

ঐতিহ্য মেনেই বার পুজো করল ডালহৌসি ক্লাব। দুই প্রধান আগেই সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল, ময়দানে এবার বার পুজো করবেন না তারা। কিন্তু এখানে কিছুটা ব্যতিক্রম শতাব্দীপ্রাচীন ডালহৌসি ক্লাব। ক্লাবের তাঁবুতে ঐতিহ্য, রীতি মেনে আয়োজিত হল বার পুজো। তবে ক্লাবের কোনও কর্তা আসেননি। শুধু ছিলেন ক্লাবের মালি, স্টাফ-সহ ৪-৫ জন। Photos and Story: Eeron Roy Barman


লকডাউনে নেই কোনও যান চলাচল। তাই পুজো আয়োজন করতে কোনও পুরোহিত পাওয়া যায়নি। ডালহৌসি ক্লাবের মালি ওড়িশার ব্রাহ্মণ হওয়াতে তিনি পুজোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। বার পোস্ট ক্লাবের স্টাফরা নিজেদের উদ্যোগে তুলে নতুন করে রং করেছেন। জোগাড় করা হয়েছিল একটি ফুটবল। সরকারি নির্দেশিকা মেনে বার পুজো অনুষ্ঠানে মুখে মাস্ক পরে ছিলেন পুরোহিত। উপস্থিত প্রত্যেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রত্যেকের মুখেই ছিল মাস্ক। কোনওরকমে পুজোর সরঞ্জাম জোগাড় করে ঐতিহ্য অনুযায়ী বার পুজোর আয়োজন করেন ডালহৌসি ক্লাবের মালি ও স্টাফরাই।


ডালহৌসি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট তপন চাকি জানান, "ক্লাবের মালিরা আমাদের কাছে অনুরোধ করেছিল ঐতিহ্য অনুযায়ী যেন শুধু বার পুজোটা করা হয়। বছরের পর বছর ধরে পয়লা বৈশাখে বার পুজোর হওয়াটা ময়দানে রীতি। আমরা চেয়েছিলাম এইবছর পুজোটা বন্ধ রাখতে। কিন্তু মালিরা নিজেদের উদ্যোগে সব আয়োজন করে। শুনেছি মুখে মাস্ক পড়ে পুরোহিত পুজো করেছেন। আমরা কোনও কর্তাই ক্লাবে যাইনি। আগামী বছর বড় করে অনুষ্ঠান করা হবে। তবে ঐতিহ্য অনুযায়ী মালিরা পালন করায় আমরা খুশি।"


পুজোর দায়িত্বে থাকা ডালহৌসি ক্লাবের মালিক অরুণ নায়েক বলেন, "আমি কিছু মন্ত্র জানি। সারাবছর ক্লাবে থাকা ঠাকুর পুজো করি। বার পুজোর ঐতিহ্যটা ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছি। আমার বাবা,কাকারা দেখেছিলেন। কঠিন পরিস্থিতিতেও একেবারে পুজোটা বন্ধ করতে মন চায়নি। সেই কারণেই আমি নিজেই পুজোর দায়িত্ব নিয়েছি। ক্লাবের বাকি স্টাফরা সাহায্য করেছে। স্টাফরা নিজেদের উদ্যোগে বার পোস্ট রং করে সাজিয়েছে। আশা করি সব সমস্যা মিটে যাবে আমাদের ক্লাব ভাল খেলবে।"


বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন কলকাতা ময়দানের ঐতিহ্য বার পুজো। বছরের পর বছর ধরে ১ বৈশাখ ক্লাব তাঁবুতে বার পুজো করেন কর্তারা। নতুন করে বার পোস্ট বসানো হয় ক্লাবের মাঠে। পুজো করা ফুটবল। বাঙালির ফুটবল-ঐতিহ্যের বার পুজো জড়িয়ে রয়েছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের জেরে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। পয়লা বৈশাখ সকালেই লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে ময়দানের সেই চেনা পুজোর ছবি উধাও। ইস্টবেঙ্গল কোনওরকম পুজো করেনি এদিন। মোহনবাগান মন্দিরের ফুল নিয়ে এসে বারে ছুঁয়ে ঐতিহ্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। এরিয়ান, জর্জ টেলিগ্রাফ থেকে তালতলা, রাজস্থান সহ প্রায় কোন ক্লাবে এবার পুজো আয়োজন করেনি। ব্যতিক্রম শুধু ডালহৌসি ক্লাবে।