১ মিনিটে ভ্যানিশ হবে চালের পোকা...! শিখে নিন বিশেষজ্ঞের দেওয়া ৬ কৌশল, আর বেয়ে বেয়ে উঠবে না গা ঘিনঘিনে পোকার দল!

ভারতীয় বাড়িতে পোকামাকড়ের আক্রমণ একটি সাধারণ সমস্যা। রান্নাঘরের স্যাতস্যাতে পরিবেশে আর্দ্রতার কারণে চালে প্রায়ই পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়। তবে নিম, লবঙ্গ এবং হিং এর মতো কিছু ঘরোয়া উপাদান দীর্ঘ সময়ের জন্য চাল সংরক্ষণে ম্যাজিকের মতো সহায়তা করতে পারে।

আসলে সঠিকভাবে চাল সংরক্ষণ করলে পোকামাকড় দূর হতে পারে মুহূর্তের মধ্যে। খালি মেনে চলতে হবে নির্দিষ্ট পরামর্শ। আসুন এই বিষয়ে কিছু বিশেষ কার্যকরী টিপস শিখি আজ বিশেষজ্ঞদের কাছে।

অনেক সময়ই দেখা যায় রান্নাঘরে চাল রাখার পাত্রের গা বেয়ে বেয়ে উঠে আসছে কালো কালো গা ঘিনঘিনে পোকা । ছোট ছোট কালো পোকামাকড়গুলিকে চালের শীষ কামড়ে ধরে থাকতেও দেওয়া যায়।

এই পোকাগুলিকে সাধারণ চালের পোকা বা 'চাওয়াল কে কিরে' বলা হয়। এটি প্রায় প্রতিটি ভারতীয় রান্নাঘরেই একটি সাধারণ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় শুধু না, দীর্ঘমেয়াদে হজমের স্বাস্থ্যের জন্যও বড় ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে এগুলি।

তবে চিন্তা করবেন না। এই বিষয়ে আমরা একজন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে কিছু কার্যকরী টিপস নিয়ে আপনার সাহায্যে এসেছি যা আপনাকে এই ক্ষুদ্র পোকামাকড়গুলিকে শনাক্ত করতে এবং কার্যকরভাবে তাদের নির্মূল করতে সহায়তা করবে।

ইন্ডিয়ান পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানির দীপক শর্মা তাঁর পরামর্শে জানালেন যে চালের পোকা হল ক্ষুদ্র, গাঢ় বাদামী থেকে লালচে-কালো পোকা, যারা সাধারণত চাল, আটা, ডাল, বেসন, সুজি ইত্যাদির মতো সঞ্চিত শস্যের ভিতরে বাস করে এবং বংশবৃদ্ধি করে। কখনও কখনও, আপনি ছোট সাদা কৃমিও দেখতে পাবেন - এগুলি আসলে এই পোকাদেরই লার্ভা।

কীভাবে শনাক্ত করবেন?শনাক্তকরণের লক্ষণগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে গিয়ে বিশেষজ্ঞ বলেন যে ধানের বা চালের মধ্যে থাকা এই উইভিলগুলি সাধারণত বাদামী, লালচে বা কালো রঙের হয় এবং মোটামুটি ২-৪ মিমি লম্বা হয় - যা চালের দানার চেয়ে ছোট সাইজের হয়।

তিনি বলেন, "কিছু পোকা দেখতে পোকার মতো, আবার কিছু পোকা ছোট বা কেবল ডিম্বাকৃতির হয়। তারা ধীরে ধীরে কৌটো বেয়ে চলাফেরা করে। এই পোকাগুলি দিনের বেলা লুকিয়ে থাকে এবং পাত্রটি খুললে মুহূর্তে সক্রিয় হয়ে ওঠে"।

চাল ধোয়ার সময়ও অনেক সময় মাঝে মাঝে ছোট ছোট সাদা লার্ভা উপরে ভেসে ওঠে। বিশেষজ্ঞ দীপক বলেন, যদি আপনি ধানের শীষে ছোট ছোট ছিদ্র দেখতে পান, তাহলে বুঝতে হবে তারা ভিতর থেকে চালগুলি খাচ্ছে।

পোকা নির্মূল করার জন্য স্টেপ বাই স্টেপ নির্দেশিকা:১. আগে পরীক্ষা করে আলাদা করুন: আপনার সমস্ত চাল পরীক্ষা করে দেখুন। যদি একটি পাত্রে এগুলি থাকে, তবে সম্ভবত অন্যগুলিতেও বংশ বিস্তার করতে থাকবে। নতুন শস্যের সঙ্গে পুরনো শস্য একদম মেশাবেন না।

২. সূর্যের আলো আপনার সবচেয়ে ভাল বন্ধু: সারাদিন রোদে চাল ছড়িয়ে দিন। তাপে পোকামাকড় এবং তাদের ডিম মারা যায় এবং রোদের তাপে চাল উত্তপ্ত হলে পোকাগুলি বেরিয়ে আসে।

৩. ফ্রিজ পদ্ধতি (যদি রোদে পোড়ার বিকল্প না থাকে) : আক্রান্ত চাল ৩-৪ দিনের জন্য ফ্রিজে রাখুন। ফ্রিজের শীতলতার সংস্পর্শে এলে দ্রুত পোকার ডিম এবং লার্ভাগুলি তৎক্ষণাৎ মরে যায়।

৪. আপনার পাত্রটি পরিষ্কার করুন: প্রতিটি পাত্র খালি করে গরম জল এবং সাবান দিয়ে ঘষে নিন। পুনরায় ভরার আগে সম্পূর্ণ শুকোতে দিন।

৫. প্রাকৃতিক প্রতিরোধক ব্যবহার করুন: পাত্রের ভিতরে কয়েকটি শুকনো নিম পাতা, তেজপাতা, লবঙ্গ, অথবা রসুনের কুঁড়ি যোগ করুন। এগুলি পোকামাকড়ের ঘ্রাণশক্তিকে বিভ্রান্ত করে এবং ডিম পাড়া থেকে বিরত রাখে।

৬. বুদ্ধির সঙ্গে চাল সংরক্ষণ করুন : সম্ভব হলে ধাতব বা কাচের বয়াম ব্যবহার করুন। প্লাস্টিকের প্যাকেট বা ঢিলেঢালাভাবে ঢাকা বাক্সে বা ড্রামে কখনও চাল-ডালের মতো শস্য সংরক্ষণ করবেন না। শুকনো এবং ভাল ভাবে সিল করা অবস্থায় সংরক্ষণ করতে না পারলে প্রচুর পরিমাণে শস্য কিনে মজুত করবেন না।

কিছু সাধারণ ভুল যা এড়িয়ে চলা উচিত:দীপক শর্মার মতে, "একই দানা ছেঁকে নিয়ে আবার ব্যবহার করা কিন্তু মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ তার মধ্যে ডিমগুলি তখনও থেকে যায়। এই ধরনের ক্ষেত্রে, কাছাকাছি রাখা অন্যান্য কৌটোর জিনিসপত্রগুলিও ঝুঁকিতে পরে যায়। যদি এই ধরণের পোকা চালে থাকে, তবে সম্ভবত এগুলি আপনার আটা, বেসন এবং সুজির কৌটোতেও থাকতে পারে।

বিশেষজ্ঞের মতে, "আর্দ্র আবহাওয়ায় প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করা আরেকটি বড় নিষেধাজ্ঞা, কারণ এটি আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং সংক্রমণকে ত্বরান্বিত করে"। ড্রাম বা কৌটো রিফিল করার আগে স্টোরেজ পাত্রটি একবার ভাল করে পরিষ্কার করা জরুরি।