"যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমো..."। মন্ত্রটি কানে এলেই শরতের আকাশ, শ্বেতশুভ্র কাশফুলের মাথা দোলানোর কথা মনে পরে। তবে শিমূল-পলাশের কালেও যদি এক মন্ত্রোচ্চারিত হয়, সেই কাশজড়িত বাকের বাদ্যি সকাল সকাল বেজে উঠলে কেমন হয় বলুন তো? (Story & Image: Vaskar Chakraborty)
বসন্তে শরতের আমেজ! আর এই আমেজ আনে পারে আদি দূর্গাপুজো। জানেন কি এই 'আদি দূর্গাপুজো'? এ হল বাসন্তী পুজো বা বাসন্তী দূর্গাপুজো। স্মরণাতীত কাল থেকে এই পুজো এ ভূখণ্ডে হয়ে আসছে। যা বর্তমান সময়ে দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গ মিলিয়ে গুটিকয়েক পরিবারের মধ্যেই রয়ে গেছে সীমাবদ্ধ। (Story & Image: Vaskar Chakraborty)
তবে বনেদি বাড়ির পুজোতে হই-হুল্লোড় ও মজাই হয় আলাদা। কিন্তু বনেদি বাড়ির পুজোই বলেই যে এক হবে তা নয়। শিলিগুড়ি শহরের বুকে এমনই এক পুজো, এমনই এক আরাধনার সাক্ষী থাকছেন সকলে। শহরের হাকিমপাড়ার বাসন্তী ভিলাতে বাসন্তীপুজো হয়ে আসছে বিগত ২৩ বছর ধরে। কিন্তু এই যেন এক অন্যরকম পুজো। দেবীর নামও আলাদা। কী এই পুজো? অন্য বাসন্তীপুজোর থেকে কি আলাদা এই পুজো? দেবীর নাম কি? কেনই বা এই নাম? (Story & Image: Vaskar Chakraborty)
এই পুজোর প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে আমরা কথা বলে এর অন্দরের বহু রীতি ও তথ্য আমরা জানতে পারি। দক্ষিণবঙ্গে এই পুজো হয়ত বিভিন্ন বাড়িতে হয়ে থাকে। তবে যে রীতি মেনে গঙ্গাবক্ষের ওপারে পুজো হয়ে আসছে সেই রীতিকে কব্জা করে উত্তরের ভিটেমাটিতে এই পুজো শাস্ত্রীবাড়িতেই প্রথম। নাম সেই দেবীর 'শাকম্বরী'। বৃহন্নন্দিকেশ্বর পুরাণোক্ত পদ্ধতিতেই দেবী আরাধ্যা। সজ্ঞানে, সমহিমায় এবারের মহাআড়ম্বরে পূজিত হবেন দেবী (Story & Image: Vaskar Chakraborty)
প্রতিষ্ঠাতা ঋষিকেশব শাস্ত্রী বলেন, 'এই পুজো শুরু হয় ২০০০ সালে। তখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। তখন কিছুই বুঝতাম না। বাড়িতে প্রচুর ঘাত-প্রতিঘাত হয়েছে সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে, যে বাচ্চা একটা ছেলের কথা শুনে পুজো? সেখানে বাবার বিশাল এক আপত্তি ছিল। প্রচুর কথাবার্তা এবং মানানোর পর পুজোর সিদ্ধান্ত হয়। মা ভীষণভাবে সাপোর্ট করেছিল। তারপরও বাঁধা আসে। কিন্তু পুজোর ঠিক ১৭ দিন আগে আমার মা স্বপ্ন দেখে। তার পরপর বাবাও স্বপ্ন দেখে। তাই এটা নিয়ে বাবা আর কোনও বাঁধা দেয় না। তাই পুজো শুরু হয়। তখন আমাদের আর্থিক দিক খুব একটা যে স্বচ্ছল ছিল, তা নয়। খুব একটা খারাপও ছিল না। তবে দূর্গাপুজো করার মতো যে একটা মানসিকতা দরকার, তা ছিল না। একটা বাচ্চা ছেলের ইচ্ছায় এই অনুমতি দেওয়া বা স্বীকৃতি দেওয়া, এটার জন্য সবাই প্রস্তুত ছিল না। ২০০০ সালে যখন শুরু হল, ২০০১ সালে তখন আর কাউকে কিছু বলতে হয়নি।'(Story & Image: Vaskar Chakraborty)
আর এখন শাকম্বরী কেমন আছেন? পছন্দ কি একইরকম নাকি অন্ন-উপান্নের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে? প্রশ্নের জবাবে ঋষি বলেন, 'মা আমার আমিষভোজী। তাই সপ্তমী থেকে নবমী মাছভোগ হয়। সঙ্গে ২০-৫০ রকমের মিষ্টি, ২-৩ রকমের দই, এছাড়া ১১-১৫ রকমের ভাজা সহ নানা পদ। এছাড়াও মরশুমের যাবতীয় সবজির পদ তো থাকছেই। (Story & Image: Vaskar Chakraborty)
আর মায়ের সাঁজ? তাতে কি আলাদা থাকছেন? প্রশ্ন করলে ঋষি হেসে বলেন, 'দেবীর সাঁজ আমরা কি করে ঠিক করব বলতে পারেন? সে যেমন চায় নিজেকে সাজাতে তেমনই সাঁজে সাজবেন। তবে নাকের নথ, মাথায় মুকুট, চিক, সীতাহার, ঝাপটা, শাখা পলা বাঁধানো, তিকলি, টায়েরা, কানপাশা, লটকন, কোলাঙ্কি, মানতাসা সহ নানা গহনা। সঙ্গে পড়নে বেনারসি তো থাকছেই।' (Story & Image: Vaskar Chakraborty)
তবে এই 'শাকম্বরী' শব্দের অর্থ কী? জবাবে, 'মায়ের ১০৮ রূপের মধ্যে এই রূপ অন্যতম। শাস্ত্র মতে, পৌষ পূর্ণিমা দেবী শাকম্বরী জয়ন্তীর সঙ্গে মিলিত হয়। তিনি দেবী দূর্গার একজন অবতার, যিনি এই পূর্ণিমা তিথিতে পৃথিবীতে খরা পরিস্থিতি দূর করতে উদ্ভব করেছিলেন। তাই, তিনি উদ্ভিদের দেবী হিসাবেও পূজিত হন। কিন্তু আমার স্বর্গীয়া মা-য়ের এই নাম ভীষণ পছন্দ ছিল বলেই তিনি রাখেন। প্রথম গয়না ছিল শাখা-বাঁধানো। মূর্তি তৈরির সময়ও শাখা হাতে পড়িয়ে দেওয়া হয়।'(Story & Image: Vaskar Chakraborty)
আচ্ছা, বাসন্তী দূর্গাপুজো হলেও, দেবী এখানে বিশেষভাবে বিশেষ রীতি মেনে পূজিতা। নামেও আলাদা তিনি; শাকম্বরী। বিশেষ কোনো মন্ত্রে বা আলাদা কিছু কি বয়েছে যা জানাতে চান, প্রশ্ন করা হলে ঋষি পুনরায় হেসে বলেন, "কোনওরকম মন্ত্র ছাড়াও যদি মাকে 'মা' বলে ডাকা হয়, তাহলেও তিনি সাড়া দেবেন। কিন্তু যেহেতু শাস্ত্র মতে পুজোর রীতি চলে এসেছে বছরের পর বছর ধরে, তাই সেই পথই অনুসরণ করা হয়।" (Story & Image: Vaskar Chakraborty)