Midnapore News: মহাভারত থেকে নেতাজি! ইতিহাসের সাক্ষী তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি! চট করে ঘুরে আসুন
- Published by:Piya Banerjee
Last Updated:
Midnapore News: এই রাজবাড়ির আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে নানা ইতিহাস! ছোট্ট ছুটিতে নিজে চোখে দেখে নিন সেই সব! জানুন অজানা কথা!
মহাভারত থেকে আজকের ভারত চলমান ইতিহাসের সাক্ষী তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি। রাজবাড়ির ইট পাঁজরে গাঁথা রয়েছে সেই ইতিহাস। মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ থেকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামী ইতিহাসের নানা পর্বের সঙ্গে যুক্ত ময়ূর রাজবংশের রাজপুরুষেরা। এক সময়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের পীঠস্থান ছিল এই রাজবাড়ি। প্রায় পাঁচ হাজার বছরে বহমান কালের নানান ইতিহাসের সাক্ষী তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি। বর্তমানে ভগ্নপ্রায় রাজবাড়ির আনুমানিক বয়স প্রায় চারশো বছরের কাছাকাছি।(লেখা ও ছবি: Saikat Shee)
advertisement
২০০৪ সালে এই তাম্রলিপ্ত রাজবাড়িটি হেরিটেজ স্বীকৃতি লাভ করে। মধ্যযুগীয় ইন্দো ইসলামীয় স্থাপত্যের নিদর্শন তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি। তাম্রলিপ্ত রাজপরিবারের উল্লেখ পাওয়া যায় মহাভারতে। মহাভারতের সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় তাম্রলিপ্তের রাজকুমার তাম্রধ্বজ উপস্থিত ছিলেন। এর পরে উল্লেখ মেলে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে। যুবরাজ তাম্রধ্বজ বিশাল হস্তিবাহিনী সঙ্গে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে কৌরবদের পক্ষ নিয়ে পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে করেন। মহাভারতে তাম্রলিপ্তের রাজ পরিবারের তৃতীয় উল্লেখ পাওয়া যায় কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর, সম্রাট যুধিষ্ঠিরের অশ্বমেধ যজ্ঞের সময়ে। (লেখা ও ছবি: Saikat Shee)
advertisement
একালের ভারতের মধ্যযুগে দেখতে পাই তাম্রলিপ্তর নিদর্শন। মধ্যযুগে তাম্রলিপ্ত বন্দর ছিল অন্যতম। এই তাম্রলিপ্ত বন্দর দিয়ে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে সিংহল যাত্রা করেছিলেন সম্রাট অশোকের পুত্র ও কন্যা। এছাড়াও এই তাম্রলিপ্ত নগরীতে এসেছিলেন বিখ্যাত পরিব্রাজক ফা হিয়েন, হিয়েন সাঙ, পাঁচ ইনিয়েত। এর থেকে জানা যায় প্রাচীন তাম্রলিপ্ত নগরী গৌরবময় ইতিহাসের কথা। আধুনিক কালে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ির কথা। তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পীঠস্থান। স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি। (লেখা ও ছবি: Saikat Shee)
advertisement
তাম্রলিপ্ত রাজপরিবারের ৬২তম রাজা সুরেন্দ্রনারায়ণ, তাঁর পুত্র ধীরেন্দ্রনারায়ণ এবং নাতি কুমারেন্দ্রনারায়ণ স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশচন্দ্র সামন্ত, অজয় মুখোপাধ্যায়, সুশীলকুমার ধাড়া নেতৃত্বে তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি হয়ে ওঠে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বাসস্থান এবং আন্দোলনের পীঠস্থান। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন থেকে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা রাখে তাম্রলিপ্ত রাজ পরিবার। ১৯০৫ সালে অবিভক্ত বাংলায় বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ আন্দোলন তীব্র হয়েছিল। তমলুকে ব্রহ্মা বারোয়ারি ময়দানে রাজা সুরেন্দ্রনারায়ণের নেতৃত্বে বিরাট জনসমাবেশ বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধে অংশ নেয়। ১৯৩০ সালে লবণ সত্যাগ্রহের সময়ে নরঘাটে লবণ আইন ভঙ্গের জন্য বিশাল মিছিল রাজবাড়ি থেকে রওনা হয়েছিল। নেতৃত্বে ছিলেন ধীরেন্দ্রনারায়ণ। (লেখা ও ছবি: Saikat Shee)
