শিলিগুড়ি: বাইরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মারণ ভাইরাস। তাল মিলিয়ে ঘরের মধ্যে ক্রমশ বাড়ছে মশা-মাছির উৎপাত। এই করোনাকালে অন্যান্য রোগ, বিশেষ করে মশা ও মাছিবাহিত রোগ যেমন ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গুও কিন্তু ভয়ানক হতে পারে। এমনটাই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। তাই তা থেকেও দূরে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, অধিকাংশ মশার রেপেলেন্টেই তীব্র একটা গন্ধ থাকে এবং তা নাকে গেলে অনেকের শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। যা এই মুহূর্তে ভীষণ মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। মশার কয়েল জ্বালালেও শ্বাসকষ্ট হওয়ার তীব্র আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে বাড়িতে বাচ্চা বা বয়স্ক কেউ থাকলে এ ধরনের তীব্র গন্ধযুক্ত কিছু না জ্বালানোই ভালো।
তাই এই করোনাকালে প্রাকৃতিক সুগন্ধযুক্ত এসেন্সিয়াল অয়েল থাকলেই আপনি দিব্যি চমৎকার দাওয়াই তৈরি করে ফেলতে পারবেন। এগুলি ডিফিউজারে জ্বালিয়ে রাখলেও গোটা ঘরে ছড়িয়ে পড়বে সুগন্ধ। এমনই এক প্রাকৃতিক রেপেলেন্ট হল 'সিট্রোনেলা তেল'। যা একাধারে যেমন মশা, মাছি থেকে আপনাকে রক্ষা করবে তেমনই প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক হিসেবেও এই তেলের ব্যবহার রয়েছে। ঘর মোছার বালতিতে এক-দু ফোঁটা দিলেই 'ম্যাজিক'। নিমেষেই সুগন্ধে ভরে উঠবে ঘর। বিরত থাকবেন মশা, মাছি ও অন্য কীটের থেকেও।
গৃহিণীদের সিট্রোনেলা এসেনশিয়াল অয়েলের কথা জিজ্ঞেস করলেই বলবে, 'চমৎকারী তেল'। এই তেলের গন্ধ অনেকটা লেবুর মতো। এই তেলের এক ফোঁটাই বেশ সতেজতা আনে। অর্ধেক জল আর অর্ধেক অ্যাপেল সাইডার ভিনিগারের মিশ্রণে কয়েক ফোঁটা সিট্রোনেলা তেল মিশিয়ে ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিন। স্প্রে বোতলে ভরে ব্যাগে রাখুন, যখন খুশি ব্যবহার করতে পারেন।
সিট্রোনেলা ঘাস থেকে বাষ্পপাতন প্রক্রিয়া দ্বারা এই তেল সৃষ্টি করা হয়। মূলত ক্লান্তি, উদ্বেগ, অনিদ্রাকে দূর করতে এই তেল মারাত্বক কার্যকরী। তাছাড়া, ঘাম থেকে মুক্তি পেতেও এই তেলের ব্যবহার করা হয়।
বাড়িতে পোকামাকড়ের অত্যাচারে অনেকেই অনেক ধরণের ফিনাইল বা কেমিক্যাল ব্যবহার করেন। সিট্রোনেলা তেলের এক-দু ফোঁটাতেই ঘরে পোকামাকড়, মশা, জীবাণুর প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। সুগন্ধে ভরা এই সিট্রোনেলা ঘাসের নির্যাস ঘরে ঘরে প্রচলিত।
তবে বর্তমানে দারুণ বেড়ে গিয়েছে এই প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক তথা ত্বক পরিচর্যার এসেন্সিয়াল তেলের ব্যবহার। ফলে, বনদপ্তরের অন্তর্গত নন-টিম্বার বিভাগের ঘামছুট অবস্থা। এবিষয়ে বনদপ্তরের উদ্যান ও কানন বিভাগের (উত্তর) রেঞ্জ অফিসার মানব চক্রবর্তী বলেন, 'সত্যি খুবই ব্যবহার বেড়েছে এই সিন্ট্রোনেলা তেলের। মানুষ ত্বক পরিচর্যা থেকে শুরু করে ঘরের দৈনন্দিন ব্যবহারেও কাজে লাগাচ্ছে এই তেলটিকে। ফলে, বনদপ্তরের তরফে যতই উৎপাদনের চেষ্টা করা হোক না কেন, তা আদতেও যোগানে কম পড়ছে। এতটাই চাহিদা বেড়েছে এই তেলের, যে বর্তমানে সরবরাহ দিতে হিমশিম খাচ্ছি আমরা।'
এদিন মানববাবু আরও বলেন, 'সিট্রোনেলা তেলকে অনেকে বনজ তেল নামেও চেনে। এই তেলের চাহিদা বাজারে থাকলেও সেই জায়গা করে নিচ্ছে নানান ছাপোষা ব্রান্ডের জীবাণুনাশক। কিন্তু বর্তমানে প্রতিটি ঘরে এই প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক তেল যদি ব্যবহার করা হয় তাহলে বাজারে অন্যান্য রসায়ন মিশ্রিত জীবাণুনাশকগুলির প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।'