TRENDING:

সন্তানের উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা করছেন? এই বিষয়গুলো মেনে চললে টাকার অভাব হবে না

Last Updated:

Child Higher Education: পড়াশোনার খরচ এখন যা, আজ থেকে ১০ বছর আগে তা প্রায় অর্ধেক ছিল।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
কলকাতা: দেশের যে কোনও সরকারি কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে মোটামুটি ৬-১২ লক্ষ টাকা খরচ। বেসরকারি কলেজ হলে সেটা ১৫ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকবে। আবার মেডিক্যাল স্ট্রিমে এমবিবিএস বা অন্যান্য উচ্চতর ডিগ্রির জন্য সর্বনিম্ন ২৫ লাখ টাকা খরচ তো হবেই। একটা টায়ার ২ কলেজ থেকে এমবিএ করতেও ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়।
advertisement

জিনিসপত্রের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। পাল্লা দিয়ে বাড়বে উচ্চশিক্ষার খরচও। কারণ সন্তান যখন উচ্চশিক্ষার বয়সে পৌঁছবে তখন মুদ্রাস্ফীতি শিক্ষার খরচ আরও বাড়িয়ে দেবে।

ভারতে মুদ্রাস্ফীতির হার বর্তমানে প্রায় ৭ শতাংশ। শিক্ষা খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। উল্লিখিত ডিগ্রিগুলোর খরচ এখন যা আছে, আজ থেকে ১০ বছর আগে তা প্রায় অর্ধেক ছিল। ফলে সহজেই অনুমান করা যায় আজ থেকে ১০ বা ১৫ বছর পর উচ্চশিক্ষার জন্য কত খরচ হতে পারে।

advertisement

আরও পড়ুন- টাকা খুচরো করা নিয়ে দূর হবে টেনশন! UPI ATM আনতে পারে RBI

একটা হিসেব করা যাক, ২০০৪ সালে আইআইএম কলকাতায় দুই বছরের এমবিএ কোর্সে পড়তে খরচ হত প্রায় ২.৫ লক্ষ টাকা। ২০২০ সালে তা বেড়ে প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছর এর ব্যয় বাড়ছে ১৫ শতাংশ হারে। এই হারে, ১৫ বছর পর, একই কোর্সের খরচ হবে ২.২ কোটি টাকা।

advertisement

অতএব, মা-বাবাকে সেই অনুযায়ী সঞ্চয় করতে হবে। সন্তানের শিক্ষার জন্য তাই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাবা-মা যদি এখন থেকে সঠিক পরিকল্পনা নেন তাহলে আর্থিক বিষয়ে কোনও রকম চিন্তা ছাড়াই সন্তানকে সর্বোত্তম শিক্ষা দিতে সক্ষম হবেন।

কোথায় বিনিয়োগ করতে হবে: সন্তানের শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা করার সময় বাবা-মাকে সন্তানের বর্তমান বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিনিয়োগ করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি কারও সদ্যোজাত সন্তান থাকে এবং তিনি এখন থেকেই বিনিয়োগ করতে চান তাহলে প্রস্তুতির জন্য তাঁর হাতে কমপক্ষে ১৬ থেকে ১৮ বছর সময় আছে।

advertisement

এতটা দীর্ঘ সময় থাকলে ইক্যুইটি ফান্ড, স্টক বা ইউনিট লিঙ্কড ইন্স্যুরেন্স প্ল্যানে (ইউলিপ) বিনিয়োগের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এই সমস্ত বিনিয়োগই ইক্যুইটি ভিত্তিক। তাই দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করলে উচ্চতর রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আরও পড়ুন- বাড়ি-ফ্ল্যাট-জমি কিনলে মিলবে সুবিধা? বাজেট ঘিরে বাড়ছে প্রত্যাশা

