ইলিশ, পাবদা ছাড়ুন...! ক্যালসিয়ামের কারখানা এই 'মাছ'! শক্ত রাখে হাড়, কমায় কোলেস্টেরল, বুদ্ধির বিকাশে 'ব্রক্ষ্মাস্ত্র', নাম শুনলেই ছুটবেন বাজার!

মাছ নিয়ে বাঙালির আলাদাই আবেগ। তাই স্বদেশ হোক বা বিদেশ, মাছের খোঁজে বাজারে হানা দেওয়ার মজাই আলাদা। বাজারে গিয়ে নেড়ে চেড়ে মাছ না দেখলে মন ভাল হয় না অনেকেরই। আবার পাতেও মাছ না থাকলে কারও কারও মুখ ব্যাজার হয়ে যায় মুহূর্তে।

কিন্তু কোন মাছ শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ভাল আর কোন মাছ খেলে আপনার উপকার এই নিয়ে সম্যক ধারণা নেই অনেকেরই। কেউ কেউ ভাবেন চেনা মাছের মধ্যে থাকা বাঙালির প্রিয় রুই-কাতলা বা ইলিশ, পাবদাতেই আছে সব উপকার।

কিন্তু পুষ্টির দিক থেকে এইসব মাছকেও দশ গোল দিতে পারে কিছু অল্প চেনা দুর্দান্ত ঔষধীগুণ সম্মত মাছ। আসলে এই সব মাছ বাজারে একটু খুঁজলেই পাওয়া যায় কিন্তু আদৌ এই মাছের গুরুত্ব সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই অনেকেই এড়িয়ে যান।

সুস্বাদু অথচ সস্তা এমনই এক মাছের সুলুক সন্ধান দেওয়া যাক আজ এক প্রতিবেদনে। আজ যেই মাছটির গুণাগুণ বলে দেব আমরা সেই মাছের নাম প্যারট মাছ।

এই প্যারটফিশকে বাংলায় 'তোতা মাছ' বলা হয়। এটি একটি রাসে পরিবারের (ল্যাব্রিডে) মাছ। আসলে এই মাছের মুখের গঠন তোতাপাখির ঠোঁটের মতো হওয়ায় তাদের এই নামে ডাকা হয়।

আসুন আজ এই প্রতিবেদনে প্যারট মাছের ঔষধি উপকারিতা এবং বিশেষত্ব সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এই মাছের ঔষধি গুণ জানলে আপনি এখনই ছুটবেন বাজার। এমন চমৎকার গুনের আধার এই মাছটি।

নিউট্রিসেন্সের তালিকাভুক্ত পুষ্টিবিদ এবং বিশিষ্ট ডায়েটিশিয়ান, ওয়ালেরিয়াসবলেন, "এই ধরণের মাছের নিয়মিত সেবন অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করতে পারে, কোলেস্টেরল ও শক্তি বৃদ্ধিতে দুর্দান্ত কার্যকরী হতে পারে এই মাছ। তবে এটি রাখাও জরুরি যে কিছু কিছু মাছের পারদ বেশি হতে পারে এবং কিছু উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য উদ্বেগ রয়েছে। সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে"।

জেলেরা এই মাছটিকে প্যারটফিশ বলে ডাকে কারণ এর রঙ সবুজ এবং লালের মতো উজ্জ্বল, এবং এর সামনের চোয়াল লম্বাটে এবং দেখতে তোতাপাখির ঠোঁটের মতো। দক্ষিণ ভারতে এর নাম "পেরুন্ধিরাল" মাছ। বৈজ্ঞানিক নাম "স্কারাস কোবান"।

এগুলি কালাঞ্চো মাছের প্রজাতির সঙ্গেও মেলে। বিশ্বব্যাপী ৯৫ টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে ২০ প্রজাতি মান্নার উপসাগরে বাস করে। এরা মূলত প্রবাল প্রাচীর, জীবাশ্ম এবং শৈবাল খায় এবং প্রবাল প্রাচীরের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। এটি প্রবাল প্রাচীরকে পরিষ্কার এবং চকচকে রাখে। এই উভচর মাছ ঝিনুক, শঙ্খ, কাঁকড়া এবং চিংড়ির মতো ছোট প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে।

প্রায় ৪ ফুট লম্বা এবং ৪৫ কেজি ওজনের এই মাছটি ৫ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। এর দাঁত খুবই শক্তিশালী শুধু নয় প্রায় ১০০০টি পর্যন্ত দাঁত থাকে এই মাছের। এর সাহায্যে এটি পাথরের মধ্যে গর্ত করে লুকিয়ে থাকতে পারে।

গিরগিটির মতো, এই মাছ শত্রুদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য নিজের অবস্থান অনুসারে রঙ পরিবর্তন করে থাকে। ঋতু অনুসারে এটি স্ত্রী থেকে পুরুষে পরিবর্তিত হয় এবং যৌন হরমোনের কারণে এর রঙ পরিবর্তিত হয়।

ঔষধি গুণাবলী:ওমেগা ৩ এবং ওমেগা ৬ মস্তিষ্ককে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে। যেহেতু এতে অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, তাই এটি খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীরের ওজন সুস্থ থাকে।

ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি হাড় এবং দাঁতকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। উচ্চ প্রোটিন উপাদান শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। এটি রক্ত ​​জমাট বাঁধা রোধ করতে সাহায্য করে।

এটি অত্যন্ত সুস্বাদু মাছ হওয়ায়, এটি রেস্তোরাঁ এবং বিভিন্ন বিদেশী রাজ্যে রফতানি করা হয়। বাজারে এই মাছটি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

এটি স্টু, ভাজা বা পেয়াঁজ রসুন দিয়ে জমিয়ে বাঙালির প্রিয় মাছের ঝোল বানিয়েও দিব্যি খাওয়া যেতে পারে। কাল বাজারে গেলেই খোঁজ করুন এই মাছের। পস্তাবেন না, গ্যারান্টি।