নাগপঞ্চমী তিথি
এই ব্রত উদযাপনে পঞ্চমী তিথি সর্বাধিক প্রসিদ্ধ হলেও পূজাপর্ব শুরু হয়ে যায় চতুর্থী তিথি থেকেই, বলা হয় যে শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতে নাগদেবতাকে নৈবেদ্য অর্পণ করলে সন্তানের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল হয়। অন্য দিকে, পঞ্চমী তিথি থেকে যে ব্রত উদযাপন শুরু হয়, তার রেশ চলে ষষ্ঠী তিথি পর্যন্ত। চলতি বছরে নাগপঞ্চমী উদযাপিত হবে ১৩ অগাস্ট তারিখে। এই তারিখে পঞ্জিকা মতে সূর্যোদয় হবে সকাল ৬টা ০৬ মিনিটে, সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৬টা ৫৭ মিনিটে। অবশ্য পঞ্চমী তিথি শুরু হয়ে যাচ্ছে ১২ অগাস্ট দুপুর ৩টে ২৫ মিনিট থেকে, শেষ হবে ১৩ অগাস্ট দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে।
advertisement
নাগপঞ্চমীর উৎপত্তি
মহাভারতে আছে, অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা পরীক্ষিৎ একদা মৃগয়ায় গিয়ে ক্ষুধাতৃষ্ণায় কাতর হয়ে শমীক নামে এক ঋষির আশ্রমে গিয়ে জল প্রার্থনা করেন। শমীক সেই সময়ে মৌনব্রত ধারণ করেছিলেন, তাই তিনি রাজার কথার উত্তর দেননি। সেটা বুঝতে না পেরে পরীক্ষিৎ এক মরা সাপ ঋষির গলায় জড়িয়ে দিয়ে আসেন। পিতার এই অপমানের কথা জানতে পেরে ঋষি শৃঙ্গী অভিশাপ দেন যে তক্ষকনাগের দংশনে রাজার মৃত্যু হবে। পরীক্ষিতের দেহাবসানের পরে তাঁর পুত্র জনমেজয় ক্রুদ্ধ হয়ে সর্পজাতির ধ্বংসসাধনে এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করেন। জরৎকারু-পুত্র আস্তিকের মধ্যস্থতায় জনমেজয় সেই সর্পযজ্ঞে বিরতি দেন, সেই থেকে নাগজাতির প্রতি সম্মান এবং তাদের বংশবৃদ্ধির প্রতি লক্ষ্য রেখে নাগপঞ্চমী উদযাপনের রীতি প্রচলিত হয়েছে।
নাগপঞ্চমী উদযাপন বিধি
এই পুণ্য তিথিতে গোময়দ্বারা একটি সাপের প্রতিরূপ তৈরি করে তাকে ঘরের চৌকাঠে রাখতে হয়। অর্পণ করতে হয় কুশঘাস, আতপচাল, ফুল, হলুদ, কুমকুম, দুধ। পরের দিন ষষ্ঠী তিথিতে সেই প্রতিরূপকে দুধ দিয়ে স্নান করাতে হয়, অনিচ্ছাকৃত অপরাধের মার্জনার জন্য তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হয়। ভোগ হিসাবে দিতে হয় পায়েস এবং মিষ্টান্ন।
যাঁরা এই ভাবে ব্রত উদযাপনে অসমর্থ, তাঁরা নিকটস্থ শিবমন্দিরেও পূজা দিতে পারেন। নাগ দেবাদিদেবের আভূষণ, তাই তাঁর আরাধনাতেও সুফল মেলে। পূজার নৈবেদ্য রূপে অর্পণ করতে হয় দুধ, ফল এবং মিষ্টান্ন। এছাড়া নাগমিথুনের মূর্তি মন্দিরে উপহার দিলে সংসারে ধনবৃদ্ধি হয় বলে লোকবিশ্বাস, পাশাপাশি কেটে যায় কালসর্পদোষ!
নাগপঞ্চমীর অবশ্য পালনীয় নিয়ম
১. এই দিন নির্জলা উপবাসে থাকা বাঞ্ছনীয়, বলা হয় তা বিষের প্রভাব হ্রাস করে, দুঃস্বপ্নের হাত থেকে মুক্তি দেয়।
২. শিবমন্দিরে পূজাদান অবশ্য কর্তব্য।
৩. ওম নবকুলায় বিদ্মহে বিষদন্তায় ধীমহি তন্নো সর্প প্রচোদয়াৎ- এই নাগমন্ত্র জপ করতে হবে।
নাগপঞ্চমীতে যা করা চলবে না
১. নাগজাতির বংশবৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে এই দিন হলকর্ষণ, গাছের ডাল কাটা বা এমন কোনও কাজ করা চলবে না যাতে সাপের আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকে।
২. এই দিন সেলাইয়ের কাজ করা ঐতিহ্য অনুসারে বারণ।
৩. এই তিথিতে লোহার পাত্রে রান্না করা অশুভ বলে বিবেচিত হয়।