সুতরাং যদি কেউ আজ থেকে মাসে ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ শুরু করেন এবং এমন একটি ইক্যুইটি ফান্ড বেছে নেন যেটা গড়ে প্রায় ১৪ শতাংশ রিটার্ন দিচ্ছে তাহলে মেয়াদ শেষে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা রিটার্ন মিলতে পারে। যেখানে বিনিয়োগ হবে মাত্র ৯ লাখ।

advertisement

সন্তান নবজাতক হলে ইক্যুইটি ফান্ডে বিনিয়োগের এই ঝুকিটা নেওয়া যায়। কিন্তু সন্তানের ৯ বা ১০ বছর বয়সে বিনিয়োগ শুরু করলে তহবিল জমা করার জন্য হাতে মাত্র ৭ থেকে ৮ বছর সময় পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে অল্প সময়ের মধ্যে বড় মূলধন তৈরি করতে হবে কিন্তু তার পরেও বেশি ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।

তাহলে উপায়? এই পরিস্থিতিতে অভিভাবককে আরও বেশি পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ আগে ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে এখন ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ। এবং শুধু ইক্যুইটি নয়, ইক্যুইটি এবং ডেট উভয় উপকরণে বিনিয়োগ করে পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র আনতে হবে।

ব্যালেন্সড ফান্ডও বেছে নেওয়া যায়, যেখানে ডেট এবং ইক্যুইটি উভয়ই থাকবে। আর যদি সন্তানের বড় হওয়ার পর বিনিয়োগ শুরু করা হয় এবং উচ্চশিক্ষার জন্য হাতে মাত্র ২ থেকে ৩ বছর সময় থাকে তাহলে ডেট ফান্ড, ফিক্সড ডিপোজিট, রেকারিং ডিপোজিট, ট্রেজারি বন্ড এবং অন্যান্য ঋণ উপকরণে মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হবে যাতে ২-৩ বছরের মধ্যেই প্রয়োজনীয় টাকা উঠে আসে।

এখন ১৫ বছরে যদি কেউ ২.২ কোটি টাকা রিটার্ন পেতে চান তাহলে কোথায় বিনিয়োগ করা উচিত? বর্তমান হারে ১৫ বছরের জন্য পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে বার্ষিক ১.৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করলে মেয়াদ শেষে ৪০.৬৮ লক্ষ পাওয়া যাবে।

২১ বছরের জন্য সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনায় বার্ষিক ১.৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগে মেয়াদ শেষে হাতে পাওয়া যাবে ৬৩.৬৫ লক্ষ টাকা। ২.২ কোটি টাকা পেতে একজনকে প্রতি মাসে স্থায়ী বা রেকারিং আমানতের মতো স্কিমে মাসে ৮০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে যা ৫.৫ শতাংশ হারে রিটার্ন দেয়। না হলে ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে মাসিক ৪৫ হাজার টাকার এসআইপি করা যায়। যা গড়ে ১২ শতাংশ রিটার্ন দেয়। অথবা ২৫ হাজার টাকার মাসিক এসআইপি করতে হবে এবং প্রতি বছর ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে।

অতএব এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার চেয়ে ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ড বা এসআইপি শতগুণে ভাল। স্থায়ী রিটার্ন স্কিমগুলোর তুলনায় রিটার্নও অনেক বেশি। তাই সঞ্চয় এবং ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে এক বা একাধিক স্কিমও বেছে নেওয়া যায়। এতে দ্রুত লক্ষ্য অর্জন করা যায়।

কত তাড়াতাড়ি সন্তানের শিক্ষার জন্য পরিকল্পনা শুরু করা উচিত: উপরের উদাহরণগুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে অভিভাবক যত তাড়াতাড়ি শুরু করবেন তত কম বিনিয়োগ করে বেশি টাকা জমাতে পারবেন। পড়ে শুরু করলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, এর ফলে আয়ে টান পড়বে।

সুতরাং একথা বলাই যায়, সন্তানের শিক্ষার জন্য বিনিয়োগ শুরু করার কোনও নির্দিষ্ট সময় বা বয়স নেই। অভিভাবক যত আগে শুরু করবেন, সন্তানের জন্য ততই ভাল।