advertisement
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পীঠ স্থান হওয়ায় মেদিনীপুরের কুখ্যাত জেলাশাসক পেডি রাজা সুরেন্দ্রনারায়ণকে নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজপ্রাসাদ থেকে সত্যাগ্রহীদের তাড়িয়ে দিতে। কিন্তু রাজা রাজি না হওয়ায় পেডি তাঁকে বন্দি করেন এবং মেদিনীপুরে রওনা দেন। কিন্তু রাজাকে বন্দী বানানোর খবর ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। পাঁশকুড়ার চনশ্বরপুরে মুসলিম সম্প্রদায় তাঁদের রাস্তা আটকান। বাধা পেয়ে রাজাকে ফিরিয়ে এনে তমলুকের পায়রাটুঙ্গি ডাকবাংলোয় বন্দি করা হয়। পরে রাজাকে মেদিনীপুর সেন্ট্রাল ও দমদম জেলে পাঠানো হয়েছিল। ১৯৩৮ সালের ১১ এপ্রিল সুভাষচন্দ্র বসু তমলুকে এলেন। প্রথমে সভাস্থল ছিল রাখাল মেমোরিয়াল ময়দান। কিন্তু শাসকদের চাপে মালিক পক্ষ পিছিয়ে গেলেন। কংগ্রেস নেতারা দেখা করলেন রাজা সুরেন্দ্রনারায়ণের সঙ্গে। রাজবাড়ির প্রাচীণ আম ও গোলাপবাগান কেটে রাতারাতি সভার মাঠ তৈরি হল। (লেখা ও ছবি: Saikat Shee)
advertisement
রাতে হ্যাজাক জ্বেলে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সভা হয়। তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি নির্মাণ সম্পর্কে যে তথ্য উঠে আসে। তাহল, তাম্রলিপ্তের ময়ূর রাজা লক্ষ্মীনারায়ণ রায় ১৮৩৭ সালে রাজবাড়ি তৈরি করানোর কাজ শুরু করেন। দু’লক্ষ টাকা দিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল। দোতলা রাজবাড়ির কাজ এগিয়েছিল অনেকটাই। রাজপ্রাসাদ তৈরির সময়ে ব্রিটিশদের সঙ্গে তাম্রলিপ্ত রাজ পরিবারের হঠাৎই খাজনা সংক্রান্ত বিবাদ লাগে। ইতিহাসবিদদের মতে এই খাজনা সংক্রান্ত বিবাদ ব্রিটিশদের দেশীয় রাজাদের লুটে নেওয়ার এক প্রকার কৌশল ছিল। খাজনা নিয়ে সময় ‘সূর্যাস্ত আইন’ ছিল। এই আইন অনুযায়ী, দেশীয় রাজা, জমিদার বা ইজারাদারদের নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের আগে খাজনা জমা দিতে হত। না পারলে তাঁদের সম্পত্তি দখল করে নেওয়া হত। (লেখা ও ছবি: Saikat Shee)
advertisement
সেই সময়ে মেদিনীপুর শহরে রাজস্ব জমা দিতে যেতে হত। কিন্তু রাস্তা নিরাপদ ছিল না। পথে ডাকাতের ভয় ছিল। রাজা লক্ষ্মীনারায়ণের সেনারা রাজস্ব নিয়ে নদী এবং স্থলপথে মেদিনীপুরের দিকে যাত্রা করেন। কিন্তু ডাকাতের ছদ্মবেশে ব্রিটিশ শাসকেরা সেই রাজস্ব লুঠ করে। রাজস্ব জমা দিতে না পারায় রাজপরিবারের সম্পত্তির বড় অংশ নিলাম হয়ে যায়। সেই সময় ব্রিটিশদের তাম্রলিপ্ত রাজা লক্ষ্মীনারায়ণ ন’লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা খাজনা দিতেন। (লেখা ও ছবি: Saikat Shee)
advertisement
সম্পত্তি নিলাম হওয়ায় তিনি প্রাসাদ নির্মাণ সম্পূর্ণ করতে পারেননি তিনি। ১৩৪৯ বঙ্গাব্দের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তাম্রলিপ্ত পুরনো রাজপ্রাসাদ। রাজপরিবারের সদস্যরা মূল রাজবাড়ির পিছনের দিকে ‘রানি মহলে’ চলে যান। বর্তমানে পুরনো প্রাসাদ পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের অধীনে। সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। (লেখা ও ছবি: Saikat Shee)
advertisement
ইংরেজদের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ভারতের প্রাচীনতম পরিবারগুলোর মধ্যে অন্যতম তাম্রলিপ্ত রাজপরিবার। যা অন্তত ৫০২০ বছরেরও পুরনো। রাজ পরিবারের এই রাজপ্রাসাদটি ভগ্নপ্রায়। ২০০৪ সালে তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি হেরিটেজ স্বীকৃতি পায়। বর্তমানে তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি ঘিরে টুরিজম গড়ে তোলার প্রয়াস শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও রাজ পরিবার। (লেখা ও ছবি: Saikat Shee)