাজরি তীজ পূজাবিধি:
এই বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয় নিমড়ি মাতার উদ্দেশে। একটি ছোট পুকুর তৈরি করে, তার পাশে একটি নিম গাছের ডাল পুঁতে, তার সামনে একটি প্রদীপ দিয়ে আরাধনা করতে হয়।
১. প্রথমে বাড়ির উঠোনে দেওয়ালের সামনে গুড় এবং ঘি মিশিয়ে একটি ছোট পুকুর তৈরি করতে হয়, এর ভিতরে ঢেলে দিতে হয় কাঁচা দুধ এবং জল।
২. পুকুরের পাশে একটি নিমগাছের ডাল পুঁতে দিতে হয়, এটিই নিমড়ি মাতার প্রতিনিধিত্ব করে ব্রতে।
৩. এই নিমগাছের ডালের সামনে একটি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে দিতে হয়।
৪. পুকুর যে দেওয়ালের সামনে তৈরি করা হয়েছে, সেখানে মধ্যমার সাহায্যে হেনা, সিঁদুর, কাজল মিশিয়ে ১৩টি টিপ দিতে হবে।
৫. নিমগাছের ডালের মূলে উৎসর্গ করতে হবে জল, সিঁদুর, চাল।
৬. নিমড়ি মায়ের কাছে অর্পণ করতে হবে হেনা, একটি শুদ্ধ গোটা সুতো, নতুন বস্ত্র। এই সুতো দেওয়ালের যেখানে টিপ দেওয়া হয়েছে, তার চার পাশে বেঁধে রাখতে হবে।
৭. শসা, লেবু এবং অলঙ্কারের প্রতিফলন প্রদীপের আলোয় পুকুরের জলে দেখতে হবে।
চাঁদকে অর্ঘ্যদানের প্রথা:
১. নিমড়ি মাতার পূজার পর রাতে চাঁদকে অর্ঘ্য দিতে হয়। এক্ষেত্রে দুধ, জল, সিঁদুর, উপবীত, গোটা চাল অর্পণ করতে হয় চন্দ্রদেবকে অর্ঘ্য রূপে। অর্ঘ্য দেওয়ার সময়ে হাতে রুপোর আংটি এবং যবাঙ্কুর ধরে থাকতে হয়। অর্ঘ্য অর্পণের পরে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে চারবার গোল হয়ে ঘুরে চন্দ্র প্রদক্ষিণ করতে হয়।
২. আকাশে চাঁদ দেখা না গেলে রাত ১১টা ৩০ মিনিটে অর্ঘ্য অর্পণ করে ছাতু দিয়ে উপবাস ভঙ্গ করা যায়।