অল্প বয়সে চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও সমস্যা দেখা যায়নি তাঁর মধ্যে৷ বয়স কুড়ির কোঠায় পৌঁছনর পর দ্রুত হারে স্ফীত হতে থাকে পেট৷ প্রথম দিকে বিশেষ গুরুত্ব না দিলেও পরিস্থিতি এমন জায়গা পৌঁছয় যে সঞ্জুর শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়৷
১৯৯৯ সালে তাঁকে মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ ডাক্তাররা প্রথমে ভেবেছিলেন তাঁর পেটে টিউমর আছে৷ চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করে হতবাক হয়ে যান৷ তাঁরা সঞ্জুর পেট থেকে একে একে বার করে আনেন মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, এমনকি চুল!
advertisement
ডাক্তাররা এই বিরল ঘটনাকে বলেন ‘ফেটাস ইন ফেটু’ বলে৷ অন্য পরিভাষায় একে বলা হয় ‘ভ্যানিশিং টুইন সিন্ড্রোম৷’ অর্থাৎ এক্ষেত্রে সঞ্জুর মা যখন অন্তঃসত্ত্বা হন, তখন তাঁর গর্ভে প্রাথমিক ভাবে যমজ ভ্রূণ ছিল৷ কিন্তু প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়ালে একটি ভ্রূণ মিশে যায় অপরটির সঙ্গে৷ মায়ের দেহের ভিতরে একটি ভ্রূণকে ভিতরে নিয়ে বাড়তে থাকে অপর ভ্রূণ৷ ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়ও সেভাবেই হয়৷ অর্থাৎ যমজের মধ্যে একটি সন্তান জন্মায়৷ তার পেটে থাকে যমজ ভাই বা বোন৷
ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশু সময়ের সঙ্গে বড় হতে থাকে৷ তার দেহেই পরজীবী হয়ে বাড়তে থাকে যমজ ভাই বা বোন৷ নাগপুরের সঞ্জুর মতো প্রথমে উপেক্ষা না করলে আরও আগেই মুক্তি মেলে এই বিপত্তি থেকে৷ অস্ত্রোপচারের পর তার পেট থেকে বার হওয়া পরজীবী ভ্রূণকে দেখতে চাননি সঞ্জু৷ বিপন্মুক্ত হয়ে ফিরে যান স্বাভাবিক জীবনে৷ কিন্তু অন্তঃসত্ত্বা পুরুষের পরিচয় এড়িয়ে যেতে পারেননি৷
সাধারণত ফেটাস ইন ফেটু-র মতো বিরল ক্ষেত্রে দু’টি অথবা একটি ভ্রূণ মারা যায় ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই৷ কিন্তু চেনা সব হিসেব পাল্টে গিয়েছিল সঞ্জু ভগতের বেলায়৷ নাগপুরের এই যুবকের বেলায় তিনি শুধু ভূমিষ্ঠই হননি, তাঁর শরীরে পরজীবী হয়ে বেড়ে উঠেছিল তাঁর যমজ ভাই বা বোন৷ যত দিন না চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার হয়েছে, তত দিন জীবিত ছিল সেটি৷ অস্ত্রোপচারের পর পরই মৃত্যু হয় পরজীবী ভ্রূণটির৷
এই ঘটনা চিকিৎসা শাস্ত্রের বিরলতমর মধ্যে বিরলতম বলে পরিগণিত হলেও সঞ্জু ভগতের কাছে ছিল চরম লজ্জার বিষয়৷ জীবনভর ব্যঙ্গের শিকার হয়েছেন তিনি৷ এমনকি, পুরনো পরিচয় ছেড়ে যায়নি অস্ত্রোপচারের পরও৷