Knowledge Story: লালবাজার, নীল-সবুজ-সাদাবাজার নয়! কলকাতা পুলিশের সদর দফতরের নাম লালবাজরই কেন জানেন?
- Published by:Raima Chakraborty
- news18 bangla
Last Updated:
Knowledge Story: কখনও ভেবেছেন নীলবাজার, সাদাবাজার, সবুজবাজার না হয়ে ঠিক কী কারণে এই বাড়িটির নাম লালবাজার হল?
advertisement
advertisement
advertisement
পোস্টে লেখা হয়েছিল, '' লালবাজার' নামের নেপথ্যে... রোজকার কাজের খতিয়ান নয়। আজ একটু স্বাদবদল। স্বল্প পরিসরে ভাগ করে নিচ্ছি 'লালবাজার' নামের নেপথ্যকথা। শহরের ইতিহাস বিষয়ে যাঁরা আগ্রহী, তাঁরা চিন্তার রসদ পেতে পারেন। অনেকেই ভাবেন, কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তরের বাড়িটির রং লাল বলেই নাম 'লালবাজার '। সত্যিই কি তাই?'
advertisement
'আজ থেকে প্রায় আড়াইশো বছর আগের কথা।রাস্তাটি ছিল ছবির মতো সুন্দর। আজকের কলকাতার যেখানে বিবাদী বাগ, তার উত্তর-পূর্ব কোণ থেকে বৌবাজার পর্যন্ত ছিল তৎকালীন ‘ক্যালকাটা'র এই রাস্তাটির ব্যাপ্তি। ইংরেজদের মতে রাস্তাটি ছিল ‘বেস্ট স্ট্রিট অফ ক্যালকাটা’। লন্ডনের রাস্তাগুলির আদলে বানানো এই সড়কপথের নাম ব্রিটিশরা দিয়েছিলেন 'অ্যাভিনিউ টু দ্য ইস্টওয়ার্ড’। আর স্থানীয়রা বলতেন ‘গ্রেট বাংলো রোড’। কারণ, এই রাস্তাতেই অবস্থিত ছিল একটি প্রাসাদোপম বাড়ি, যার মালিক ছিলেন তৎকালীন কলকাতার অন্যতম ধনকুবের ব্যবসায়ী জন পামার।'
advertisement
advertisement
'লালবাজার – এই নামকরণ সম্পর্কে নানা মুনির নানা মত ইতিহাসের পাতায়, গবেষণার নথিতে। কেউ বলেন, তৎকালীন লাল রঙের প্রাচীন ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গটির ছায়া পড়ত লালদীঘিতে। সেই থেকেই এলাকাটির নাম ' লালবাজার। ‘লাল’ শব্দটির সূত্রপাতের কারণ দর্শাতে কেউ কেউ তৎকালীন পুলিশ কনস্টেবলদের লাল পাগড়ির প্রসঙ্গও নিয়ে আসেন। যদিও, দ্বিতীয় মতটির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়, কারণ, বাড়িটির নাম ‘লালবাজার’ হওয়ার পরবর্তীকালে লাল পাগড়ি পরতে শুরু করেন কনস্টেবলরা।'
advertisement
'অনুমান করা হয় যে, বর্তমান লালবাজার এলাকায় সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের একটি কাছারিবাড়ি ছিল। দোলের সময়, লালদীঘি ও তার সংলগ্ন এলাকা আবির ও কুমকুমের রঙে লালবর্ণ ধারণ করত। সেই থেকেই লালবাজার’ নামকরণ, এই ধারণা অনেকের। কিন্তু এর সম্ভাবনা কম। কারণ, রায়চৌধুরীরা বংশপরম্পরায় ছিলেন শাক্ত বা কালীর উপাসক। ফলে বৈষ্ণবদের দোল উৎসব নিয়ে মাতামাতি করা কতটা সম্ভব ছিল তাঁদের পক্ষে, সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়।'
advertisement
'রেভারেন্ড জেমস্ লঙ লাল ইটে তৈরি মিশন চার্চ বা লাল গির্জাটিকে লালবাজারের নামকরণের কারণ হিসেবে ইঙ্গিত করেছিলেন। এই লাল গির্জাটি ১৭৬৮ সালে নির্মাণ করেন জন জাকারিয়া কারন্যান্ডার, যিনি ছিলেন বাংলার প্রথম প্রোটেস্টান্ট পাদ্রী। অথচ গির্জাটির প্রতিষ্ঠার বহু আগেই ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির নথিপত্রে ১৭৪৫ সাল থেকেই লালবাজারের উল্লেখ পাওয়া যায়। জন হলওয়েল, যিনি ১৭৫১-৫৬ সালে কলকাতার কালেক্টর ছিলেন, এই এলাকার সম্পর্কে বলেছেন – এটি বাজার নয়, বরং জনবসতি হিসেবেই পরিচিত ছিল। দশ বিঘা নয় কাঠা জমি এবং প্রায় ৮১টি বাড়ি ছিল এই অঞ্চলে।গবেষক ভোলানাথ চন্দ্র উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে লালবাজার-কে একটি বাজার হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর মতে, এই বাজারটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন লালমোহন বসাক।সেই থেকেই নাকি ' লালবাজার'।'
advertisement
'অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে লালবাজার এলাকায় ব্রিটিশরা অনেকটা সময় কাটাতেন। তখনকার বিখ্যাত রিসর্ট ‘হারমোনিক ট্যাভার্ন’ অবস্থিত ছিল মূল বাড়িটির গা ঘেঁষে।উচ্চবিত্ত ইংরেজ নারী-পুরুষের কাছে তুমুল জনপ্রিয় ছিল এই ট্যাভার্ন, যা সুর এবং সুরায় জমজমাট হয়ে উঠত প্রতি সন্ধ্যায়। ওয়ারেন হেস্টিংস-এর ফেয়ারওয়েল পার্টি আয়োজিত হয়েছিল এখানেই। 'লাল'-এর উৎস সন্ধানে পুরনো নথিপত্রে ‘loll’ শব্দটিও পাওয়া গেছে, যা ‘loll shrub’-এর অপভ্রংশ। ‘লল শ্রব’ বা লাল সুরা। এই সূত্র ধরেই উল্লেখ পাওয়া যায় ' loll bazar’-এরও। নানা মত। তবে যতই থাক মতানৈক্য, রং-এর বিচারে যে নামের উদ্ভব নয় লালবাজারের, অনুমান করাই যায়। শেষ বিচারে উৎস সন্ধান অমীমাংসিতই। অবশ্য নামে কী-ই বা এসে যায়?'