দিল্লির বুরারিতে একসঙ্গে একই পরিবারের মৃত্যু । সঙ্গে হাড় হিম করা হত্যার বিবরণ । ছাদের গায়ে লাগানো পাইপ । ঘটনার আকস্মিকতায় এখনও বিহ্বল দেশ । কিন্তু ভাটিয়া পরিবারই একমাত্র নয় । বিভিন্ন কাল্ট-এ অন্ধবিশ্বাসে, কখনও মোহের বশে, কখনও উদগ্রতায় এভাবে প্রাণ দেওয়ার উদাহরণ রয়েছে ইতিহাসের পাতাতেও। শুধু পরিবার নয়, একসঙ্গে জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন সঙ্ঘের । দেখে নিন এমনই কিছু ঘটনা ।
জোন্সটাউন
ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসে মৃত্যুর ইতিহাস ঘাঁটলে উঠে আসে জোন্সটাউন ম্যাসাকারের স্মৃতি । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গিয়ানার জোন্সটাউনে জিম জোনসের নেতৃত্বে হাড় হিম করা সেই সুইসাইড ট্র্যাপ । সায়ানাইড মিশ্রিত তরল পান করে একসঙ্গে মৃত্যুবরণ করেন জিমের ৯০৯ জন অনুগামী । এদের মধ্যে ছিল ২০০ জন শিশু । নিজেরা মরার আগে শিশুদের খুন করেন বাবা, মায়েরা । ১৯৫০ সালে ক্রিশ্চান ধর্মের একটি শাখা জাতিবিদ্বেষে রুদ্ধ হয়ে ওঠে । ১৯৭১ সালের মধ্যে যা ছড়িয়ে জোন্সটাউনে । জিম জোনসের নেতৃত্বে চরম পরিণতি ।
ইউএফও কাল্ট সুইসাইড
এই ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় । হেভেন'স গেট কাল্ট প্রাণ কেড়ে নেয় ২১ জন মহিলা ও ১৮ জন পুরুষের । গত শতাব্দীর শেষেরপ দিকে মার্শাল অ্যাপলহোয়াইট ও বনি নেটলস-এর নেতৃত্বে এই কাল্ট ছড়িয়ে পড়েছিলে সান দিয়েগো থেকে । ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ গেটেড গোষ্ঠীর একটি ভাড়া নেওয়া একটি বিশাল বাড়ি থেকে ৩৯ জন সদস্যের দেহ করেন তদন্তকারীরা । জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন শো স্টার ট্রেক ও ডুমসডে প্রেপারস-এপ প্যাটার্নে সাজানো ছিল মৃতদেহগুলো । মৃতদের মধ্যে ছিলেন অ্যাপলহোয়াইটও । আত্মাদের মধ্যে কম্পিউটার বেসড কমিউনিকেশন স্থাপন ছিল এই সুইসাইডের লক্ষ্য ।
নাইটস টেম্পলার কাল্ট কিলিং
১৯৮৪ সালে ফ্রান্সের জেনেভায় জোসেফ দি মামব্রো ও লুক জুরে তৈরি করেন সোলার টেম্পলার কাল্ট । ইউরোপের গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছিল এই সঙ্ঘের প্রভাব । ১৯৯৪-৯৫ সালের মধ্যে কানাডা, ফ্রান্স ও সুইত্জারল্যান্ডে জোসেফ ও লুক সহ এই সঙ্ঘের ৭৪ জন সদস্য সুইসাইড করেন । কেউ আত্মহত্যা করেছিলেন বিষ খেয়ে, কেউ মাথায় গুলি করে । সূর্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত । তাই মৃত্যুর পর দেহগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল । ১৯৯৫ সালে ফ্রেঞ্চ আল্পস থেকে ১৬টি পোড়া দেহ উদ্ধার হয় । নিয়ম, প্রথা মেনে পোড়ানো হয়েছিল দেহগুলো ।
দ্য ওয়াকো সেইজ
১৯৯৩ সালে টেক্সাসের ওয়াকোতে ৭৬ জনের মৃত্যু হয় । ডেভিড মোরেশ-এর নেত্বত্বে গঠিত হয়েছিল সেভেনথ ডে অ্যাডভেনটিস্টস । তারা বিশ্বাস করতেন টেক্সাসের রাহাড়ের চূড়োয় দ্বিতীয় বার আবির্ভূত হবেন যীশু খ্রীষ্ট । টেক্সাসে ওই সঙ্ঘের হেডকোয়ার্টার থেকে একসঙ্গে ৭৬ জনের দেহ উদ্ধার হয় । আত্মহত্যা না হত্যা, সে বিষয়ে আজও নিশ্চিত হতে পারেননি তদন্তকারীরা ।
উগান্ডা গণহত্যা
২০০০ সালের মার্চ মাসে উগান্ডায় রোমান ক্যাথলিক চার্চ ভেঙে শুরু হয় রেস্টোরেশন অফ দ্য টেন কমান্ডমেন্টস অফ গড । এই কাল্টের গভীর বিশ্বাস ছিল ২০০০ সাল শুরুর আগেই পৃথিবী ধ্বংস হতে চলেছে । কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৯৯ বিশ্বাস সত্যি না হওয়ায় তারা বিশ্বাস করতে শুরু করে ১৭ মার্চ পৃথিবীর শেষ দিন । সেই দিন ৯০০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয় । তদন্তকারীদের দাবি সকলে আত্মহত্যা করেননি ।