আমার কেমোর দিনই ঐন্দ্রিলার ১০ বার হার্ট অ্যাটাক! ক্যানসার যুদ্ধে চোখে জল মায়ের

মায়ের অসুখ ফিরে এল ১৪ বছর পর। মেয়ের দুশ্চিন্তা শুরু। মায়ের ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হতেই সোনোগ্রাফি করানো হল, তাতে গত ১৪ অক্টোবর রিপোর্ট এল, ম্যালিগন্যান্ট টিউমার রয়েছে ব্লাডারে।

বাবাকে আশ্বাস দিল মেয়ে। দিদিকে আশ্বাস দিল, প্রেমিককে সঙ্গে নিল। কোমর বেঁধে লেগে পড়ল। সব বন্দোবস্ত করেও ফেলল। নিজে তো দু'বার এই রোগকেই হারিয়েছে। কিন্তু তার পর...

নিজেই মাকে ফেলে রেখে চলে গেলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। ২৪ বছরের তরুণীর চিরঘুম। ব্রেনস্ট্রোক, তার পর দিন কয়েকের অবিরাম লড়াই। তার পর সব শেষ গত ২০ নভেম্বর। প্রয়াত অভিনেত্রীর মায়ের এই রোগের কথা সদ্যই প্রকাশ্যে এল। শিখা শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করল নিউজ18 বাংলা।

শিখা শর্মা জানালেন, আগামী ১৩ জানুয়ারি অস্ত্রোপচার হবে। ইতিমধ্যে ১১টি কেমোথেরাপি নেওয়া হয়ে গিয়েছে তাঁর। নিতে হবে মোট ১৮টি। ওটি-র পর বাকিগুলি নেবেন। শরীরের কেমন অবস্থা এখন?

শিখার কথায়, ''মনের মধ্যে যে যন্ত্রণা, তার কাছে শরীরের যন্ত্রণা যেন কিছুই নয়। ছোট্ট মেয়েটা আমাকে ফেলে চলে গেল। ওই তো বাড়ির সকলের অভিভাবক। ওই তো সমস্ত বন্দোবস্ত করেছিল।''

ঐন্দ্রিলার মায়ের কথায় জানা গেল, মায়ের রিপোর্ট নিয়ে গত ১৭ বা ১৮ অক্টোবর দিল্লি থেকে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে এসেছিলেন তিনি। মাকে দু'টি কেমো নিতে দেখে গিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা।

এখন তাঁর প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরী শিখা শর্মার সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যান। কেমোর সময়েও সঙ্গে থাকেন। মেয়ের কথা বলতে বলতে বারবার অঝোরে কেঁদে ফেলছিলেন ঐন্দ্রিলার মা।

শিখা শর্মার বয়স যখন ৩৮, অর্থাৎ এখন থেকে ১৪ বছর আগে, তখনই প্রথম বার দু'টি ওভারিতে ক্যানসার ধরা পড়ে তাঁর। ঐন্দ্রিলা তখন বেশ ছোট।

তার পর আবার সেই রোগ দানা বাঁধল শিখা শর্মার শরীরে। কিন্তু কেমো চলাকালীনও শরীরের কষ্টের দিকে মন নেই মায়ের। মেয়ের শোকের যন্ত্রণা সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ''একদিন একটি বারের জন্যেও ঐন্দ্রিলার কথা ভুলতে পারি না। নিজের শরীর নিয়ে ভাবতে ভাল লাগে না।''

শিখা শর্মার কথায় জানা গেল, যখন ব্রেন স্ট্রোকে মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি, তখনও তাঁর কেমো চলছিল, চিকিৎসা চলছিল। একই হাসপাতালে। গত ১৯ নভেম্বর, অর্থাৎ ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর আগের দিনও কেমো ছিল।

সেদিন ৬ ঘণ্টার টানা কেমো চলছিল শিখা শর্মার। বারবার নার্সকে অনুরোধ করছিলেন, একটিবারের জন্য যেন তিনি তাঁর মেয়ের খোঁজ নিয়ে বলেন। ততক্ষণ নাকি ঐন্দ্রিলা ভাল ছিল।

শিখা শর্মার কথায়, ''কেমোর পরে আমি বাড়ি যাইনি। কী যে চলছিল মনের মধ্যে। থেকে গেলাম। আর তার পরই ১০ বার হার্ট অ্যাটাক হল ঐন্দ্রিলার।''

কাঁদতে কাঁদতে মা বললেন, ''ভাগ্যিস থেকে গিয়েছিলাম, নয়তো মেয়েকে শেষ দেখা দেখে যেতে পারতাম না। তার পর তো সব শেষ।''