মার্কণ্ডেয় পুরাণে শ্রীশ্রী চণ্ডী উত্তরলীলায় শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামক দুই অসুরকে বধ করার সময় দেবীর যে মূর্তির কল্পনা করা হয়েছিল তা ছিল মহাসরস্বতী। এ মূর্তি অষ্টভূজা - বাণ, কার্মূক, শঙ্খ, চক্র, হল, মুষল, শূল ও ঘন্টা ছিল তাঁর অস্ত্র। তাঁর এই সংহারলীলাতেও কিন্তু জ্ঞানের ভাবের হানি ঘটেনি৷ কারণ তিনি 'একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়াকা মমাপরা' বলে মোহদুষ্ট শুম্ভকে অদ্বৈত জ্ঞান দান করেছিলেন। হিন্দুদের দেবী হওয়া সত্ত্বেও বৌদ্ধ ও জৈনদের কাছেও পুজো পেয়েছেন সরস্বতী।
গান্ধারে পাওয়া বীণাবাদিনী সরস্বতীর মূর্তি থেকে বা সারনাথে সংরক্ষিত মূর্তিই তার প্রমাণ৷ অনেক বৌদ্ধ উপাসনালয়ে পাথরের ছোটো ছোটো মূর্তি আছে তাতে দেবী বীণা বাজাচ্ছেন, অবিকল সরস্বতীমূর্তি। মথুরায় জৈনদের প্রাচীন কীর্তির আবিষ্কৃত নিদর্শনে সরস্বতীর যে মূর্তি পাওয়া গিয়েছে সেখানে দেবী জানু উঁচু করেএকটি চৌকো পীঠের উপর বসে আছেন, এক হাতে বই। শ্বেতাম্বরদের মধ্যে সরস্বতী পুজোর অনুমোদন ছিল।
সরস্বতীর বাহন হাঁস। কারণ সরস্বতী ব্রহ্মবিদ্যা। জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে সর্বত্রই হাঁসের সমান গতি, যেমন জ্ঞানময় পরমাত্মা সর্বব্যাপী - স্থলে, অনলে, অনিলে সর্বত্র তাঁর সমান প্রকাশ। হংস জল ও দুধের পার্থক্য করতে সক্ষম। জল ও দুগ্ধ মিশ্রিত থাকলে হাঁস শুধু সারবস্তু দুগ্ধ বা ক্ষীরটুকুই গ্রহণ করে, জল পড়ে থাকে।
জ্ঞান সাধনার ক্ষেত্রেও হংসের এ স্বভাব তাত্পর্য বহন করে। হাঁস জলে বিচরণ করে কিন্তু তার দেহে জল লাগে না। মহাবিদ্যা প্রতিটি জীবের মধ্যে থেকেও জীবদেহের কোনও কিছুতে তাঁর আসক্তি নেই, তিনি নির্লিপ্তা। যে সাধক দিবারাত্র অজপা মন্ত্রে সিদ্ধ তিনিই হংসধর্মী। মানুষ সুস্থ শরীরে দিবারাত্র মধ্যে ২১ হাজার ৬০০ 'হংস' এই অজপা মন্ত্রজপরূপে শ্বাসপ্রশ্বাস করে৷ মানুষ যতদিন এই স্বাভাবিক জপ উপলব্ধি করতে পারে না, সুতরাং ব্রহ্মবিদ্যারও সন্ধান পায় না।'