হাওড়া-পুরী রুটে চলার দ্বিতীয় দিনে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে বন্দে ভারত। পুরী থেকে যথা সময়ে ছেড়ে এলেও ওড়িশার বৈতরণী ও মঞ্জুরি রোড স্টেশনের মাঝে বিকেল প্রায় সাড়ে চারটা নাগাদ খারাপ আবহাওয়ার সম্মুখীন হয় বন্দে ভারত। প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে ট্রেনের সামনে ইঞ্জিনের উপর। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ট্রেনের বেশ কিছু অংশ। প্রায় বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে ট্রেন মেরামতির কাজ।
দেশের প্রথম সেমি হাই স্পিড ট্রেন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস পুরী থেকে একেবারে বিধ্বস্ত অবস্থায় হাওড়ায় এসে পৌঁছল। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে প্যান্টোগ্রাফ ভাঙা, সামনের বনেট খোলা অবস্থায় মধ্যরাতে হাওড়ায় এসে পৌঁছয় ‘গর্বের’ এই ট্রেন। চালকের সামনের কেবিনের কাচ ভাঙা ছিল, যাত্রীদের একাধিক জানালার কাচেও চির ধরে। এই অবস্থায় একটি ডিজেল ইঞ্জিন ওড়িশার বালেশ্বর থেকে পুরী-হাওড়া ডাউন বন্দে ভারতকে হাওড়ায় নিয়ে আসে। যাত্রীদের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ ছিল স্পষ্ট।
এছাড়াও, সেই সময় ওভারহেড তারে বাজ পড়ায় যাত্রীদের জানালার বেশ কিছু জায়গায় চির ধরে। এই অবস্থায় প্রায় ঘণ্টা চারেক মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে দেশের প্রথম সেমি হাইস্পিড এক্সপ্রেস ট্রেনটি। দীর্ঘক্ষণ আলো পাখা চলেনি, ছিল না খাবার ও পানীয় জল। এক সময় অব্যবস্থার কারণে ক্ষোভে ফেটে পড়েন যাত্রীরা। এদিকে রেলের প্রযুক্তিবিদরা গিয়ে দ্রুত ট্রেন সারাইয়ের চেষ্টা করলেও বিশেষ ফল হয়নি।
ট্রেন আটকে থাকার সময়ে যাত্রীরা একাধিক অভিযোগ তুলেছেন বলে সূত্রের খবর। সেগুলি হল, ১) বন্দে ভারতের বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ২) আপৎকালীন পরিস্থিতিতে এই ট্রেন কন্ট্রোল করা খুব ঝঞ্ঝাটের ব্যাপার। ৩) এই ট্রেনের দরজার সেন্সর, দরজা বন্ধ না করা থাকলে নাকি ট্রেন চলবে না, কিন্তু যদি এসি বন্ধ, থাকে তাহলে যাত্রীরা ভিতরে বসে থাকবেন কী করে?
৪) গত রবিবার যখন যাত্রীরা অতক্ষণ ওইরকম দুর্ভোগ সয়েছেন, তখন কি রেলের উচ্চতর কর্তৃপক্ষের আরেকটু মানবিক হওয়া উচিত ছিল না? এক কাপ চায়ের জন্যও ১০ টাকা করে নেবেন! ৫) অত রাত পর্যন্ত কোনও যাত্রীকে ডিনার দেওয়া হয়নি। লাস্ট লাইভ লোকেশন ছিল বালাসোর স্টেশন, তখন রাত ১০টা বেজে গিয়েছে। বলা হয়েছিল, খড়্গপুর পৌঁছলে নাকি খিচুড়ি খাওয়ানো হবে, কেন রেল কর্তৃপক্ষ এদিকে একটু নজর দিলেন না?
আজ, সোমবার বন্দেভারত এক্সপ্রেস বাতিল ছিল। এদিন সাঁতরাগাছিতে ক্ষতিগ্রস্ত বন্দেভারত এক্সপ্রেস সারানো হয়। আইসিএফের ইঞ্জিনিয়াররাও হাজির ছিলেন এখানে। একাধিক জানলার কাচ ভেঙে গিয়েছিল। ভেঙে গিয়েছিল উইন্ডশিল্ড ও নোজ। প্যান্টোগ্রাফও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সব কিছু এদিন সারানোর পরে তা পরীক্ষা করা হয়। আগামিকাল, মঙ্গলবার থেকে যথাসময়ে ছাড়বে হাওড়া-পুরী বন্দে ভারত৷