সকলকেই আক্ষেপ করতে শোনা যায় যে, শৈশবের দিনগুলিই বড্ড রঙিন ছিল। আসলে বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শৈশবের রঙগুলিও ফিকে হতে শুরু করে এবং পাল্লা দিয়ে কাঁধে চাপতে থাকে দায়িত্বের বোঝা। কেরিয়ার তৈরি করার চাপ তো থাকেই। তার সঙ্গে কর্মজীবন এবং সামাজিক জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা তো রয়েইছে। আর এত কিছু সামলাতে সামলাতে তার প্রভাব পড়তে পারে শরীর এবং মনের উপর। আসলে কাজের চাপে আমরা সঠিক ভাবে নিজেদের শরীর ও মনের যত্ন নেওয়ার কথাই ভুলে যাই। তার সঙ্গে কাজের জেরে বিশ্রাম নেওয়া তো হয়ই না। পাশাপাশি মানসিক চাপের কারণে ঘুমটাও ঠিক ভাবে হয় না। আর বিশ্রাম এবং ঘুমের অভাবে শরীর ও মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে ঘিরে ধরতে থাকে নানা রকম সমস্যা। তার মধ্যে অন্যতম হল উত্তেজনা, অস্থিরতা ইত্যাদি। যদিও অনেকেই মনে করেন যে, একটু ঘুমিয়ে নিলেই এই ধরনের সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু বিষয়টা ঠিক তেমন নয়। কারণ অনেক সময় দেখা যায় যে, কখনও কখনও ১০-১২ ঘণ্টা ঘুমোনোর পরেও মন ও শরীরের ক্লান্তিভাব যায় না। তা-হলে শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি মনকে শান্ত করার জন্য আমাদের কী করা উচিত? মনে রাখতে হবে, শুধু বিশ্রাম নিলেই হবে না। তার সঙ্গে আরও অনেক কিছু করতে হবে শরীর ও মনকে ঝরঝরে রাখার জন্য। দেখে নেওয়া যাক, শরীর ও মনকে সতেজ রাখার সেই সব উপায়।
ফিজিক্যাল রেস্ট: শরীর ও মনের তারুণ্য ধরে রাখতে শারীরিক বিশ্রাম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ভাবে শারীরিক বিশ্রাম জরুরি। তার মধ্যে অন্যতম হল শারীরিক কসরত। সারা দিনের কাজের পর যদি যোগাসন কিংবা ওয়ার্কআউট অথবা কার্ডিও করা যায়, তা-হলে শরীর ও মন দুইই শান্ত হয়। আসলে এক-এক জন মানুষ এক-এক ধরনের এক্সারসাইজ করতে পছন্দ করে থাকে। অনেকেই আবার কঠোর শারীরিক কসরত পছন্দ করেন না। অথচ তাঁরা চান পেশি যেন সুস্থ-সবল থাকে ও শিথিল হয়। আর তার জন্য সবথেকে ভালো হল ম্যাসাজ থেরাপি। আসলে ম্যাসাজ করালে পেশি তো শিথিল হয়ই, সেই সঙ্গে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। এর সঙ্গে সঠিক এবং পর্যাপ্ত ঘুমও শরীর-মন তরতাজা রাখার দারুণ উপায়। তবে প্রয়োজনের বেশি কিন্তু এক্সারসাইজ করলে চলবে না। তাতে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। তাই সঠিক সময় নিয়ে পর্যাপ্ত ঘুমোতে হবে।
ক্রিয়েটিভ রেস্ট: নাম শুনে অনেকেই ঘাবড়ে যেতে পারেন। কিন্তু বিষয়টা আসলে কী? যাঁদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে হয় এবং নতুন নতুন আইডিয়া খুঁজে বার করতে হয়, তাঁদের এই ধরনের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। এবার ভেঙেই বলা যাক বিষয়টা। বিস্ময় এবং বিস্ময়ের অনুভূতি পুনরুজ্জীবিত করার জন্যই দরকার হয় ক্রিয়েটিভ রেস্টের। কবে প্রথম সুন্দর সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের দৃশ্য চাক্ষুষ করেছিলেন মনে আছে। শুধু তা-ই নয়, প্রকৃতির নানা সৌন্দর্য এবং রঙ সমুদ্র ও পাহাড় দেখার অভিজ্ঞতাও কি মনে আছে। তাই বাইরের প্রকৃতির সুন্দর দৃশ্য দেখার মাধ্যমেও নিজের শরীর ও মনকে পুনরুজ্জীবিত করা যাবে। তাই এই ধরনের বিশ্রামের জন্য মাঝেমধ্যে বাড়ির বাইরে ছাদে কিংবা বাগানে ঘুরে বেড়ানো যেতে পারে।
শরীর ও মনকে বিশ্রাম দেওয়ার পাশাপাশি শরীরের ইন্দ্রিয়গুলিকেও বিশ্রাম দেওয়া খুবই জরুরি। বিষয়টা ঠিক কী রকম? আসলে উজ্জ্বল আলো, কম্পিউটারের স্ক্রিন, পারিপার্শ্বিক আওয়াজ এবং আরও নানা রকম কারণে আমাদের শরীর ও মন ক্লান্ত হয়ে যায়। আর অফিসে অনেকটা সময় কাটানোর কারণে এমনটা হতেই পারে। সে কাজ অফিসে বসে করা হোক কিংবা জুম সেশনের মাধ্যমেই হোক। আর এই ধরনের বিষয় এড়িয়ে যাওয়া খুবই কঠিন। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে শুধু এক মিনিট সময় বার করে চোখ বুজে থাকতে হবে। তা-হলেই বিশ্রাম পাবে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো।
মেন্টাল রেস্ট: শরীর ও মন পুনরুজ্জীবিত করার জন্য মানসিক শান্তিও সমান ভাবে জরুরি। আসলে না-চাইলেও মনে নানা রকম চিন্তা-ভাবনা চলেই আসে। আর সেটার কারণেই মানসিক শান্তিতে ব্যাঘাত ঘটে। আর মানসিক শান্তি না-থাকলে কাজের ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়বে। শুধু তা-ই নয়, ঘুমের রুটিনেও বিঘ্ন ঘটবে এবং এনার্জির মাত্রা কমে আসবে। আর ঘুমোনোর পরেও ক্লান্তিভাব যায় না। তাই মনের উপর যাতে বিশেষ চাপ না-পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ইমোশনাল রেস্ট: আবেগ এবং অনুভূতির কারণেও অনেক সময় শরীর ও মন বিশ্রাম পায় না। আসলে গোটা পৃথিবীতে প্রচুর মানুষ রয়েছে, যাদের মনে অনেক জটিল অনুভূতির আনাগোনা থাকে। তাই মাঝেমধ্যে আমি কোথায় আছি, কিংবা আমি কে, সেটা ভুলে গিয়ে কিছু গিয়ে ইতিবাচক চিন্তায় মনোনিবেশ করতে হবে। যাতে রাগ, উত্তেজনার মতো অনুভূতিগুলি মন থেকে মুছে যায়। তাই মনকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য প্রার্থনা, মেডিটেশন কোনও সামাজিক কার্যকলাপের মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। এ-ছাড়া নিজের ভালো লাগার কোনও কাজেও মন দেওয়া যেতে পারে।