অভিষেকের সফরের পরেই কংগ্রেসের টিম পাঠানো গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কিছুদিন আগেই ত্রিপুরায় সুবল ভৌমিকদের যোগদানের পর কংগ্রেসের বহু হেভিওয়েট নেতাই তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে খবর। পরিস্থিতি এমনই যে কংগ্রেসের ভিত্তি ধরে রাখতে ত্রিপুরার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পীযূষ বিশ্বাসকে ফোন করে বিস্তারিত জানতে চেয়েছিলেন সনিয়া গান্ধির ঘনিষ্ঠ নেতা কে সি বেনুগোপাল।
advertisement
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, তৃণমূলের নির্বাচনী উপদেষ্টা প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাক-এর ২৩ জন আধিকারিককে হাউজ অ্যারেস্ট করে রাখার পর তাঁদের ছাড়াতে আদালতে সওয়াল করেন ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পীযূষ বিশ্বাস। মামলায় মহামারী আইন ভাঙতে পারেন এই যুক্তিতে জামিন দেওয়ার বিরোধিতা করেন সরকারি পক্ষের উকিল। যদিও সেই যুক্তি ধোপে টেকেনি। আইনজীবীর দায়িত্ব নেওয়া ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস নেতা পীযূষ বিশ্বাস স্পষ্টই জানিয়েছেন, "গৃহবন্দী করে অনর্থক হয়রানি করা হচ্ছিল এই প্রতিনিধি দলটিকে।" এরপরই আই প্যাকের কর্মীদের জামিন মেলে।
কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনের জন্য সওয়াল করছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, এই ঘটনাতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছিল ত্রিপুরায়। তবে, কি কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে তৃণমূলের 'হিসেবনিকেশ' হয়ে যাচ্ছে তলেতলে? বেনুগোপালের জিজ্ঞাসায় অবশ্য পীযূষ বিশ্বাস কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের দিকেই আঙুল তুলেছেন বলে খবর। কেন ত্রিপুরায় এখন তৃণমূলকে নিয়ে আলোড়ন চলছে, তার জবাবে পীযূষ জানিয়েছেন, যে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে তৃণমূল ত্রিপুরায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তার সিকিভাগ চেষ্টাও কংগ্রেস করছে না। মহিলা, যুব ভোটের জন্য তৃণমূলের সুনির্দিষ্ট কৌশল, আই প্যাকের মতো সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে শক্তিশালী আইটি সেল তৈরির মতো নানা পদক্ষেপ তৃণমূলকে আলাদা মাত্রা দিচ্ছে ত্রিপুরায়।
সেই তুলনায় বিরোধী শিবিরের বাম বা কংগ্রেস কারও তরফেই সেই উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে তৃণমূল ত্রিপুরার হাওয়া যতটা গরম করতে পারছে, বাকি বিরোধীদের সেই তুলনায় দেখা মিলছে না। স্বাভাবিক কারণেই বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে আসছে বাংলার শাসক দল। বেনুগোপালের কাছে পীযূষ এও জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই বিজেপিকেও ভাঙাতে শুরু করেছে তৃণমূল। কিন্তু কংগ্রেস বা বামেরা সেই পরিসর দখল করতে পারছে না সামগ্রিক পরিকল্পনার অভাবেই।
এর পরেই AICC তরফে দুই প্রতিনিধি ত্রিপুরায় পৌছে গিয়ে বৈঠক শুরু করে দেয়। অর্থাৎ, একটা বিষয় স্পষ্ট, বিজেপি যতই তৃণমূলকে কটাক্ষ করুক না কেন, বিপ্লব দেবের রাজ্যে ক্রমেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরের পর সেই তৎপরতা যে আরও কয়েকগুণ বাড়তে চলেছে, তা নিয়ে নিশ্চিত ত্রিপুরার রাজনৈতিক মহল।