শ্বশুরের সম্পত্তিতে কি অধিকার থাকে পুত্রবধূর? না জেনে প্রায়ই সমস্যায় পড়েন মেয়েরা! আদালতের গুরুত্বপূর্ণ রায় কী?

ভারতের বিবাহিত নারীদের মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক নির্যাতনের মুখে পড়তে হয় প্রায়ই। এমন বাস্তবতায় মহিলাদের জন্য সম্পত্তির অধিকার, সম্মান, নিরাপত্তা, বিবাহিত বাসস্থান, ভরণপোষণ এবং পিতৃসম্পত্তিতে অধিকার সংক্রান্ত আইন জানাটা অত্যন্ত জরুরি।

গৃহবিবাদে আত্মহত্যার খবর আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। বিবাহিত বহু নারী আজও দুর্ব্যবহার, নির্যাতন ও অবহেলার শিকার হচ্ছেন, বিশেষত পুত্রবধূরা। এর অন্যতম কারণ—অনেকেই জানেন না তাঁদের আইনগত অধিকার কী।

যদিও আইনে "পুত্রবধূ" শব্দটি সরাসরি উল্লেখ না থাকলেও, বিবাহিত নারীদের জন্য একাধিক সুরক্ষা ও অধিকার সংরক্ষিত রয়েছে। নীচে জানুন এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধিকার, যা প্রতিটি পুত্রবধূর জানা দরকার।

স্ত্রীধন (Streedhan) স্ত্রীধন হল বিয়ের আগে বা সময়ে একজন নারী যে সম্পত্তি, অর্থ, গয়না বা উপহার পান—তা তাঁর নিজের। এটি পিতা-মাতা, আত্মীয় বা এমনকি শ্বশুরবাড়ির লোকের তরফ থেকেও হতে পারে। যদিও এই সম্পদ হয়তো স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির হেফাজতে থাকে, তবে আইন অনুযায়ী এর পূর্ণ অধিকার স্ত্রীরই।

স্ত্রীধন ফেরত না দেওয়া বা আটকে রাখা গার্হস্থ্য হিংসার মধ্যে পড়ে। আলাদা হয়ে গেলেও বা বিবাহবিচ্ছেদ হলেও মহিলার এই অধিকার বজায় থাকে।

সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাসের অধিকার প্রতিটি নারীরই সম্মানের সঙ্গে, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন থেকে মুক্ত থেকে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। গার্হস্থ্য হিংসা আইনের অধীনে, একজন নারী নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিতে পারেন—

ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গিয়ে নির্যাতন বন্ধের আবেদন করতে পারেন।  স্বামীর বিরুদ্ধে "Bond of Good Behavior" স্বাক্ষরের নির্দেশ চাইতে পারেন। নিজের ও সন্তানের নিরাপত্তার জন্য আদালতের মাধ্যমে সুরক্ষা দাবি করতে পারেন। স্বামীর কাছ থেকে সুরক্ষার টাকা বা সম্পত্তির দাবিও করতে পারেন, যা ভবিষ্যতে হয়রানি করলে স্বামী হারিয়ে ফেলবেন।

বিবাহিত জীবনে নারীর অধিকার রয়েছে স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ততা প্রত্যাশা করার। বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্বামীর অন্য নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক থাকা বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে গণ্য হয়। এই ভিত্তিতে স্ত্রী ডিভোর্সের মামলা করতে পারেন।

স্বামীর সঙ্গে যেখানে নারী থাকেন—স্বামীর বা ভাড়া বাড়ি যাই হোক না কেন—সেই বাসস্থানেই তাঁর বসবাসের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। যদিও সেই বাড়ি স্ত্রীর নামে না-ও থাকতে পারে, তবুও বিবাহিত জীবনের মেয়াদে তিনি সেখানে থাকতে বাধ্যতামূলকভাবে অধিকারী।

তবে এই অধিকার মানে এই নয় যে, তিনি শ্বশুরবাড়ির নামে থাকা সম্পত্তির অংশীদার হয়ে যাবেন—যদি না স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকজন তা অনুমোদন করেন।

সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে বলেছে, পুত্রবধূকে পরিবারের সদস্য হিসেবে সম্মান দেওয়া উচিত, তাঁকে চাকরানির মতো বা বহিরাগত হিসেবে ব্যবহার করা আইনবিরোধী এবং অমানবিক। আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী—"পুত্রবধূকে সম্মান দেওয়া একটি সভ্য সমাজের পরিণত মূল্যবোধের পরিচায়ক।"

স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর উপর। এর মধ্যে পড়ে খাদ্য, পোশাক, বাসস্থান, চিকিৎসা, সন্তানের শিক্ষা এবং অবিবাহিতা মেয়ের বিয়ের খরচ পর্যন্ত। সাম্প্রতিক টানাপোড়েন বা বিচ্ছেদের পরও স্বামী এই দায় এড়াতে পারেন না।

হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, বর্তমানে কন্যারাও পিতার সম্পত্তিতে সমান অধিকার পান। ছেলের মতো মেয়েরাও সমান ভাগ পান, তা বাবা উইল করে যান বা না-ই যান। বিবাহিত কন্যারাও মায়ের সম্পত্তিতে অধিকারী।

সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে জানিয়েছে, একজন বাবা তাঁর বিবাহিত মেয়েকেও নিজের ফ্ল্যাটের একমাত্র নমিনি করতে পারেন—অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের বাদ দিয়ে।

বর্তমান সময়ে নারীর অধিকারের সংজ্ঞা বদলাচ্ছে। কিন্তু এখনও বহু নারী—বিশেষত পুত্রবধূ—তাঁদের আইনি অধিকার সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত নন।

সেই কারণেই গার্হস্থ্য হিংসা, সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়া কিংবা সম্মানহানির শিকার হন তাঁরা। এই তথ্যগুলো জানা এবং প্রয়োজনে প্রয়োগ করাই পারে একজন নারীর জীবনে পরিবর্তন আনতে। নারীর অধিকার জানুন, কণ্ঠস্বর তুলুন।