উনিশের লোকসভা ভোটে কি শেষমেশ সংরক্ষণের তির ছুঁড়েই লক্ষ্যভেদ করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদি? সোমবার এই প্রশ্নই দেশজুড়ে। কারণ, এ দিনই মোদি মন্ত্রিসভায় উচ্চবর্ণের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়াদের জন্য চাকরি ও শিক্ষায় ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ নিয়েই দেশ জুড়ে বিতর্কের ঝড়। সম্প্রতি, হিন্দি বলয়ের তিনটি রাজ্যই হাতছাড়া করেছে মোদি সরকার। তার উপর, উত্তরপ্রদেশে এসপি-বিএসপি জোট বাঁধছে। যা বিজেপির কাছে চিন্তার। এই সব রাজ্যে উচ্চবর্ণের ভোটব্যাঙ্ক গেরুয়া শিবিরের বড় ভরসা। যাঁদের অনেকেরই প্রশ্ন, শুধুমাত্র তফসিলি জাতি-উপজাতি ও ওবিসিরাই কেন সংরক্ষণের আওতায় থাকবে? তাই কি লোকসভা ভোটের আগে মরিয়া হয়ে এমন সংরক্ষণের পথে হাঁটতে চাইছে মোদি সরকার? কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি টুইটারে কটাক্ষের সুরে লিখেছেন, চার বছর আট মাস ধরে কিছু ভাবল না। নির্বাচনী আচরণবিধি শুরুর তিন মাস আগে এমন সিদ্ধান্ত গিমিক ছাড়া কিছু নয়।
advertisement
শুধু কংগ্রেসই নয়, বাকি বিজেপি বিরোধীদেরও একই সুর। প্রত্যেকেরই দাবি, লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে এটা মোদি সরকারের নতুন জুমলা। বিজেপি অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের দাবি, এই সংরক্ষণের ফলে সব ধর্মের মানুষই উপকৃত হবেন। এ নিয়ে অযথা রাজনীতি করছে বিরোধীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোদি সরকার উচ্চবর্ণের পিছিয়ে পড়াদের জন্য সংরক্ষণ দিতে চাইলে তা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে অমান্য করা হবে। সূত্রের খবর, মোদি সরকার তাই সংবিধান সংশোধন করতে চাইছে। মঙ্গলবার, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিনে বিল পেশ করা হতে পারে। কিন্তু, পেশ হলেই তো আর দুই কক্ষে তা পাস হয়ে যাবে না। সেক্ষেত্রেও নানা জটিলতার সম্ভাবনা। বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিরেোধীরা বলছেন, গরিব কৃষক, দলিতদের ক্ষোভ টের পেয়ে নিজেদের উচ্চবর্ণের ভোটব্যাঙ্ককে সুসংহত করতে মরিয়া বিজেপি। তাই বলা হচ্ছে উচ্চবর্ণের মধ্যে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়াদের জন্য সংরক্ষণ। কিন্তু, আদতে কি তাই? কারণ, মোদি সরকারের মানদণ্ডে, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া হলেন তাঁরা,
যাঁদের আয় বছরে আট লক্ষ টাকার নীচে। অর্থাৎ, কারও বছরে আয় ৭ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯৯৯ টাকা হলেও তিনি মোদি সরকারের চোখে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ,আবার যাঁর পাঁচ হেক্টরের নীচে কৃষি জমি রয়েছে তিনিও আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া, যাঁর এক হাজার স্কোয়ার ফুটের নীচে বাড়ি, তিনিও উচ্চবর্ণের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া।
বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলছে, ভোট বড় বালাই। তাই আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়ার মাপাকাঠি মোদি সরকার এমনভাবে ঠিক করেছে, যাতে বেশি মানুষকে সংরক্ষণের আওতায় আনা যায়। লক্ষ্য, ভেট দিয়ে ভোট জেতা। বিজেপির অবশ্য দাবি, সংরক্ষণের সিদ্ধান্তের পিছনে কোনও রাজনীতি নেই।