অন্যদিকে, বাংলা নামে বাড়ল আরও জটিলতা ৷ সম্প্রতি বাংলা নামে আপত্তি জানাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ৷ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে মিল থাকায় এই আপত্তি ৷ জানতে চাওয়া হল বিদেশমন্ত্রকের মতামতও ৷ গতকাল ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ ঘুরপথে আপত্তির কথা জানাল কেন্দ্র ৷ কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত আরও বাড়ল ৷
‘পশ্চিমবঙ্গ’ থেকে ‘বাংলা’ নাম বদলের তরজা-
advertisement
১. শুরুটা হয় ২০১১ সালেই ৷ ‘West Bengal’ থেকে ‘Paschimbanga’ নাম বদলের জন্য মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের সরকার কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব দেয় ৷ তবে কেন্দ্রে সেই প্রস্তাবকে গুরুত্ব না দিয়ে খারিজ করে দেয় ৷ সেটাই ছিল প্রথমবার ৷
২. তারপর পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভায় গত ২০১৬ সালের ২ আগস্ট দুটি নামের প্রস্তাব গৃহীত হয়। বাংলা ও বঙ্গ। তবে বেশির ভাগেরই মত ছিল ‘বাংলা’ নামের পক্ষে। সেই নামকেই অনুমোদন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তারপরে তা পেশ করেন বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে। প্রস্তাব অনুযায়ী, রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ (বাংলা ভাষায়), ‘বেঙ্গল’ (ইংরেজি ভাষায়), ‘বেঙ্গল’ (হিন্দি ভাষায়) ৷ একই রাজ্যের নাম তিন ভাষায় তিনরকম? প্রশ্ন ওঠে কেন্দ্রে ৷ সেবারও খারিজ হয় রাজ্যের নাম বদলের প্রস্তাব ৷
৩. এ বছর ২৬ জুলাই রাজ্য বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাশ হয়। ঠিক হয় বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি-সহ সব ভাষাতেই রাজ্যের নাম হবে বাংলা।
তবে তৃণমূল সরকারই প্রথম নয়, ১৯৯৯ সালে বামফ্রন্ট আমলেও রাজ্যের নাম বদলের কথা উঠেছিল ৷ সেই সময় বিধানসভায় এই নিয়েও বিস্তর আলোচনা হয়েছে ৷ প্রস্তাবও তোলা হয়েছিল ৷ তবে সেবারও কোনওরকম কার্যকর হয়নি ৷
কেন এই নাম বদলের প্রস্তাব ?
সংসদীয়বিষয়ক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধিবেশনে এই নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পেশ করেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে ছিলেন, অনেক সময়ই আমলা ও মন্ত্রীরা বলে থাকেন West Bengal নাম সবার শেষে উচ্চারিত হয় নানা সরকারি অনুষ্ঠানে ৷ রাজ্যের নাম বদলের পিছনে যুক্তিও আছে। যখন কেন্দ্রে সব রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে কোনও বৈঠক হয়, বর্ণানুক্রমে পশ্চিমবঙ্গ তালিকায় একেবারে নীচের দিকে থাকে। কিন্তু ইংরেজিতে নাম বেঙ্গল হলে আলফাবেটিকাল ফর্মুলার নিয়ম মেনে ২৯ থেকে ৪ নম্বরে উঠে আসবে রাজ্য। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেরা রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে West Bengal পরিবর্তে বাংলা নাম হলে তা অরুণাচল, অসম ও অন্ধ্রপ্রদেশের পরেই পশ্চিমবঙ্গের নাম আসবে ৷
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ফেসবুকে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনে বিধানসভায় যে প্রস্তাব হল তাকে সম্মান জানানো হবে না কি রাজ্যে যে রাজনৈতিক দলের শক্তি শূন্য তাদের কথায় রাজ্যের নাম ঠিক হবে? সাম্প্রতিক কালে প্রায় সব ইস্যুতেই তৃণমূল ও বিজেপির মধে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ বার রাজ্যের নাম বদল নিয়েও লোকসভা ভোটের আগে মোদি সরকারের উপর চাপ বাড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী। উস্কে দিলেন বাংলার মানুষের আবেগ।
নাম বদলের জটিলতা! কেন অনুমোদন দিচ্ছে না কেন্দ্র?
‘বাংলা’ নাম বদলে রাজি নয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ৷ যার জেরে নামবদলকে কেন্দ্র করে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত তুঙ্গে ৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বাংলার নামবদল কার্যকরে রাজি নয় ৷ তার জন্য যথাযথ যুক্তিও খাঁড়া করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দাবি, বাংলা নাম এমন একটি নাম যার সঙ্গে ভারতের প্রতিবশী দেশ বাংলাদেশ মিল রয়েছে ৷ যার জেরে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশের হার বেড়ে যেতে পারে ৷ বিতর্ক তৈরি হবে ৷ সেই কারণে আপাতত নাম বদল নিয়ে বিদেশমন্ত্রকের কোর্টে বল ঠেলল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ৷ বাংলার নাম পরিবর্তন নিয়ে বিদেশমন্ত্রকের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে ৷
বাংলার নাম বদলে নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের তরফ থেকে সরকারিভাবে সেভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি এ রাজ্যের নাম বদল নিয়ে ৷ তবে ওপার বাংলার বুদ্ধিজীবীরা অবশ্য কেউ কেউ এ নিয়ে মতামত প্রকাশ করেছেন ৷ বাংলাদেশের আওমি লিগের নেতা মেহবুবুল হত হানিফ পিটিআই সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের তেমন কোনও মতামত নেই ? নর্থ বেঙ্গল হোক বা সাউথ বেঙ্গল ৷ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ ৷ পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলের প্রস্তাব আমাদের কোনও প্রভাব ফেলবে না ৷ ’
এর আগেও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের নাম পরিবর্তন হয়েছে। সংযুক্ত প্রদেশের নাম পরিবর্তন হয়ে হয়েছে উত্তর প্রদেশ, হায়দরাবাদের পরিবর্তে হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যভারতের নাম হয়েছে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাঞ্চলের পরিবর্তে হয়েছে উত্তরাখন্ড, উড়িষ্যার পরিবর্তে হয়েছে ওডিশা, ত্রিবাঙ্কুর-কোচিনের পরিবর্তে কেরালা, মাদ্রাজের পরিবর্তে তামিলনাড়ু এবং মহীশূরের পরিবর্তে হয়েছে কর্ণাটক রাজ্য।
অবশ্য এই নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবের পক্ষে ২৬ জুলাই সায় দিয়েছে কংগ্রেস ও বাম দলও। ফলে সর্বসম্মতিতে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনে বিধানসভায় যে প্রস্তাব হল তাকে সম্মান জানানো হবে না কি রাজ্যে যে রাজনৈতিক দলের শক্তি শূন্য তাদের কথায় রাজ্যের নাম ঠিক হবে?
সাম্প্রতিক কালে প্রায় সব ইস্যুতেই তৃণমূল ও বিজেপির মধে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ বার রাজ্যের নাম বদল নিয়েও লোকসভা ভোটের আগে মোদি সরকারের উপর চাপ বাড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী। উস্কে দিলেন বাংলার মানুষের আবেগ।