কোচবিহার সীমানা লাগোয়া অসম। কাছাকাছি-পাশাপাশি, অবস্থান আত্মীয়ের মতই। কিন্তু কাছের জায়গাই কি এবার দূরের হয়ে গেল? একটা লালকালির দাগ কি মুছে দেবে সব পরিচয়? সোমবার অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির খসড়া তালিকা প্রকাশের পর কোচবিহারের মনে উৎকন্ঠা-দুশ্চিন্তা।
কাছের জায়গা। তাই সেখানে কাছের মানুষদের বিয়ে দিয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু জাতীয় নাগরিকপঞ্জির খসড়া তালিকা ঠাঁই দেয়নি আত্মীয়দের। যেমন, দিনহাটার বাসিন্দা মন্টু তালুকদার। অনেক বছর আগে ছোট বোন ও বছর পাঁচেক আগে বরপেটা রোডে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের দাবি, বৈধ কাগজ জমা দেওয়া সত্ত্বেও নাম ওঠেনি তালিকায়।
advertisement
হানাপাড়ার বাসিন্দা পঙ্কজ সাহার শ্বশুরবাড়ি অসমের কোকরাঝাড়ে। ওখানেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আরও কত আত্মীয়-স্বজন। লতায় পাতায় কত সম্পর্ক একটা তালিকা কি তাহলে বদলে দেবে দেশের মাটি? এই প্রশ্নই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে সাহা বাড়িতে ৷
আরও পড়ুন
অসম NRC নিয়ে উত্তাল গোটা দেশ, জানেন কী এই NRC?
একই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাহাপাড়ার বাসিন্দা উষা সাহা। ২৫-৩০ বছর আগে অসমে বিয়ে হয়েছে ননদের। সোমবারের পর উষার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে । ননদের শ্বশুরবাড়ির পরিবার বাদ পড়েছে চুড়ান্ত নাগরিক খসড়া পঞ্জি থেকে ৷ আরও ৪০ লাখ মানুষের মতোই অনিশ্চিত উষার ননদ ও তাঁর পরিবারের ভবিষ্যৎ ৷
আরও পড়ুন
‘যৌনতায় সক্ষম’, প্রমাণ করতে এই যুবক যা করলেন জানলে চমকে উঠবেন
অসমের চিন্তা-অনিশ্চয়তা থাবা বসিয়েছে এরাজ্যেও । আফগানিস্তান, ইরাক বা সিরিয়ার মতো গৃহযুদ্ধ নেই। অথচ, কলমের খোঁচায় আচমকাই নাগরিকত্ব হারানোর মুখে ৪০ লক্ষ মানুষ। অসমের খসড়া নাগরিকপঞ্জি-তে চল্লিশ লাখ মানুষের নামের পাশে লালকালির দাগ। কার্যত রাতারাতি ভারতীয় নাগরিকত্ব হারানোর পথে তাঁরা। নাগরিক পঞ্জিতে নাম তোলার জন্য আবেদন করেন ৩ কোটি ২৯ লক্ষ মানুষ ৷ তালিকায় প্রকাশিত হয়েছে ২ কোটি ৮৯ লক্ষ মানুষের নাম ৷ কার্যত রাতারাতি উদ্বাস্তু ৪০ লক্ষ মানুষ ৷ বাকিরা যাবেন কোথায়? এই দেশ কি তাহলে তাঁদের নয়? দেশ হারাবেন দেশের মানুষ? লাগোয়া অসম এত অচেনা হয়ে যাবে? কোচবিহারের অলিগলিতে প্রশ্নের ভিড়।
রিপোর্ট- শুভঙ্কর সাহা