মা-বাবার কতটা বিনিয়োগ করা উচিত সেটা নির্ভর করবে কত বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্য কত টাকা জমাতে চাইছেন তার উপর। শুধু মাথায় রাখতে হবে, অভিভাবক যত আগে শুরু করবেন, তত কম পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হবে।

পরিকল্পনা কীভাবে করতে হয়: সবার প্রথমে হাতে কতটা সময় আছে তা দেখতে হবে। দ্বিতীয় কাজ হল, প্রতি মাসে কত টাকা বিনিয়োগ করলে কোনও অসুবিধা হবে না সেটা খুঁজে বের করা। অভিভাবক যদি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে ১০ বছরে এবং দীর্ঘমেয়াদে কত রিটার্ন দিচ্ছে সেটা চেক করতে হবে।

ডেট ফান্ডে বিনিয়োগ করতে চাইলে সেগুলোর রেটিং এবং রিটার্ন দেখে নিতে হবে। কেউ যদি সন্তানের শিক্ষার জন্য ডিজাইন করা বিমা পলিসিতে বিনিয়োগ করেন, তাহলে নিশ্চিত পরিমাণ এবং সেই সঙ্গে শর্তাবলী ভাল করে চেক করে নেওয়া উচিত। আর যদি স্টকে বিনিয়োগ করতে চান তাহলে মৌলিক বিষয়গুলি অবশ্যই বিশ্লেষণ করতে হবে।

কোথায় বিনিয়োগ করবেন সেটা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গেলে এবার সিদ্ধান্ত নিতে হবে সেখানে একলপ্তে বিনিয়োগ করা হবে না কি পর্যায়ক্রমে। অর্থাৎ মাসিক কিস্তিতে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাসে মাসে বিনিয়োগ করতে চাইলে এসআইপি-র থেকে ভাল কিছু হয় না। এরপর আসে বিনিয়োগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশ, অনেক অভিভাবকই এটাকে অতটা গুরুত্ব দেন না। বিনিয়োগ করার পর বা এসআইপি সেট আপ করার পর মা-বাবার কাজ শেষ হয় না।

বিনিয়োগ প্রত্যাশা অনুযায়ী রিটার্ন জেনারেট করছে কি না, তা দেখার জন্য সময়ে সময়ে বিনিয়োগ পর্যালোচনা এবং নিরীক্ষণ করতে হয়। যদি বিনিয়োগগুলি ট্র্যাকে থাকে তাহলে পরিবর্তনের দরকার নেই। কিন্তু যদি প্রত্যাশা পূরণ না করে তবে সংশোধন করতে হতে পারে।

যদি রিটার্নের হার খুব কম হয়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদী সর্বাধিক রিটার্নের জন্য বিনিয়োগে ঝুঁকি নিতে হতে পারে। যদি পরিকল্পনা প্রত্যাশিতর থেকে ভাল কাজ করে, উপযুক্ত সময়ে যথাযথ মুনাফা বুক করতে পারে তাহলে এর থেকে ভাল আর কিছু হয় না। আসল কথা হল বিনিয়োগে ভারসাম্য বজায় রাখা।

সন্তানের শিক্ষা ভারতের প্রতিটা পরিবারের প্রধান খরচ। মূল্যবৃদ্ধি এবং শিক্ষা খাতে ব্যবসায়ীদের প্রবেশের কারণে এটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। তাই সন্তানের শিক্ষার জন্য আগাম পরিকল্পনা করা আবশ্যক। আর্থিক ভুল এড়াতে সময়ে সময়ে একজন নিবন্ধিত বিনিয়োগ উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া যায়।

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
পুরীর রথ এবার রঘুনাথপুরে, থিমে মন কাড়ছে আপার বেনিয়াসোলের দুর্গাপুজো মণ্ডপ
আরও দেখুন

এতে সবরকম ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তবে যেটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে সেটা হল, যত তাড়াতাড়ি বিনিয়োগ শুরু করা যায় ততই ভাল।

বাংলা খবর/ খবর/ব্যবসা-বাণিজ্য/
সন্তানের উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা করছেন? এই বিষয়গুলো মেনে চললে টাকার অভাব হবে না
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল